কাগমারি সম্মেলন: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য

(Added Ennglish article link)
 
(Text replacement - "সোহ্রাওয়ার্দী" to "সোহ্‌রাওয়ার্দী")
 
১ নং লাইন: ১ নং লাইন:
[[Category:বাংলাপিডিয়া]]
[[Category:বাংলাপিডিয়া]]
'''কাগমারি সম্মেলন'''  টাঙ্গাইল জেলার কাগমারিতে ১৯৫৭ সালের ৬-১০ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত আওয়ামী লীগের কাউন্সিল অধিবেশন ও সাংস্কৃতিক সম্মেলন। ৭ ফেব্রুয়ারি কাউন্সিল অধিবেশনে মূল আলোচ্যসূচি ছিল পূর্ব পাকিস্তানের জন্য পূর্ণ স্বায়ত্তশাসন এবং জোটনিরপেক্ষ পররাষ্ট্রনীতি। কিন্তু সিয়াটো ও সেন্টোর সামরিক চুক্তির প্রতি  [[আওয়ামী লীগ|আওয়ামী লীগ]] নেতা ও পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী  [[সোহ্রাওয়ার্দী, হোসেন শহীদ|হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী]] দৃঢ় সমর্থন ব্যক্ত করলে সম্মেলনে মতবিরোধের সৃষ্টি হয়। ১৯৫৪ সালে  [[যুক্তফ্রণ্ট|যুক্তফ্রণ্ট]] নির্বাচনী ম্যানিফেস্টোর একুশ দফা প্রতিশ্রুতির অন্যতম ছিল জোটনিরপেক্ষ ও স্বাধীন পররাষ্ট্রনীতি। সোহরাওয়ার্দীর পররাষ্ট্রনীতি বিষয়ক বক্তব্য আওয়ামী লীগের বামপন্থি নেতৃবৃন্দ সমর্থন করেন নি। এঁদের পুরোধা ছিলেন আওয়ামী লীগ সভাপতি (সম্মেলনেরও সভাপতি) মওলানা  [[ভাসানী, মওলানা আবদুল হামিদ খান|আবদুল হামিদ খান ভাসানী]]। আওয়ামী লীগের আইনসভার সদস্য ও নেতৃবৃন্দের উপস্থিতিতে কাউন্সিল অধিবেশনে মওলানা ভাসানী সোহরাওয়ার্দীর অনুসৃত সামরিক জোটের সমালোচনা করেন। ওই ভাষণে মওলানা প্রাদেশিক স্বায়ত্তশাসনের দাবি তোলেন। সোহরাওয়ার্দী সামরিক জোটের পক্ষে যুক্তি প্রদর্শন করেন। তিনি পাকিস্তান স্বাক্ষরিত সামরিক চুক্তি এবং কেন্দ্র কর্তৃক পূর্ব পাকিস্তানে আরোপিত অর্থনৈতিক নীতিমালার পক্ষেও রায় দেন।
'''কাগমারি সম্মেলন'''  টাঙ্গাইল জেলার কাগমারিতে ১৯৫৭ সালের ৬-১০ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত আওয়ামী লীগের কাউন্সিল অধিবেশন ও সাংস্কৃতিক সম্মেলন। ৭ ফেব্রুয়ারি কাউন্সিল অধিবেশনে মূল আলোচ্যসূচি ছিল পূর্ব পাকিস্তানের জন্য পূর্ণ স্বায়ত্তশাসন এবং জোটনিরপেক্ষ পররাষ্ট্রনীতি। কিন্তু সিয়াটো ও সেন্টোর সামরিক চুক্তির প্রতি  [[আওয়ামী লীগ|আওয়ামী লীগ]] নেতা ও পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী  [[সোহ্‌রাওয়ার্দী, হোসেন শহীদ|হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী]] দৃঢ় সমর্থন ব্যক্ত করলে সম্মেলনে মতবিরোধের সৃষ্টি হয়। ১৯৫৪ সালে  [[যুক্তফ্রণ্ট|যুক্তফ্রণ্ট]] নির্বাচনী ম্যানিফেস্টোর একুশ দফা প্রতিশ্রুতির অন্যতম ছিল জোটনিরপেক্ষ ও স্বাধীন পররাষ্ট্রনীতি। সোহরাওয়ার্দীর পররাষ্ট্রনীতি বিষয়ক বক্তব্য আওয়ামী লীগের বামপন্থি নেতৃবৃন্দ সমর্থন করেন নি। এঁদের পুরোধা ছিলেন আওয়ামী লীগ সভাপতি (সম্মেলনেরও সভাপতি) মওলানা  [[ভাসানী, মওলানা আবদুল হামিদ খান|আবদুল হামিদ খান ভাসানী]]। আওয়ামী লীগের আইনসভার সদস্য ও নেতৃবৃন্দের উপস্থিতিতে কাউন্সিল অধিবেশনে মওলানা ভাসানী সোহরাওয়ার্দীর অনুসৃত সামরিক জোটের সমালোচনা করেন। ওই ভাষণে মওলানা প্রাদেশিক স্বায়ত্তশাসনের দাবি তোলেন। সোহরাওয়ার্দী সামরিক জোটের পক্ষে যুক্তি প্রদর্শন করেন। তিনি পাকিস্তান স্বাক্ষরিত সামরিক চুক্তি এবং কেন্দ্র কর্তৃক পূর্ব পাকিস্তানে আরোপিত অর্থনৈতিক নীতিমালার পক্ষেও রায় দেন।


এ ছাড়াও একটি সাংগঠনিক প্রশ্নে দ্বিমত দেখা দেয়। ১৯৫৫ সালে গৃহীত আওয়ামী লীগের গঠনতন্ত্রের ৬৬ নং ধারায় দলের সাধারণ সম্পাদক পদে অধিষ্ঠিত থেকে মন্ত্রীত্ব গ্রহণ করা যাবে না বলে বিধান থাকা সত্ত্বেও  [[রহমান, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর|শেখ মুজিবুর রহমান]] এ নিয়ম উপেক্ষা করে মন্ত্রীত্ব গ্রহণ করেন। আওয়ামী লীগ সরকার দলীয় নেতৃত্ব মেনে চলবে কি না, এ প্রশ্নে দলের অভ্যন্তরে ডান-বাম বিরোধ চূড়ান্ত রূপ ধারণ করে। শেখ মুজিবুর রহমানসহ দলের ডানপন্থি সদস্যগণ সোহরাওয়ার্দীর নেতৃত্ব ও নীতি সমর্থন করেন এবং বামপন্থি সদস্যগণ সমর্থন জানান মওলানা ভাসানীকে। এখানেই আওয়ামী লীগ আদর্শিক কারণে বিভক্ত হয়ে পড়ে। পরবর্তী সময়ে মওলানা ভাসানী আওয়ামী লীগ থেকে বেরিয়ে এসে  [[ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি|ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি]] নামে একটি নতুন রাজনৈতিক দল গঠন করেন।  [বিলকিস রহমান]
এ ছাড়াও একটি সাংগঠনিক প্রশ্নে দ্বিমত দেখা দেয়। ১৯৫৫ সালে গৃহীত আওয়ামী লীগের গঠনতন্ত্রের ৬৬ নং ধারায় দলের সাধারণ সম্পাদক পদে অধিষ্ঠিত থেকে মন্ত্রীত্ব গ্রহণ করা যাবে না বলে বিধান থাকা সত্ত্বেও  [[রহমান, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর|শেখ মুজিবুর রহমান]] এ নিয়ম উপেক্ষা করে মন্ত্রীত্ব গ্রহণ করেন। আওয়ামী লীগ সরকার দলীয় নেতৃত্ব মেনে চলবে কি না, এ প্রশ্নে দলের অভ্যন্তরে ডান-বাম বিরোধ চূড়ান্ত রূপ ধারণ করে। শেখ মুজিবুর রহমানসহ দলের ডানপন্থি সদস্যগণ সোহরাওয়ার্দীর নেতৃত্ব ও নীতি সমর্থন করেন এবং বামপন্থি সদস্যগণ সমর্থন জানান মওলানা ভাসানীকে। এখানেই আওয়ামী লীগ আদর্শিক কারণে বিভক্ত হয়ে পড়ে। পরবর্তী সময়ে মওলানা ভাসানী আওয়ামী লীগ থেকে বেরিয়ে এসে  [[ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি|ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি]] নামে একটি নতুন রাজনৈতিক দল গঠন করেন।  [বিলকিস রহমান]


[[en:Kagmari Conference]]
[[en:Kagmari Conference]]

১৬:০৮, ১৭ এপ্রিল ২০১৫ তারিখে সম্পাদিত সর্বশেষ সংস্করণ

কাগমারি সম্মেলন  টাঙ্গাইল জেলার কাগমারিতে ১৯৫৭ সালের ৬-১০ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত আওয়ামী লীগের কাউন্সিল অধিবেশন ও সাংস্কৃতিক সম্মেলন। ৭ ফেব্রুয়ারি কাউন্সিল অধিবেশনে মূল আলোচ্যসূচি ছিল পূর্ব পাকিস্তানের জন্য পূর্ণ স্বায়ত্তশাসন এবং জোটনিরপেক্ষ পররাষ্ট্রনীতি। কিন্তু সিয়াটো ও সেন্টোর সামরিক চুক্তির প্রতি  আওয়ামী লীগ নেতা ও পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী  হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী দৃঢ় সমর্থন ব্যক্ত করলে সম্মেলনে মতবিরোধের সৃষ্টি হয়। ১৯৫৪ সালে  যুক্তফ্রণ্ট নির্বাচনী ম্যানিফেস্টোর একুশ দফা প্রতিশ্রুতির অন্যতম ছিল জোটনিরপেক্ষ ও স্বাধীন পররাষ্ট্রনীতি। সোহরাওয়ার্দীর পররাষ্ট্রনীতি বিষয়ক বক্তব্য আওয়ামী লীগের বামপন্থি নেতৃবৃন্দ সমর্থন করেন নি। এঁদের পুরোধা ছিলেন আওয়ামী লীগ সভাপতি (সম্মেলনেরও সভাপতি) মওলানা  আবদুল হামিদ খান ভাসানী। আওয়ামী লীগের আইনসভার সদস্য ও নেতৃবৃন্দের উপস্থিতিতে কাউন্সিল অধিবেশনে মওলানা ভাসানী সোহরাওয়ার্দীর অনুসৃত সামরিক জোটের সমালোচনা করেন। ওই ভাষণে মওলানা প্রাদেশিক স্বায়ত্তশাসনের দাবি তোলেন। সোহরাওয়ার্দী সামরিক জোটের পক্ষে যুক্তি প্রদর্শন করেন। তিনি পাকিস্তান স্বাক্ষরিত সামরিক চুক্তি এবং কেন্দ্র কর্তৃক পূর্ব পাকিস্তানে আরোপিত অর্থনৈতিক নীতিমালার পক্ষেও রায় দেন।

এ ছাড়াও একটি সাংগঠনিক প্রশ্নে দ্বিমত দেখা দেয়। ১৯৫৫ সালে গৃহীত আওয়ামী লীগের গঠনতন্ত্রের ৬৬ নং ধারায় দলের সাধারণ সম্পাদক পদে অধিষ্ঠিত থেকে মন্ত্রীত্ব গ্রহণ করা যাবে না বলে বিধান থাকা সত্ত্বেও  শেখ মুজিবুর রহমান এ নিয়ম উপেক্ষা করে মন্ত্রীত্ব গ্রহণ করেন। আওয়ামী লীগ সরকার দলীয় নেতৃত্ব মেনে চলবে কি না, এ প্রশ্নে দলের অভ্যন্তরে ডান-বাম বিরোধ চূড়ান্ত রূপ ধারণ করে। শেখ মুজিবুর রহমানসহ দলের ডানপন্থি সদস্যগণ সোহরাওয়ার্দীর নেতৃত্ব ও নীতি সমর্থন করেন এবং বামপন্থি সদস্যগণ সমর্থন জানান মওলানা ভাসানীকে। এখানেই আওয়ামী লীগ আদর্শিক কারণে বিভক্ত হয়ে পড়ে। পরবর্তী সময়ে মওলানা ভাসানী আওয়ামী লীগ থেকে বেরিয়ে এসে  ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি নামে একটি নতুন রাজনৈতিক দল গঠন করেন।  [বিলকিস রহমান]