কর্পূর

কর্পূর (Camphor) মোমের মতো দেখতে দাহ্য এবং স্বচ্ছ একটি কঠিন পদার্থ যার কড়া সুগন্ধ রয়েছে। এটির রাসায়নিক সংকেত হচ্ছে C10H16O এবং গাঠনিকভাবে এটি একটি টারপিনয়েড যৌগ। আমাদের ব্যবহৃত নানা উদ্বায়ী তেলে (essential oils) কর্পূর তার দুটো এনানসিওমার গঠনে পাওয়া যায়। তবে সবচেয়ে বেশি পরিমাণে পাওয়া যায় কর্পূর কাঠ (Cinnamomum camphora. L. Sieb) এবং এর সাথে সম্পর্কযুক্ত কিছু উদ্ভিদ থেকে, যাদের মধ্যে অন্যতম হচ্ছে Ocotea usambarensis Eng.। তাছাড়া এটি ল্যাভেন্ডার, ভুঁই-তুলসি (sage) এবং রোসমেরির সুগন্ধের পেছনেও অবদান রাখে। এশিয়া মহাদেশে যে কর্পূর পাওয়া যায় তার অন্যতম উৎস হচ্ছে Ocimum kilimandscharicum Baker ex Gurke। তবে এই কর্পূর তারপিন তেল থেকে কৃত্রিমভাবেও তৈরি করা হয়ে থাকে। কর্পূর তেলের প্রায় পুরোটাই উৎপন্ন করা হয় কর্পূর কাঠের বাষ্পপাতনের মাধ্যমে। নির্ধারিত গাছ থেকে কাঠের কুচি (chip) নিয়ে আগুনে রোস্ট করা হয়। তা থেকে উৎপন্ন বাষ্প গুঁড়া করা কাঠের মধ্য দিয়ে চালিয়ে তা ঘনীভুত করার মাধ্যমে তৈরি করা হয় কর্পূর তেল। উল্লেখ্য যে, কর্পূর উৎপাদনের জন্য গাছের বয়স কমপক্ষে ৫০ বছর হতে হবে। কর্পূর বহু প্রাচীন থেকেই মানুষের কাছে পরিচিত। এটির উল্লেখ পবিত্র কোরআন শরীফসহ নানা আরবীয় লেখায়, বিভিন্ন পুঁথি এবং সংস্কৃতিতে সেই ৬ষ্ঠ শতাব্দী থেকে পাওয়া যাচ্ছে। মনে করা হয়, কর্পূর পোকা-মাকড়ের জন্য বিষাক্ত এবং এর ধোঁয়া লাল অগ্নি পিঁপড়ার (red fire ants) বিরুদ্ধে বেশ কার্যকর। তাছাড়া, এটি প্রায়শই মশা প্রতিরোধক হিসেবেও ব্যবহার করা হয়ে থাকে। চিকিৎসা শাস্ত্রে জীবাণুনাশক, ব্যথানাশক, চুলকানিরোধক এবং চামড়া লাল করার কাজে (রক্ত সঞ্চালনের মাধ্যমে) কর্পূর ব্যবহৃত হওয়ার বহু প্রাচীন ইতিহাস রয়েছে। এভাবে ত্বকের মধ্যে ব্যবহার হওয়ার পেছনে বেশ কিছু কারণ খুঁজে পাওয়া যায়। যেমন- এটি দেহের কোনো জায়গায় প্রয়োগ করলে সেই স্থানে মৃদু চেতনানাশক অবস্থা তৈরি করে। তাছাড়া এটির ব্যবহারে নির্দিষ্ট স্থানে উষ্ণতার অনুভব হয় এবং সাথে এটি বৈশিষ্ট্যমূলক ঘ্রাণ তৈরি করে, যার কারণে বেশিরভাগ মানুষই এটিকে শক্তিশালী এবং কার্যকর ওষুধ হিসেবে মনে করে। [মোহাম্মদ জসিম উদ্দিন]