কবীর, মফিজুল্লাহ: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য

সম্পাদনা সারাংশ নেই
সম্পাদনা সারাংশ নেই
 
১ নং লাইন: ১ নং লাইন:
[[Category:বাংলাপিডিয়া]]
[[Category:বাংলাপিডিয়া]]
[[Image:KabirMafizullah.jpg|thumb|400px|right|মফিজুল্লাহ কবীর]]
[[Image:KabirMafizullah.jpg|thumb|600px|right|মফিজুল্লাহ কবীর]]
'''কবীর, মফিজুল্লাহ''' (১৯২৫-১৯৮৬)  ঐতিহাসিক। তিনি ১৯২৫ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি নোয়াখালী জেলায় জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর ছাত্রজীবন ছিল বিশেষ কৃতিত্বপূর্ণ। তিনি যথাক্রমে ১৯৪১ এবং ১৯৪৩ সালে হাই মাদ্রাসা ও ইন্টারমিডিয়েট পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। [[ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়|ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়]] থেকে ১৯৪৬ এবং ১৯৪৭ সালে তিনি যথাক্রমে বি.এ সম্মান ও এম.এ ডিগ্রি লাভ করেন। লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘স্কুল অব ওরিয়েন্টাল অ্যান্ড আফ্রিকান স্টাডিজ’ থেকে ১৯৫৩ সালে তিনি পিএইচ.ডি ডিগ্রি প্রাপ্ত হন। আরবি ও ফারসি ভাষায় তিনি পারদর্শী ছিলেন এবং পরবর্তী জীবনে তিনি জার্মান ভাষায়ও ব্যুৎপত্তি অর্জন করেন।
'''কবীর, মফিজুল্লাহ''' (১৯২৫-১৯৮৬)  ঐতিহাসিক। তিনি ১৯২৫ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি নোয়াখালী জেলায় জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর ছাত্রজীবন ছিল বিশেষ কৃতিত্বপূর্ণ। তিনি যথাক্রমে ১৯৪১ এবং ১৯৪৩ সালে হাই মাদ্রাসা ও ইন্টারমিডিয়েট পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। [[ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়|ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়]] থেকে ১৯৪৬ এবং ১৯৪৭ সালে তিনি যথাক্রমে বি.এ সম্মান ও এম.এ ডিগ্রি লাভ করেন। লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘স্কুল অব ওরিয়েন্টাল অ্যান্ড আফ্রিকান স্টাডিজ’ থেকে ১৯৫৩ সালে তিনি পিএইচ.ডি ডিগ্রি প্রাপ্ত হন। আরবি ও ফারসি ভাষায় তিনি পারদর্শী ছিলেন এবং পরবর্তী জীবনে তিনি জার্মান ভাষায়ও ব্যুৎপত্তি অর্জন করেন।



০৫:৩৮, ২৭ জুলাই ২০১৪ তারিখে সম্পাদিত সর্বশেষ সংস্করণ

মফিজুল্লাহ কবীর

কবীর, মফিজুল্লাহ (১৯২৫-১৯৮৬)  ঐতিহাসিক। তিনি ১৯২৫ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি নোয়াখালী জেলায় জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর ছাত্রজীবন ছিল বিশেষ কৃতিত্বপূর্ণ। তিনি যথাক্রমে ১৯৪১ এবং ১৯৪৩ সালে হাই মাদ্রাসা ও ইন্টারমিডিয়েট পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৪৬ এবং ১৯৪৭ সালে তিনি যথাক্রমে বি.এ সম্মান ও এম.এ ডিগ্রি লাভ করেন। লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘স্কুল অব ওরিয়েন্টাল অ্যান্ড আফ্রিকান স্টাডিজ’ থেকে ১৯৫৩ সালে তিনি পিএইচ.ডি ডিগ্রি প্রাপ্ত হন। আরবি ও ফারসি ভাষায় তিনি পারদর্শী ছিলেন এবং পরবর্তী জীবনে তিনি জার্মান ভাষায়ও ব্যুৎপত্তি অর্জন করেন।

অধ্যাপক কবীর ১৯৫০ সালে প্রভাষক হিসেবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগে কর্মজীবন শুরু করেন এবং ১৯৮৬ সালের ৮ আগস্ট মৃত্যু পর্যন্ত তিনি এই বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত ছিলেন। অধ্যাপনা ছাড়াও তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম প্রো-ভাইসচ্যান্সেলরের পদসহ বিভিন্ন দায়িত্বপূর্ণ প্রশাসনিক পদে অধিষ্ঠিত ছিলেন। তিনি পাকিস্তান এশিয়াটিক সোসাইটির (পরে বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি) সাধারণ সম্পাদক, কোষাধ্যক্ষ এবং সহ-সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি  বাংলাদেশ ইতিহাস সমিতির সভাপতি ছিলেন। অল্প কিছু দিনের জন্য তিনি  ঢাকা জাদুঘরএর অবৈতনিক তত্ত্বাবধায়কের দায়িত্বও পালন করেন।

অধ্যাপক কবীর সাড়ে তিন যুগ ধরে জ্ঞানানুশীলনে নিয়োজিত ছিলেন এবং গবেষণামূলক গ্রন্থ, প্রবন্ধ, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ্যপুস্তক রচনা করেন। তাঁর মাদ্রাসা ভিত্তিক শিক্ষা ও আরবি-ফারসি ভাষায় জ্ঞান তাঁকে গবেষণার বিষয় হিসেবে ইসলাম ও মুসলিম সংক্রান্ত বিষয়াবলি নির্বাচনে উৎসাহিত করে। বাগদাদের বুয়ায়িদ বংশের (৯৪৬-১০৬২ সাল) উপর তিনি তাঁর পি-এইচ.ডি অভিসন্দর্ভ প্রণয়ন করেন। কলকাতার ইরান সোসাইটি কর্তৃক ১৯৬৪ সালে এটি প্রকাশিত হয়।

অধ্যাপক কবীর অনেক মূল্যবান পাঠ্যপুস্তক রচনা করেন। সেগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো মুসলিম রুল আন্ডার দি সুলতানস (পাকিস্তান সরকারের পৃষ্ঠপোষকতায় লিখিত এ সর্ট হিস্ট্রি অব ইন্দো-পাকিস্তান নামে ধারাবাহিক খন্ডগুলির একটি, ১৯৬৭); আউটলাইন অব ইসলামিক হিস্ট্রি (১৯৬৩); ইসলাম ও খেলাফত (১৯৭৪) এবং মুসলিম সভ্যতার স্বর্ণযুগ (১৯৮৭)। উল্লিখিত সর্বশেষ গ্রন্থে ইসলামি সভ্যতার অনুধাবন ও মূল্যায়নে তাঁর মৌলিকত্বের স্বাক্ষর মেলে। শেখ রিয়াজউদ্দিন আহমেদ অনূদিত সৈয়দ আমীর আলীর এ সর্ট হিস্ট্রি অব দি সেরাসেনস গ্রন্থটি তিনি সম্পাদনা করেন।

দেশি ও বিদেশি জার্নালে প্রকাশিত অধ্যাপক কবীরের প্রবন্ধগুলির বিষয়বস্ত্ত ছিল বহুবিধ ও ব্যাপক। শ্রেণিকক্ষে পড়ানোর সুবাদে তিনি পশ্চিম এশিয়া ও আন্তর্জাতিক আইন বিষয়ে গভীর লেখা-পড়ায় ব্রতী হন। তাঁর গবেষণামূলক প্রবন্ধের সিংহভাগই মধ্যপ্রাচ্য ও আন্তর্জাতিক বিষয়াবলি নিয়ে আলোচনা ও পর্যালোচনায় সমৃদ্ধ।

১৯৬৯ সালের গণ-অভ্যুত্থান এবং ১৯৭১ সালে পূর্বপাকিস্তানের নিরস্ত্র অসহায় জনগণের উপর পাকসেনাদের নজিরবিহীন নৃশংসতা ও গণহত্যা অধ্যাপক কবীরের দৃষ্টিভঙ্গিতে দারুণ পরিবর্তন ঘটায়। তাঁর তাৎপর্যপূর্ণ গ্রন্থ এক্সপেরিয়েন্স অব এন এক্সাইল অ্যাট হোম: লাইফ ইন অকুপাইড বাংলাদেশ ১৯৭২ সালের ডিসেম্বর মাসে প্রকাশিত হয়। পাকিস্তান আমলের শেষ দিনগুলিতে ঢাকার জনজীবনে যে দুর্বিষহ যন্ত্রণা নেমে এসেছিল, তার সুস্পষ্ট প্রতিফলন এই গ্রন্থে পাওয়া যায় এবং এই সময়কার ইতিহাসের উপর এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ উৎস।  [এম দেলওয়ার হোসেন]