ওডারল্যান্ড, উইলিয়ম এ.এস: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য

(Added Ennglish article link)
 
(Text replacement - "\[মুয়ায্যম হুসায়ন খান\]" to "[মুয়ায্‌যম হুসায়ন খান]")
 
(একজন ব্যবহারকারী দ্বারা সম্পাদিত একটি মধ্যবর্তী সংশোধন দেখানো হচ্ছে না)
১ নং লাইন: ১ নং লাইন:
[[Category:বাংলাপিডিয়া]]
[[Category:বাংলাপিডিয়া]]
[[Image:OuderlandWilliamAS.jpg|thumb|right|উইলিয়ম এ.এস ওডারল্যান্ড]]
'''ওডারল্যান্ড, উইলিয়ম এ.এস''' (১৯১৭-২০০১)  অস্ট্রেলিয়ার ওলন্দাজ নাগরিক উইলিয়ম ওডারল্যান্ডই একমাত্র বিদেশি যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে বীরত্বপূর্ণ অবদানের জন্য সরকার কর্তৃক ‘বীর প্রতীক’ রাষ্ট্রীয় খেতাবে ভূষিত হন।
'''ওডারল্যান্ড, উইলিয়ম এ.এস''' (১৯১৭-২০০১)  অস্ট্রেলিয়ার ওলন্দাজ নাগরিক উইলিয়ম ওডারল্যান্ডই একমাত্র বিদেশি যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে বীরত্বপূর্ণ অবদানের জন্য সরকার কর্তৃক ‘বীর প্রতীক’ রাষ্ট্রীয় খেতাবে ভূষিত হন।


৫ নং লাইন: ৬ নং লাইন:


ঢাকায় বাটা সু কোম্পানির প্রোডাকশন ম্যানেজার হিসেবে ওডারল্যান্ড ১৯৭০ সালের শেষের দিকে প্রথম  ঢাকায় আসেন। কয়েক মাসের মধেই তিনি কোম্পানি-ম্যানেজার পদে পদোন্নতি লাভ করেন। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হওয়ার পরপরই কোম্পানি-ম্যানেজার ওডারল্যান্ড যেন নিজের মধ্যে আবিষ্কার করেন নতুন এক যুদ্ধের মুখোমুখি প্রাক্তন-সৈনিক ওডারল্যান্ডকে। প্রথমদিকে তিনি দখলদার পাকবাহিনীর পরিকল্পনা ও কার্যক্রমের গোপন তথ্য সংগ্রহ করে আগেভাগেই মুক্তিযোদ্ধাদের তা জানিয়ে দিতেন। একজন বিদেশি হিসেবে পাকবাহিনীর নিকট তাঁর নিঃসংশয় গ্রহণযোগ্যতা ছিল বলে তিনি সেনাসদরে অনেকটা অবাধ বিচরণের এবং প্রায়শ সেনানিবাসে সামরিক অফিসারদের আলোচনা সভায় অংশগ্রহণের সুযোগ পান। তিনি গোপনে মুক্তিযোদ্ধাদের খাদ্যদ্রব্য সরবরাহ, আর্থিক সহায়তা এবং সকল সম্ভাব্য উপায়ে সাহায্য করতেন।  
ঢাকায় বাটা সু কোম্পানির প্রোডাকশন ম্যানেজার হিসেবে ওডারল্যান্ড ১৯৭০ সালের শেষের দিকে প্রথম  ঢাকায় আসেন। কয়েক মাসের মধেই তিনি কোম্পানি-ম্যানেজার পদে পদোন্নতি লাভ করেন। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হওয়ার পরপরই কোম্পানি-ম্যানেজার ওডারল্যান্ড যেন নিজের মধ্যে আবিষ্কার করেন নতুন এক যুদ্ধের মুখোমুখি প্রাক্তন-সৈনিক ওডারল্যান্ডকে। প্রথমদিকে তিনি দখলদার পাকবাহিনীর পরিকল্পনা ও কার্যক্রমের গোপন তথ্য সংগ্রহ করে আগেভাগেই মুক্তিযোদ্ধাদের তা জানিয়ে দিতেন। একজন বিদেশি হিসেবে পাকবাহিনীর নিকট তাঁর নিঃসংশয় গ্রহণযোগ্যতা ছিল বলে তিনি সেনাসদরে অনেকটা অবাধ বিচরণের এবং প্রায়শ সেনানিবাসে সামরিক অফিসারদের আলোচনা সভায় অংশগ্রহণের সুযোগ পান। তিনি গোপনে মুক্তিযোদ্ধাদের খাদ্যদ্রব্য সরবরাহ, আর্থিক সহায়তা এবং সকল সম্ভাব্য উপায়ে সাহায্য করতেন।  
[[Image:OuderlandWilliamAS.jpg|thumb|right|উইলিয়ম এ.এস ওডারল্যান্ড]]


দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে গেরিলা কমান্ডো হিসেবে স্বীয় অভিজ্ঞতাকে পুঁজি করে এবং স্বয়ং ২নং সেক্টরের মুক্তিযোদ্ধা গেরিলা শাখার সক্রিয় সদস্যরূপে অকুতোভয় ওডারল্যান্ড বাটা ফ্যাক্টরি প্রাঙ্গণসহ টঙ্গীর  কয়েকটি গোপন ক্যাম্পে মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়মিত গেরিলা রণকৌশলের প্রশিক্ষণ দিতেন। এর পাশাপাশি তিনি মুক্তিযুদ্ধের গোড়ার দিকে বাংলাদেশে পাকবাহিনীর নৃশংস নির্যাতন ও গণহত্যার আলোকচিত্র তুলে গোপনে বহির্বিশ্বের বিভিন্ন তথ্য-মাধ্যমে পাঠাতে শুরু করেন এবং এরূপে মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষে বিশ্ব  জনমত গড়ে তোলার ক্ষেত্রে বিরাট অবদান রাখেন। এ ব্যাপারে তিনি নিজেই লিখেছেন, ‘ইউরোপের যৌবনের অভিজ্ঞতাগুলো যেন আমি নিজের মধ্যে ফিরে পেয়েছিলাম। মনে হচ্ছিল, বাংলাদেশে যা কিছু ঘটছে বিশ্ববাসীকে সেসব জানানো উচিত।’
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে গেরিলা কমান্ডো হিসেবে স্বীয় অভিজ্ঞতাকে পুঁজি করে এবং স্বয়ং ২নং সেক্টরের মুক্তিযোদ্ধা গেরিলা শাখার সক্রিয় সদস্যরূপে অকুতোভয় ওডারল্যান্ড বাটা ফ্যাক্টরি প্রাঙ্গণসহ টঙ্গীর  কয়েকটি গোপন ক্যাম্পে মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়মিত গেরিলা রণকৌশলের প্রশিক্ষণ দিতেন। এর পাশাপাশি তিনি মুক্তিযুদ্ধের গোড়ার দিকে বাংলাদেশে পাকবাহিনীর নৃশংস নির্যাতন ও গণহত্যার আলোকচিত্র তুলে গোপনে বহির্বিশ্বের বিভিন্ন তথ্য-মাধ্যমে পাঠাতে শুরু করেন এবং এরূপে মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষে বিশ্ব  জনমত গড়ে তোলার ক্ষেত্রে বিরাট অবদান রাখেন। এ ব্যাপারে তিনি নিজেই লিখেছেন, ‘ইউরোপের যৌবনের অভিজ্ঞতাগুলো যেন আমি নিজের মধ্যে ফিরে পেয়েছিলাম। মনে হচ্ছিল, বাংলাদেশে যা কিছু ঘটছে বিশ্ববাসীকে সেসব জানানো উচিত।’


উইলিয়ম ওডারল্যান্ড ১৯৭৮ সাল পর্যন্ত ঢাকায় বাটা সু কোম্পানিতে চাকুরিরত ছিলেন। তখন তিনি কোম্পানির ম্যানেজিং ডিরেক্টর। চাকুরি থেকে অবসর নিয়ে তিনি ফিরে যান তাঁর নিজ দেশ অস্ট্রেলিয়ায়। সেখানেই স্থায়িভাবে বসবাস করতে থাকেন। পশ্চিম অস্ট্রেলিয়ায় পার্থের এক হাসপাতালে ২০০১ সালের ১৮ মে তিনি মৃত্যুবরণ করেন; রেখে যান তাঁর স্ত্রী মারিয়া ও একমাত্র কন্যাকে। জীবনের শেষ দিনগুলোতে প্রায়ই তিনি তাঁর স্ত্রী ও কন্যাকে বলতেন: ‘বাংলাদেশ আমাদের ভালবাসা; পরবর্তী প্রজন্মের মধ্যে আবেগের এ ধারা অব্যাহত রেখো।’
উইলিয়ম ওডারল্যান্ড ১৯৭৮ সাল পর্যন্ত ঢাকায় বাটা সু কোম্পানিতে চাকুরিরত ছিলেন। তখন তিনি কোম্পানির ম্যানেজিং ডিরেক্টর। চাকুরি থেকে অবসর নিয়ে তিনি ফিরে যান তাঁর নিজ দেশ অস্ট্রেলিয়ায়। সেখানেই স্থায়িভাবে বসবাস করতে থাকেন। পশ্চিম অস্ট্রেলিয়ায় পার্থের এক হাসপাতালে ২০০১ সালের ১৮ মে তিনি মৃত্যুবরণ করেন; রেখে যান তাঁর স্ত্রী মারিয়া ও একমাত্র কন্যাকে। জীবনের শেষ দিনগুলোতে প্রায়ই তিনি তাঁর স্ত্রী ও কন্যাকে বলতেন: ‘বাংলাদেশ আমাদের ভালবাসা; পরবর্তী প্রজন্মের মধ্যে আবেগের এ ধারা অব্যাহত রেখো।’ [মুয়ায্‌যম হুসায়ন খান]
 
[মুয়ায্যম হুসায়ন খান]


[[en:Ouderland, William AS]]
[[en:Ouderland, William AS]]

১৬:০৫, ১৭ এপ্রিল ২০১৫ তারিখে সম্পাদিত সর্বশেষ সংস্করণ

উইলিয়ম এ.এস ওডারল্যান্ড

ওডারল্যান্ড, উইলিয়ম এ.এস (১৯১৭-২০০১)  অস্ট্রেলিয়ার ওলন্দাজ নাগরিক উইলিয়ম ওডারল্যান্ডই একমাত্র বিদেশি যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে বীরত্বপূর্ণ অবদানের জন্য সরকার কর্তৃক ‘বীর প্রতীক’ রাষ্ট্রীয় খেতাবে ভূষিত হন।

ওডারল্যান্ড ১৯১৭ সালের ৬ ডিসেম্বর নেদারল্যান্ডের আমস্টারডামে জন্মগ্রহণ করেন। সতেরো বছর বয়সে তিনি বাটা সু কোম্পানিতে সু-শাইনার বা জুতা পালিশকরের চাকুরি নেন (১৯৩৪)। দু’বছর পর চাকুরি ছেড়ে তিনি জাতীয় সেনাবাহিনীতে যোগ দেন (১৯৩৬) এবং ১৯৪৪ সাল পর্যন্ত রয়্যাল সিগন্যাল কোরে সার্জেন্ট পদে কর্মরত থাকেন। তিনি ১৯৪০ সালে সেনাবাহিনীর চাকুরি ছেড়ে ওলন্দাজ বাহিনীর গেরিলা কমান্ডো হিসেবে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে (১৯৩৯-১৯৪৫) অংশগ্রহণ করেন।

ঢাকায় বাটা সু কোম্পানির প্রোডাকশন ম্যানেজার হিসেবে ওডারল্যান্ড ১৯৭০ সালের শেষের দিকে প্রথম  ঢাকায় আসেন। কয়েক মাসের মধেই তিনি কোম্পানি-ম্যানেজার পদে পদোন্নতি লাভ করেন। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হওয়ার পরপরই কোম্পানি-ম্যানেজার ওডারল্যান্ড যেন নিজের মধ্যে আবিষ্কার করেন নতুন এক যুদ্ধের মুখোমুখি প্রাক্তন-সৈনিক ওডারল্যান্ডকে। প্রথমদিকে তিনি দখলদার পাকবাহিনীর পরিকল্পনা ও কার্যক্রমের গোপন তথ্য সংগ্রহ করে আগেভাগেই মুক্তিযোদ্ধাদের তা জানিয়ে দিতেন। একজন বিদেশি হিসেবে পাকবাহিনীর নিকট তাঁর নিঃসংশয় গ্রহণযোগ্যতা ছিল বলে তিনি সেনাসদরে অনেকটা অবাধ বিচরণের এবং প্রায়শ সেনানিবাসে সামরিক অফিসারদের আলোচনা সভায় অংশগ্রহণের সুযোগ পান। তিনি গোপনে মুক্তিযোদ্ধাদের খাদ্যদ্রব্য সরবরাহ, আর্থিক সহায়তা এবং সকল সম্ভাব্য উপায়ে সাহায্য করতেন।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে গেরিলা কমান্ডো হিসেবে স্বীয় অভিজ্ঞতাকে পুঁজি করে এবং স্বয়ং ২নং সেক্টরের মুক্তিযোদ্ধা গেরিলা শাখার সক্রিয় সদস্যরূপে অকুতোভয় ওডারল্যান্ড বাটা ফ্যাক্টরি প্রাঙ্গণসহ টঙ্গীর  কয়েকটি গোপন ক্যাম্পে মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়মিত গেরিলা রণকৌশলের প্রশিক্ষণ দিতেন। এর পাশাপাশি তিনি মুক্তিযুদ্ধের গোড়ার দিকে বাংলাদেশে পাকবাহিনীর নৃশংস নির্যাতন ও গণহত্যার আলোকচিত্র তুলে গোপনে বহির্বিশ্বের বিভিন্ন তথ্য-মাধ্যমে পাঠাতে শুরু করেন এবং এরূপে মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষে বিশ্ব  জনমত গড়ে তোলার ক্ষেত্রে বিরাট অবদান রাখেন। এ ব্যাপারে তিনি নিজেই লিখেছেন, ‘ইউরোপের যৌবনের অভিজ্ঞতাগুলো যেন আমি নিজের মধ্যে ফিরে পেয়েছিলাম। মনে হচ্ছিল, বাংলাদেশে যা কিছু ঘটছে বিশ্ববাসীকে সেসব জানানো উচিত।’

উইলিয়ম ওডারল্যান্ড ১৯৭৮ সাল পর্যন্ত ঢাকায় বাটা সু কোম্পানিতে চাকুরিরত ছিলেন। তখন তিনি কোম্পানির ম্যানেজিং ডিরেক্টর। চাকুরি থেকে অবসর নিয়ে তিনি ফিরে যান তাঁর নিজ দেশ অস্ট্রেলিয়ায়। সেখানেই স্থায়িভাবে বসবাস করতে থাকেন। পশ্চিম অস্ট্রেলিয়ায় পার্থের এক হাসপাতালে ২০০১ সালের ১৮ মে তিনি মৃত্যুবরণ করেন; রেখে যান তাঁর স্ত্রী মারিয়া ও একমাত্র কন্যাকে। জীবনের শেষ দিনগুলোতে প্রায়ই তিনি তাঁর স্ত্রী ও কন্যাকে বলতেন: ‘বাংলাদেশ আমাদের ভালবাসা; পরবর্তী প্রজন্মের মধ্যে আবেগের এ ধারা অব্যাহত রেখো।’ [মুয়ায্‌যম হুসায়ন খান]