উপপত্নী প্রথা

উপপত্নী প্রথা  এ প্রাচীন প্রথার আওতায় একজন পুরুষের ঘরে আইনত বৈধ স্ত্রী ছাড়া আরও স্ত্রীলোক রাখার পারিবারিক ও সামাজিক সম্মতি ছিল। যৌনসংসর্গ ও গৃহস্থালির কাজের উদ্দেশ্যে উপপত্নী রাখা হতো। বর্তমানে এ প্রথার অস্তিত্ব কার্যত নেই এবং সামাজিকভাবে তা আর গ্রহণযোগ্য নয়। তবে উনিশ শতকের শেষাবধি উপপত্নী প্রথা বাংলায় একটি স্বীকৃত সামাজিক ব্যবস্থা হিসেবে বিদ্যমান ছিল। প্রাচীন বইপত্রে রাজা, শাসক ও অভিজাত শ্রেণির ব্যক্তিদের জেনানা মহলে উপপত্নী রাখার উল্লেখ পাওয়া যায়। এমনকি, পবিত্র চরিত্রের মাহাত্ম্যধারী বিশিষ্ট ব্যক্তিদেরও উপপত্নী রাখার দৃষ্টান্ত রয়েছে। মহাভারতের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র বিদুর এক উপপত্নীর গর্ভজাত সন্তান ছিলেন।

বাংলার ইতিহাস পরিক্রমায় শাহী হারেম কিংবা রাজ অন্তঃপুরে উপপত্নীরা এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। উপপত্নীদের অন্যতম কাজ ছিল প্রমোদ-বিনোদন। নানা কলায় পারদর্শিনী এ নারীরা প্রায়শ তাদের মনিবদের ওপর যথেষ্ট প্রভাব বিস্তার করত। লুৎফুন্নেসা ছিলেন নওয়াব সিরাজউদ্দৌলার উপপত্নী, তবে পরবর্তীকালে তিনি কার্যত সিরাজের বেগমের মর্যাদা ভোগ করেন। মুন্নি বেগম ছিলেন মীর জাফরের উপপত্নী, পরে তিনি তাঁর বেগম হন। দরবারে মুন্নি বেগমের যথেষ্ট ক্ষমতা ও প্রভাব-প্রতিপত্তি ছিল। মুন্নি বেগমের নাবালক পুত্র নাজিমউদ্দৌলাকে মীরজাফর আলী খান বাংলার নবাব মনোনীত করেন।

রাজপরিবার ও অভিজাত শ্রেণির নিম্নতর বিভিন্ন স্তরে এবং  জমিদার ও জোতদারদের মধ্যেও উপপত্নী প্রথা প্রচলিত ছিল। এমনকি অনেক ধনী কৃষকও উপপত্নী রাখত। উপপত্নীর গর্ভজাত সন্তানরা পিতার পরিবারে পুত্রদের সমতুল্য মর্যাদা পেত না। আর এদের যতটুকু অধিকারই থাকুক না কেন তা ছিল অনেকটাই প্রথাভিত্তিক যার কোনো আইনগত ভিত্তি ছিল না। জমিদার, জোতদার ও অন্যান্য বিত্তবান কৃষকের ঘরে উপপত্নীদের সামাজিক মর্যাদা ছিল দাসীর কিছুটা উপরে।  [সিরাজুল ইসলাম]