উপকূলীয় জেলেদের বিশেষ দেশজ জ্ঞান

Mukbil (আলোচনা | অবদান) কর্তৃক ১৫:০২, ১৪ অক্টোবর ২০২৩ তারিখে সংশোধিত সংস্করণ ("'''উপকূলীয় জেলেদের বিশেষ দেশজজ্ঞান''' (Indigenous Knowledge of Coastal Fishing) বঙ্গোপসাগরের গতিশীল বাস্তুসংস্থান এবং সাগরে উপস্থিত জলজ সম্পদের প্রাচুর্য এদেশের ছোট পরিসরের জেলেদের বিশেষ দেশজজ্..." দিয়ে পাতা তৈরি)

উপকূলীয় জেলেদের বিশেষ দেশজজ্ঞান (Indigenous Knowledge of Coastal Fishing) বঙ্গোপসাগরের গতিশীল বাস্তুসংস্থান এবং সাগরে উপস্থিত জলজ সম্পদের প্রাচুর্য এদেশের ছোট পরিসরের জেলেদের বিশেষ দেশজজ্ঞান (Indigenous Knowledge) ব্যবস্থার সৃষ্টি ও সমৃদ্ধির জন্য উপযুক্ত পরিবেশ প্রদান করে। সামাজিক শিক্ষা এবং বিশ্বাসের মধ্যে লালিত জেলেদের দেশজ জ্ঞান সামুদ্রিক সম্পদ ও পরিবেশের উপর তাদের বহু যুগের গবেষণা ও পর্যবেক্ষণের থেকে প্রাপ্ত অভিজ্ঞতাজনিত জ্ঞানের একটি সাবলিল মিশ্রণ (লোক-সমুদ্রবিদ্যা)। দেশজ জ্ঞান চিরাচরিত হিন্দু জেলেদের মানবসম্পদ ও সামর্থ্যের একটি বিশেষ রূপ যা একত্রে মাছ ধরা এবং জ্ঞান বিনিময়ের মধ্য দিয়ে ক্রমশ অন্যান্য ধর্মীয় শ্রেণির মাঝেও ছড়িয়ে পড়েছে। সর্বোচ্চ পরিমাণ মৎস্য আহরণ এবং মাছ ধরার সরঞ্জামাদি ও বাহনের নিরাপদ ব্যবহারে দেশজ জ্ঞান অপরিহার্য।

জেলেদের লোক-সমুদ্র বিদ্যার জ্ঞানের মধ্যে রয়েছে ওয়াটারম্যাস, ঋতু, অঞ্চল ভেদে গভীরতা, ভূসংস্থান, মিঠা পানির প্রবাহ, বায়ুপ্রবাহের দিক ও গতি, চন্দ্রের পর্যায়ক্রমিকতা, মহাকাশীয় নেভিগেশন, প্রভৃতি এবং লোক-শ্রেণী বিন্যাস বিদ্যা প্রজাতির সনাক্তকরণ, প্রাপ্যতা ও বিস্তারকে অন্তর্ভুক্ত করে। জেলেরা বঙ্গোপসাগরের ৬ ধরনের ওয়াটারম্যাস সম্পর্কে জানে, যথা: ১) ঘোলা, ২) স্বচ্ছ/পরিষ্কার, ৩) হালকা সবুজ, ৪) সবুজ, ৫) নীলাভ, এবং ৬) কালোপানি। তারা বায়ুপ্রবাহের দিক ও গতির দিকে বিশেষ নজর রাখে এবং মাছ ধরার জন্য উত্তর ও পূর্ব দিক থেকে পশ্চিম দিকে বায়ুপ্রবাহ অনুকূল হিসেবে বিবেচনা করে। পশ্চিমের বাতাস (মার্চের মাঝামাঝি থেকে জুলাইয়ের মাঝামাঝি) সমুদ্রকে উত্তাল করে তোলে, যেখানে বৃষ্টিঝড় ও ঘূর্ণিঝড়ের শক্তিকে দমিয়ে দেয়। চাঁদের পর্যায়ক্রমিকতা (তিথি) ও অর্ধÑদৈনিক স্রোতের ধারার (দৈনিক ২ বার জোয়ার, এবং ২ বার ভাটা) সাথে মিল রেখে জেলেরা মাছ ধরার ব্যাপারে চৌকস সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে।

জেলেরা সমুদ্রের ভূসংস্থান এবং ভূমিক্ষয় ও পরিবৃদ্ধির গতিশীলতার ব্যাপারে সম্যক অবগত। মহাজাগতিক জ্ঞান ও জটিল নেভিগেশন দক্ষতার উপর নির্ভর করে জেলেরা মৌলিক উপকরণাদি ছাড়াই গভীর সমুদ্রে যায়। বঙ্গোপসাগরের মাছ ধরার প্রধান জায়গা যেখানে ৪টি, জেলেরা সেখানে ৫০টির মতো মাছ ধরার নির্ধারিত স্থান চেনে। সামুদ্রিক সম্পদের টেকসই ব্যবস্থাপনার জন্য দেশজ জ্ঞান ও বৈজ্ঞানিক জ্ঞানের সমন্বয়সাধনের প্রচেষ্টার প্রয়োজন। [অপূর্ব কৃষ্ণ দেব]