ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য

সম্পাদনা সারাংশ নেই
 
সম্পাদনা সারাংশ নেই
 
১ নং লাইন: ১ নং লাইন:
[[Category:বাংলাপিডিয়া]]
[[Category:বাংলাপিডিয়া]]
'''ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়'''  বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর কুষ্টিয়ায় প্রতিষ্ঠিত দেশের প্রথম সরকারি ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়। বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে একটি ইসলামী বিদ্যাপীঠ স্থাপনের উদ্যোগ অনেক পুরনো। ১৯১২সালে  বৃটিশ সরকার ঢাকায় একটি  বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার ঘোষণা দেয়। এই ঘোষণায় ইসলামিক স্টাডিজ অনুষদ প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব থাকে।  ১৯২০ সালে  [[ইসলামাবাদী, মওলানা মনিরুজ্জামান|মওলানা মনিরুজ্জামান ইসলামাবাদী]] চট্টগ্রামের পটিয়ায় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্যে ফান্ড গঠন করেন। ১৯২১ সালে ঢাকা  বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হলে প্রস্তাবিত ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগ খোলা হয়। ১৯৩৫ সালে মওলানা শওকত আলী মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। ১৯৪১ সালে মাওলা বক্স কমিটি ‘ইউনিভার্সিটি অব ইসলামিক লার্নিং’ প্রতিষ্ঠার জন্য সুপারিশ করে। ১৯৪৬-৪৭ সালে সৈয়দ মোয়াজ্জেম উদ্দীন কমিটি এবং ১৯৪৯ সালে  [[খাঁ, মোহাম্মদ আকরম|মওলানা মোহাম্মদ আকরম খাঁ]] কমিটি  ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার জন্য সুপারিশ করে। ১৯৬৩ সালের ৩১ মে ড. এস. এম. হোসাইন-এর সভাপতিত্বে ‘ইসলামী আরবী বিশ্ববিদ্যালয় কমিশন’ গঠন করা হয়। ১৯৭৪ সালে  [[ভাসানী, মওলানা আবদুল হামিদ খান|মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী]] টাঙ্গাইলের সন্তোষে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় গড়ে তোলেন।
'''ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়'''  বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর কুষ্টিয়ায় প্রতিষ্ঠিত দেশের প্রথম সরকারি ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়। বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে একটি ইসলামী বিদ্যাপীঠ স্থাপনের উদ্যোগ অনেক পুরনো। ১৮৫৭ সালে প্রতিষ্ঠিত কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে মুসলমানদের শিক্ষার সুযোগ কমে যওয়ায় ১৯০৩ সালে ‘নবনূর’ পত্রিকার সম্পাদক সৈয়দ এমদাদ আলী, সৈয়দ আমীর আলী, সৈয়দ নওয়াব আলী চৌধুরী প্রমুখ মুসলমানদের জন্য একটি স্বতন্ত্র মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার দাবি করেন। ১৯১১ সালে বঙ্গভঙ্গ রদ হলে বাংলার মুসলমানগণ ১৯১২ সালে ইসলামিক স্টাডিজ অনুষদসহ ঢাকায় একটি আবাসিক মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার দাবি করেন। অনেকের বিরোধিতা সত্ত্বেও ব্রিটিশ সরকার মুসলমানদের দাবি মেনে নিয়ে ঢাকায় একটি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার ঘোষণা দেয়।


[[Image:IslamicUniversityMainBuilding.jpg|thumb|400px|right|ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়]]
কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় কমিশন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল কমিটি প্রস্তাবিত স্বতন্ত্র ইসলামিক স্টাডিজ অনুষদ প্রতিষ্ঠার সুপারিশ অগ্রাহ্য করে শুধু ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগ প্রতিষ্ঠার সুপারিশ করে। পূর্বের প্রস্তাবনা অনুযায়ী ১৯২১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হলে এদেশের খ্যাতনামা আলিমগণ আরবী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার জন্য আবার সোচ্চার হন। ১৯১৩ সালের মার্চে বগুড়া জেলায় [[খাঁ, মোহাম্মদ আকরম|মওলানা মোহাম্মদ আকরম খাঁ]]-কে সেক্রেটারি এবং [[ইসলামাবাদী, মওলানা মনিরুজ্জামান|মওলানা মনিরুজ্জামান ইসলামাবাদী]] জয়েণ্ট সেক্রেটারি করে আঞ্জুমানে ওলামায়ে বাঙ্গালা গঠিত হয়। আরবী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠা এই সংগঠনের অন্যতম পরিকল্পনা ছিল। ১৯১৫ সালে মওলানা মনিরুজ্জামান ইসলামাবাদী সর্বপ্রথম একটি আরবী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পরিকল্পনা করেন। এতদ উদ্দেশ্যে তিনি ফান্ড গঠন করেন এবং ১৯২০ সালে ব্যক্তিগত উদ্যোগে চট্টগ্রামের পটিয়া থানার দিয়াং পাহাড়ের পাদদেশে ৬ শত বিঘা জমির ব্যবস্থা করেন। ১৯২৯ সালে কলিকাতা আলীয়া মাদ্রাসায় জমিয়তে তালাবায়ে আরাবিয়ার ছাত্ররাও ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার দাবি উত্থাপন করে। এ দাবির স্বপক্ষে মাওলানা আকরম খাঁর ''দৈনিক আজাদ'' পত্রিকা (১০ আগস্ট ১৯৬৫) সহ কয়েকটি পত্রিকা মূখ্য ভূমিকা পালন করে।


বাংলাদেশ সরকার ১ ডিসেম্বর ১৯৭৬ সালে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার ঘোষণা দেয়। ১৯৭৭ সালের ২৭ জানুয়ারি প্রফেসর এম. এ. বারীকে সভাপতি করে ৭ সদস্যবিশিষ্ট ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় পরিকল্পনা কমিটি গঠন করা হয়। কমিটি ২০ অক্টোবর ১৯৭৭ সালে রিপোর্ট পেশ করে। কমিটির সুপারিশে থিওলজি এন্ড  ইসলামিক স্টাডিজ  অনুষদের অধীন (১) আল-কুরআন ওয়া উলূমুল কুরআন, (২) উলূমুত তাওহীদ ওয়াদ দা‘ওয়াহ, (৩) আল হাদীস ওয়া  উলূমুল হাদীস, (৪) আশ-শরীয়াহ ওয়া উসূলুস শরীয়াহ, এবং (৫) আল ফাল সাফাহ ওয়াততাসাউফ ওয়াল আখলাক বিভাগ,মানবিক ও সমাজবিজ্ঞান অনুষদের অধীন (১) আরবী ভাষা সাহিত্য, (২) বাংলা ভাষা ও সাহিত্য, (৩) ইসলামের ইতিহাস সংস্কৃতি, (৪) অর্থনীতি, (৫) লোক প্রশাসন, (৬) তুলনামূলক ধর্মতত্ত্ব, (৭) ভাষাতত্ত্ব, এবং (৮) বাণিজ্য বিভাগ এবং বিজ্ঞান অনুষদের অধীন (১) পদার্থ বিজ্ঞান, (২) গণিত, (৩) রসায়ন, (৪) উদ্ভিদবিদ্যা, এবং (৫) প্রাণিবিদ্যা বিভাগ প্রতিষ্ঠার কথা উল্লেখ করা হয়। এছাড়া রিপোর্টে টিচার্স ট্রেনিং ইনস্টিটিউট, অনুবাদ ও প্রকাশনা ব্যুরো, মধ্যপ্রাচ্য অধ্যয়ন ও মুসলিম বিশ্বের ভাষা শিক্ষা ইনস্টিটিউট এবং ১টি স্কুল-মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠার কথাও উল্লেখ থাকে।
১৯৩৫ সালে মাওলানা শওকত আলী অবিভক্ত ভারতবর্ষে প্রথম বেসরকারি ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। অবিভক্ত বাংলার মুখ্যমন্ত্রী শের-ই-বাংলা এ.কে ফজলুল হক ১৯৩৯ সালে কলিকাতা আলীয়া মাদ্রাসায় পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠানে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার ঘোষণা করেন। মওলানা ইসলামবাদীর ১৯৪০ সালে জাতীয় সংসদে প্রস্তাব পেশ ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পক্ষে ইতিবাচক ভূমিকা পালন করে। ১৯৪১ সালে মাওলা বক্স কমিটি, ১৯৪৬-৪৭ সালে সৈয়দ মোয়াজ্জেম উদ্দীন হোসেন কমিটি, ১৯৪৯ সালে মওলানা আকরম খাঁ কমিটি, ১৯৫৭ সালে আতাউর রহমান খান কমিশন, ১৯৫৮ সালের এস.এম শরীফ শিক্ষা কমিশন, ১৯৬৩ সালের ড. এস.এম হোসাইন কমিশন ইসলামী আরবী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার সুপারিশ করে। এসব কমিটি ও কমিশন ১৯৬৪ সালের ২৭ সেপ্টেম্বরে পেশকৃত রিপোর্টে এ বিষয়ে সুপারিশ করে। একই বছর গভর্ণর মোনায়েম খান প্রবল জনদাবির মুখে বরিশালের কাসেমাবাদে এবং ১৯৬৫ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি চট্টগ্রামে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার ঘোষণা দেন। ১৯৭৪ সালে [[ভাসানী, মওলানা আবদুল হামিদ খান|মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী]] টাঙ্গাইলের সন্তোষে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় গড়ে তোলেন।
[[Image:IslamicUniversityMainBuilding.jpg|right|thumbnail|400px|প্রধান ফটক, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়]]
বাংলাদেশ সরকার ১ ডিসেম্বর ১৯৭৬ সালে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার ঘোষণা দেয়। ১৯৭৭ সালের ২১ জানুয়ারি (এসআইভি/৫-৮৮/৭৬/৬৪ঊফহ) পত্র অনুযায়ী দেশে একটি ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভাইস-চ্যান্সেলর ও বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের চেয়ারম্যান দেশের খ্যাতনামা শিক্ষাবিদ প্রফেসর ড. এম.এ বারীকে সভাপতি করে সাত সদস্য বিশিষ্ট উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন কমিটি গঠন করা হয়। ড. এম.এ বারী কমিশন ১৯৭৭ সালের ২০ অক্টোবর দেশে একটি পূর্ণাঙ্গ ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠার সুপারিশ করে রিপোর্ট পেশ করেন। রিপোর্টে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠার মূল উদ্দেশ্যসমূহের উল্লেখ ছিল। উদ্দেশ্যসমূহ হচ্ছে: (১) কলা বিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখায় ইসলামী শিক্ষার সমন্বয় সাধন করা। (২)নতুন আঙ্গিকে মাদরাসা শিক্ষা যুগোপযোগী করে এর উন্নতি সাধন করা। (৩) ইসলামী শিক্ষার বিভিন্ন শাখায় উচ্চ শিক্ষা গবেষণার ব্যবস্থা করা। (৪) দ্বিমুখী শিক্ষা পদ্ধতির বিলুপ্তি ঘটিয়ে মুসলিম সমাজে ঐক্য স্থাপন করা। (৫). ইসলামী শিক্ষা প্রবর্তনের মাধ্যমে তথাকথিত অনৈসলামিক ও ইসলামী শিক্ষার বিরোধ অবসান করা। (৬) মুসলিম মনীষী সৃষ্টির মাধ্যমে গোটা পরিবেশ ইসলামী শিক্ষার পুনর্জাগরণ করা। (৭) ইসলামী শিক্ষা এবং মানবিক ও বিজ্ঞান বিষয়ে পারদর্শী স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পর্যায়ে এমন ছাত্র তৈরি করা যারা কর্ম জীবনে উচ্চ মর্যাদার অধিকারী হতে পারবে এবং ইসলামী মূল্যবোধের প্রতি আস্থাশীল জনগণের আশা আকাঙ্খা পুরণ করতে সক্ষম হবে।


৩১ মার্চ-৮ এপ্রিল ১৯৭৭ সালে মক্কায় অর্গানাইজেশন অব ইসলামিক কান্ট্রিজ (ওআইসি)-এর উদ্যোগে অনুষ্ঠিত মুসলিম বিশ্বের রাষ্ট্রপ্রধান সরকার প্রধানদের এক সম্মেলনে বিভিন্ন মুসলিম রাষ্ট্রে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার সুপারিশ করা হয়। এই সুপারিশের ভিত্তিতে ১৯৭৯ সালের  ৯ ফেব্রুয়ারি প্রফেসর এ.এন.এম মমতাজ উদ্দীন চৌধুরীকে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার জন্য প্রকল্প  পরিচালক  নিয়োগ  করা হয়।
কমিটির সুপারিশে থিওলজি এন্ড ইসলামিক স্টাডিজ অনুষদ-এর অধীন (১) আল-কুরআন ওয়া উলূমুল কুরআন, (২) উলূমুত তাওহীদ ওয়াদ দা‘ওয়াহ, (৩) আল হাদীস ওয়া উলূমুল হাদীস, () আশ-শরীয়াহ ওয়া উসূলুস শরীয়াহ, এবং (৫) আল ফাল সাফাহ ওয়াততাসাউফ ওয়াল আখলাক বিভাগ, মানবিক ও সমাজবিজ্ঞান অনুষদ-এর অধীন (১) আরবী ভাষা ও সাহিত্য, (২) বাংলা ভাষা ও সাহিত্য, (৩) ইসলামের ইতিহাস সংস্কৃতি, (৪) অর্থনীতি, (৫) লোক প্রশাসন, (৬) তুলনামূলক ধর্মতত্ত্ব, (৭) ভাষাতত্ত্ব, এবং বাণিজ্য বিভাগ এবং বিজ্ঞান অনুষদের অধীন (১) পদার্থ বিজ্ঞান, (২) গণিত, (৩) রসায়ন, (৪) উদ্ভিদবিদ্যা, এবং (৫) প্রাণিবিদ্যা বিভাগ প্রতিষ্ঠার কথা উল্লেখ করা হয়। এছাড়া রিপোর্টে টিচার্স ট্রেনিং ইনস্টিটিউট, অনুবাদ ও প্রকাশনা ব্যুরো, মধ্যপ্রাচ্য অধ্যয়ন ও মুসলিম বিশ্বের ভাষা শিক্ষা ইনস্টিটিউট এবং ১টি স্কুল-মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠার কথাও উল্লেখ থাকে।


২২ নভেম্বর ১৯৭৯ সালে কুষ্টিয়া শহর থেকে ২৪ কিলোমিটার দক্ষিণে কুষ্টিয়া-ঝিনাইদহ মহাসড়কের পাশে শন্তিডাঙ্গা-দুলালপুর নামক স্থানে ১৭৫ একর জমিতে শহীদ রাষ্ট্রপতি  [[রাজনৈতিক দল|জিয়াউর রহমান]] ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। ১৯৮০ সালের ১৮ জুলাই সরকারি আদেশে শান্তিডাঙ্গা-দুলালপুর থেকে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় গাজীপুরের বোর্ড বাজারে  স্থানান্তর  করা হয়। ২০সেপ্টেম্বর ১৯৮০ সালের জাতীয় সংসদে Act No. XXXI of 1980 বলে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় ইনস্টিটিউট অব ইসলামিক এডুকেশন এন্ড রিসার্চ সেন্টার প্রতিষ্ঠিত হয়।
৩১ মার্চ-৮ এপ্রিল ১৯৭৭ সালে মক্কায় অর্গানাইজেশন অব ইসলামিক কান্ট্রিজ (ওআইসি)-এর উদ্যোগে অনুষ্ঠিত মুসলিম বিশ্বের রাষ্ট্রপ্রধান ও সরকার প্রধানদের এক সম্মেলনে বাংলাদেশসহ বিভিন্ন মুসলিম রাষ্ট্রে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার সুপারিশ করা হয়। এই সুপারিশের ভিত্তিতে ১৯৭৯ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি প্রফেসর এ.এন.এম. মমতাজ উদ্দীন চৌধুরীকে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার জন্য প্রকল্প পরিচালক নিয়োগ করা হয়।


১৯৮০ সালের ২৭ ডিসেমতর জাতীয় সংসদে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় আইন (অ্যাক্ট নং ২৭, ১৯৮০) পাশ হয়। অ্যাক্টে বিশ্ববিদ্যালয়কে শিক্ষা ও প্রশাসনিক কার্যাবলি পরিচালনায় সতায়ত্তশাসন প্রদান হয়। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন-এর অর্থে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালিত ও নিয়ন্ত্রিত হবে। প্রধানমন্ত্রী হবেন বিশ্ববিদ্যালয়ের চ্যান্সেলর এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক দায়িত্ব পালন করবেন ভাইস চ্যান্সেলর। তিনি চ্যান্সেলর কর্তৃক মনোনীত হবেন। ১৯৮১ সালের ১ জানুয়ারি প্রফেসর এ.এন.এম মমতাজ উদ্দীন চৌধুরীকে প্রথম উপাচার্য নিয়োগ করা হয়। ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় (সংশোধনী) অর্ডিন্যান্স ১৯৮২ (৪২)-এর ৪(বি) ধারা অনুসারে বোর্ড বাজারে  ৫০ একর জমি অধিগ্রহণ করা হয়। ১৯৮২ সালে Ordinance No. XLIII of 1982 এর মাধ্যমে ইনস্টিটিউট অব ইসলামিক এডুকেশন এন্ড রিসার্চ সেন্টার বিলুপ্ত করা হয়। ১৯৮৩ সালের ২১ জুলাই  [[এরশাদ, লে. জেনারেল হুসেইন মুহম্মদ |হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ]] বোর্ডবাজারে আনুষ্ঠানিকভাবে দ্বিতীয়বার বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। ২ অক্টোবর ১৯৮৩ সালে স্মারক নং SVIII/7U-3/83/919-Edn. মোতাবেক ইনস্টিটিউট অব ইসলামিক এডুকেশন এন্ড রিসার্চ সেন্টার পুনঃস্থাপিত হয়।
২২ নভেম্বর ১৯৭৯ সালে কুষ্টিয়া শহর থেকে ২৪ কিলোমিটার দক্ষিণে কুষ্টিয়া-ঝিনাইদহ মহাসড়কের পাশে শন্তিডাঙ্গা-দুলালপুর নামক স্থানে ১৭৫ একর জমিতে শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান দেশের দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চলের বৃহত্তম শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। ১৯৮০ সালের ১৮ জুলাই সরকারি আদেশে শান্তিডাঙ্গা-দুলালপুর থেকে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় গাজীপুরের বোর্ড বাজারে স্থানান্তর করা হয়।
[[Image:IslamicUniversityAcademicBuilding.jpg|left|thumbnail|200px|প্রথম একাডেমিক ভবন, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়]]
১৯৮০ সালের ২৭ ডিসেম্ভর জাতীয় সংসদে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় আইন (অ্যাক্ট নং ২৭, ১৯৮০) পাশ হয়। অ্যাক্টে বিশ্ববিদ্যালয়কে শিক্ষা ও প্রশাসনিক কার্যাবলি পরিচালনায় স¦ায়ত্তশাসন প্রদান হয়। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন-এর অর্থে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালিত ও নিয়ন্ত্রিত হবে। প্রধানমন্ত্রী হবেন বিশ্ববিদ্যালয়ের চ্যান্সেলর এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক দায়িত্ব পালন করবেন ভাইস চ্যান্সেলর। তিনি চ্যান্সেলর কর্তৃক মনোনীত হবেন। ১৯৮১ সালের ১ জানুয়ারি প্রফেসর এ.এন.এম মমতাজ উদ্দীন চৌধুরীকে প্রথম উপাচার্য নিয়োগ করা হয়। ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় (সংশোধনী) অর্ডিন্যান্স ১৯৮২ (৪২)-এর ৪(বি) ধারা অনুসারে বোর্ড বাজারে ৫০ একর জমি অধিগ্রহণ করা হয়। ১৯৮৩ সালের ২১ জুলাই হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ বোর্ডবাজারে আনুষ্ঠানিকভাবে দ্বিতীয় বার বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন।  


১৯৮৫-৮৬ শিক্ষাবর্ষে থিত্তলজি এন্ড  ইসলামিক  স্টাডিজ  অনুষদের  আল-কুরআন  ওয়া  উলূমুল  কুরআন  এবং  উলূমুত  তাত্তহীদ  ওয়াদ  দা’ওয়াহ  বিভাগে  এবং  মানবিক  ও  সমাজবিজ্ঞান  অনুষদের  হিসাব বিজ্ঞান  ও  ব্যবস্থাপনা  বিভাগে  তিনশত  ছাত্র  ভর্তি  করা  হয়। ১৯৮৬ সালের ২৮ জুন  ৮ জন শিক্ষক ও ৩০০ জন ছাত্র নিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে বোর্ড বাজারে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রম শুরু হয়। কলেজ ছাত্রদের জন্য ১০০ নম্বরের আরবি ও ইসলামিয়াত এবং মাদ্রাসা ছাত্রদের জন্য ১০০ নম্বরের ইংরেজি বাধ্যতামূলক করা হয়। ১৯৮৫-৮৬ থেকে ১৯৮৭-৮৮ শিক্ষাবর্ষ পর্যন্ত প্রত্যেক বিভাগে মোট ছাত্রের ৫০% মাদ্রাসা ছাত্র ভর্তি করা হয়।
১৯৮৫-৮৬ শিক্ষাবর্ষে থিওলজি এন্ড ইসলামিক স্টাডিজ অনুষদের আল-কুরআন ওয়া উলূমুল কুরআন এবং উলূমুত তাত্তহীদ ওয়াদ দা’ওয়াহ বিভাগে এবং মানবিক ও সমাজবিজ্ঞান অনুষদের হিসাব বিজ্ঞান ও ব্যবস্থাপনা বিভাগে তিনশত ছাত্র ভর্তি করা হয়। ১৯৮৬ সালের ২৮ জুন ৮ জন শিক্ষক নিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে বোর্ড বাজারে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রম শুরু হয়। কলেজ ছাত্রদের জন্য ১০০ নম্বরের আরবি ও ইসলামিয়াত এবং মাদ্রাসা ছাত্রদের জন্য ১০০ নম্বরের ইংরেজি বাধ্যতামূলক করা হয়। ১৯৮৫-৮৬ থেকে ১৯৮৭-৮৮ শিক্ষাবর্ষ পর্যন্ত প্রত্যেক বিভাগে মোট ছাত্রের ৫০% মাদ্রাসা ছাত্র ভর্তি করা হয়।


১৯৮৯ সালের ৩ জানুয়ারি মন্ত্রীসভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ১৪ ডিসেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল কার্যক্রম বন্ধ ঘোষিত হয়। ১৯৯০ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি এক আদেশে বিশ্ববিদ্যালয় গাজীপুর থেকে কুষ্টিয়া শহরে পুনরায় স্থানান্তর করা হয়। ১৯৯০ সালে বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথম মহিলা শিক্ষক নিয়োগ ও ১৯৯০-৯১ শিক্ষাবর্ষে প্রথম ছাত্রী ভর্তি করা হয়। জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে ছাত্র-ছাত্রী ভর্তি ও শিক্ষক নিয়োগের ব্যবস্থা প্রবর্তিত হয়। ১৯৯২ সাল পর্যন্ত কুষ্টিয়া শহরে পিটিআই এবং প্যারামেডিক্যাল ভবনে বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রম পরিচালিত হয়। ১ নভেম্বর ১৯৯২ সালে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় মূল ক্যাম্পাস শান্তিডাঙ্গা-দুলালপুরে নিয়ে আসা হয়।
১৯৮৯ সালের ৩ জানুয়ারি মন্ত্রীসভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ১৪ ডিসেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল কার্যক্রম বন্ধ ঘোষিত হয়। ১৯৯০ সালের ২৪ ফেরুয়ারি এক আদেশে বিশ্ববিদ্যালয় গাজীপুর থেকে কুষ্টিয়া শহরে পুনরায় স্থানান্তর করা হয়। ১৯৯০ সালে বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথম মহিলা শিক্ষক নিয়োগ ও ১৯৯০-৯১ শিক্ষাবর্ষে প্রথম ছাত্রী ভর্তি করা হয়। জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে ছাত্র-ছাত্রী ভর্তি ও শিক্ষক নিয়োগের ব্যবস্থা প্রবর্তিত হয়। ১৯৯২ সাল পর্যন্ত কুষ্টিয়া শহরে পিটিআই এবং প্যারামেডিক্যাল ভবনে বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রম পরিচালিত হয়। ১ নভেম্বর ১৯৯২ সালে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় মূল ক্যাম্পাস শান্তিডাঙ্গা-দুলালপুরে নিয়ে আসা হয়। ১৯৯৭-৯৮ শিক্ষাবর্ষ থেকে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রচলিত ৩ বছরের পরিবর্তে ৪ বছরের অনার্স কোর্স এবং ২০০৬-২০০৭ শিক্ষাবর্ষ থেকে গ্রেডিং পদ্ধতি চালু করা হয়।
 
১৯৯৭-৯৮ শিক্ষাবর্ষ থেকে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রচলিত ৩ বছরের পরিবর্তে ৪ বছরের অনার্স কোর্স এবং ২০০৬-২০০৭ শিক্ষা বর্ষ থেকে গ্রেডিং পদ্ধতি  চালু করা হয়।


ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য সিন্ডিকেট এবং একাডেমিক কাউন্সিলের সাহায্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ও শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করেন। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা এবং প্রশাসনিক কর্মকান্ড পরিচালনার জন্য অর্থ কমিটি, পরিকল্পনা ও উন্নয়ন কমিটি, ওয়ার্কস কমিটি, উচ্চতর শিক্ষা ও গবেষণা কমিটি, অনুষদীয় কমিটি, বিভাগীয় পরিকল্পনা কমিটি ও একাডেমিক কমিটি রয়েছে।
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য সিন্ডিকেট এবং একাডেমিক কাউন্সিলের সাহায্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ও শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করেন। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা এবং প্রশাসনিক কর্মকান্ড পরিচালনার জন্য অর্থ কমিটি, পরিকল্পনা ও উন্নয়ন কমিটি, ওয়ার্কস কমিটি, উচ্চতর শিক্ষা ও গবেষণা কমিটি, অনুষদীয় কমিটি, বিভাগীয় পরিকল্পনা কমিটি ও একাডেমিক কমিটি রয়েছে।


ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে বর্তমানে ৫টি অনুষদ ও ২২টি বিভাগ রয়েছে। অনুষদ ও বিভাগগুলি হচ্ছে ১. থিওলজি এন্ড ইসলামিক স্টাডিজ  অনুষদ: আল-কুরআন এন্ড ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগ, দাওয়াহ্ এন্ড ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগ এবং আল হাদিস এন্ড ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগ, ২. মানবিক ও সমাজবিজ্ঞান অনুষদ: অর্থনীতি বিভাগ, আরবী ভাষা ও সাহিত্য বিভাগ, বাংলা বিভাগ,ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগ, ইংরেজি বিভাগ এবং রাষ্ট্রনীতি ও লোকপ্রশাসন বিভাগ, ৩. আইন ও শরীয়াহ্ অনুষদ: আইন ও মুসলিম বিধান বিভাগ এবং আল-ফিকহ বিভাগ, ৪. ব্যবসায় প্রশাসন অনুষদ: হিসাব বিজ্ঞান ও তথ্য পদ্ধতি বিভাগ; ব্যবস্থাপনা বিভাগ এবং ফিনান্স বিভাগ। . ফলিত বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি অনুষদ: ইলেক্ট্রনিক্স ফলিত পদার্থবিজ্ঞান বিভাগ, ফলিত রসায়ন ও রসায়ন প্রযুক্তি বিভাগ, কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিভাগ, ইনফরমেশন সায়েন্স ও টেকনোলজি বিভাগ, বায়ো-টেকনোলজি বিভাগ, ফলিত পুষ্টি খাদ্যবিজ্ঞান বিভাগ, পরিসংখ্যান বিভাগ এবং গণিত বিভাগ।
বিশ্ববিদ্যালয়ে বর্তমানে ৮টি অনুষদের অধীনে ৩৪টি বিভাগ রয়েছে। অনুষদ ও বিভাগগুলি হচ্ছে: (ক) থিওলজি এন্ড ইসলামিক স্টাডিজ অনুষদ (১৯৮৫): (১) আল-কুরআন এন্ড ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগ (১৯৮৫), (২) দাওয়াহ্ এন্ড ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগ (১৯৮৫) এবং (৩) আল হাদিস এন্ড ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগ (১৯৯১); (খ) কলা অনুষদ (২০১৭): (১) আরবী ভাষা ও সাহিত্য বিভাগ (১৯৯০), (২) বাংলা বিভাগ (১৯৯০), (৩) ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগ (১৯৯০), (৪) ইংরেজি বিভাগ (১৯৯০), (৫) ফোকলোর স্টাডিজ (২০১৫) এবং (৬) চারুকলা বিভাগ (২০১৯); (গ) সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদ (১৯৮৫): (১) অর্থনীতি বিভাগ (১৯৮৭), (২) লোকপ্রশাসন বিভাগ (১৯৯০), () রাষ্ট্রনীতি (২০১৫), (৪) উন্নয়ন অধ্যয়ন বিভাগ (২০১৭) এবং (৫) সমাজকল্যাণ বিভাগ (২০১৭); (ঘ) আইন অনুষদ (১৯৯৪) (পূর্ব নাম আল-কানুন ওয়াশ শরীয়াহ): (১) আইন বিভাগ (১৯৯০), (২) আল-ফিকহও লিগ্যাল স্টাডিজ বিভাগ (২০০৩) এবং (৩) আইন ও ভূমি ব্যাবস্থাপনা বিভাগ (২০১৫); (ঙ) ব্যবসায় প্রশাসন অনুষদ (১৯৯৫): (১) হিসাব বিজ্ঞান ও তথ্য পদ্ধতি বিভাগ (১৯৮৫), (২) ব্যবস্থাপনা বিভাগ (১৯৮৫), (৩) ফিনান্স ও ব্যাংকিং বিভাগ (২০১৫), (৪) মার্কেটিং বিভাগ (২০১৫) এবং () হিউম্যান এন্ড হসপিটালিটি ম্যানেজম্যান্ট বিভাগ (২০১৭); (চ) বিজ্ঞান অনুষদ (১৯৯৪): (১) গণিত বিভাগ (২০০৪), (২) পরিসংখ্যান বিভাগ (২০০৯) এবং (৩) পরিবেশ বিজ্ঞান ও ভূগোল (২০১৭); (ছ) প্রকৌশল ও প্রযুক্তি অনুষদ (২০১৭): (১) ইলেক্ট্রিক্যাল এন্ড ইলেক্ট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ (১৯৯৫), (২) ফলিত পদার্থবিজ্ঞান, (৩) ক্যামিকেল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ (১৯৯৫), (৪) কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিভাগ (১৯৯৫), (৫) ইনফরমেশন সায়েন্স এন্ড কমিউনিকেশন ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ (১৯৯৮) এবং (৬) বায়োমেডিকেল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ (২০১৭); (জ) জৈবিক বিজ্ঞানঅনুষদ (২০১৭): (১) জৈব প্রযুক্তি জীনতত্ত্ব প্রকৌশল বিভাগ (১৯৯৮) এবং (২) ফার্মেসী বিভাগ (২০১৭)।


ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে বর্তমানে ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা ১১২৬২। ২৫ জন মহিলা শিক্ষকসহ মোট শিক্ষকশিক্ষিকার সংখ্যা ৩৩৫। কর্মকর্তাকর্মচারীর সংখ্যা ৭২৬। বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীদের জন্য ৬টি আবাসিক হল আছে। ১. সাদ্দাম হোসেন হল ২.শহীদ  জিয়াউর  রহমান হল ৩.বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হল (এখানে বিদেশি ছাত্ররাও থাকেন)। ৪. লালনশাহ হল ৫. বেগম খালেদা জিয়া হল এবং ৬. বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব  হল।
প্রদত্ত ডিগ্রিসমূহ  ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে বর্তমানে প্রদত্ত ডিগ্রিসমূহ হলো: স্নাতক (সম্মান) ডিগ্রি: বিটিআইএস, বিএ, বিএসএস, বিবিএ, বিএসসি, বি.ফার্ম, বিএসসি ইঞ্জি. /বি.ইঞ্জি. স্নাতকোত্তর ডিগ্রি: এমটিআইএস, এমএ, এমএসএস, এমবিএ, এনএমএসসি, এম.ফার্ম, এমএসসি ইঞ্জি./এম.ইঞ্জি. উচ্চতর ডিগ্রি: এমফিল ও পিএইচডি। ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে বর্তমানে বিদেশী শিক্ষার্থী ভর্তির জন্য আন্তর্জাতিক ভর্তি সেল গঠিত হয়েছে। গত কয়েক বছর থেকে এর মাধ্যমে বিদেশী শিক্ষার্থীরা এ বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হচ্ছেন। বর্তমানে সার্কভুক্ত দেশসমূহ, দক্ষিণ এশীয় দেশসমূহ ও মধ্যপ্রাচ্যের দেশসমূহ বিশেষত নেপাল, ভারত, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা, মালদ্বীপ, ভুটান, সোমালিয়া, কম্বোডিয়া, আফগানিস্তান এবং ইন্দোনেশিয়া থেকে শিক্ষার্থীরা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে পারবেন।


সউদী সরকারের অর্থানুকূল্যে বিশ্ববিদ্যালয়ে বাদশাহ ফাহাদ বিন  আবদুল আজিজ কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগার প্রতিষ্ঠিত হয়। গ্রন্থাগারে বইয়ের সংখ্যা ৮১,১০০ এবং জার্নালের সংখ্যা ১৭০৭১। প্রতিটি বিভাগে বিভাগীয় গ্রন্থাগার এবং কম্পিউটার সেন্টার রয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীদের জন্য রয়েছে শরীরচর্চা ও ক্রীড়া বিভাগ, ন্যাশনাল ক্যাডেট কোর ও স্কাউটস। এছাড়া ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্র ও সাংস্কৃতিক কেন্দ্রসহ রয়েছে চিকিৎসা কেন্দ্র, স্টেডিয়াম, জিমনেসিয়াম, প্রেস, কেন্দ্রীয় মসজিদ, শহীদ মিনার, মুক্তিযুদ্ধের ভাস্কর্য, ল্যাবরেটরি স্কুল এন্ড কলেজ এবং নিজস্ব পরিবহণ ব্যবস্থা।
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে বর্তমানে (২০২২) ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা ১৫,৩৮৪ (বিদেশী ৩৮ জনসহ)। এম ফিল গবেষণারত ২৪৭ জন। পিএইচডি গবেষণারত ২৯৪ জন। এমফিল ডিগ্রিপ্রাপ্ত ৬৯৪ জন। পি.এইচডি ডিগ্রিপ্রাপ্ত ৫১০ জন। ২৫ জন মহিলা শিক্ষকসহ মোট শিক্ষক-শিক্ষিকার সংখ্যা ৩৯৪। কর্মকর্তা ৪৭৩ জন। কর্মচারির সংখ্যা ৩২৬ জন।


ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে ৩টি সমাবর্তন  অনুষ্ঠিত  হয়। প্রথম  সমাবর্তন ১৯৯৩ সালের ২০ এপ্রিল, দ্বিতীয়  সমাবর্তন ১৯৯৯ সালের ৫ নভেমতর এবং তৃতীয় সমাবর্তন ২০০২ সালের ২৮ মার্চ অনুষ্ঠিত হয়। ২০০৪ সালের ৩০ নভেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ের ২৫ বছর পূর্তিতে রজত-জয়ন্তী  উৎসব পালন  করা  হয়।
'''''আবাসিক হল''''' বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীদের জন্য ৮টি আবাসিক হল আছে। তন্মধ্যে ছাত্রদের জন্য পাঁচটি এবং ছাত্রীদের জন্য তিনটি। সেগুলো হলো- (১) সাদ্দাম হুসেন হল (১৯৮৬) আবাসিক সিট ৪৭৫টি। (২) শহীদ জিয়াউর রহমান হল (১৯৯৭) আবাসিক সিট ৪০০টি। (৩) জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হল (১৯৯৯) আবাসিক সিট ৩৬৬টি। (৪) লালন শাহ হল (২০০৫) আবাসিক সিট ৩৬৮টি। (৫) শেখ রাসেল হল (২০১৯)। (৬) খালেদা জিয়া হল (১৯৯৪) আবাসিক সিট ৩৯৮টি। (৭) বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হল, আবাসিক সিট ৪৮০টি। (৮) দেশরত্ন শেখ হাসিনা হল (২০১৩)।
[[Image:IslamicUniversityRaselHall.jpg|right|thumbnail|200px|শেখ রাসেল হল, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়]]
সউদী সরকারের অর্থানুকূল্যে বিশ্ববিদ্যালয়ে বাদশাহ ফাহাদ বিন আবদুল আজিজ কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগার প্রতিষ্ঠিত হয়। গ্রন্থাগারে বইয়ের সংখ্যা ৮১,১০০ এবং জার্নালের সংখ্যা ১৭০৭১। গ্রন্থাগারে রয়েছে 'বঙ্গবন্ধু কর্নার' ও মুক্তিযুদ্ধ কর্নার। প্রতিটি বিভাগে বিভাগীয় গ্রন্থাগার এবং কম্পিউটার সেন্টার রয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীদের জন্য রয়েছে শরীরচর্চা ও ক্রীড়া বিভাগ, ন্যাশনাল ক্যাডেট কোর ও স্কাউটস। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্র ও সাংস্কৃতিক কেন্দ্রসহ রয়েছে চিকিৎসা কেন্দ্র, স্টেডিয়াম, জিমনেসিয়াম, প্রেস, কেন্দ্রীয় মসজিদ, শহীদ মিনার, মুক্তিযুদ্ধের ভাস্কর্য, ল্যাবরেটরি স্কুল এন্ড কলেজ এবং নিজস্ব পরিবহন ব্যবস্থা। বর্তমানে ইনস্টিটিউট অফ ইসলামিক এডুকেশন অ্যান্ড রিসার্চ (আইআইআরআই)-এর অধীনে বিএড, এমএড, ডিপ্লোমা, গ্রন্থাগার ও তথ্য বিজ্ঞানে ডিপ্লোমা, চীনা ভাষায় জুনিয়র ডিপ্লোমা পরিচালিত হয়।
[[Image:IslamicUniversityCentralLibrary.jpg|left|thumbnail|200px|বাদশাহ ফাহাদ বিন আবদুল আজিজ কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগার, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়]]
ইতোমধ্যে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে ৪টি সমাবর্তন অনুষ্ঠিত হয়েছে। প্রথম সমাবর্তন ১৯৯৩ সালের ২০ এপ্রিল, দ্বিতীয় সমাবর্তন ১৯৯৯ সালের ৫ নভেম্বর, তৃতীয় সমাবর্তন ২০০২ সালের ২৮ মার্চ এবং চতুর্থ সমাবর্তন অনুষ্ঠিত হয় ২০১৮ সালের ৬ জানুয়ারি । ২০০৪ সালের ৩০ নভেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ের ২৫ বছর পূর্তিতে রজত-জয়ন্তী উৎসব পালন করা হয়।


ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মোট ৯টি জার্নাল প্রকাশিত হয়। অনুষদগুলি থেকে দ্যা ইসলামিক ইউনিভারসিটি স্টাডিজ জার্নাল,  আইআইইআর রিসার্চ জার্নাল, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় জার্নাল, আল-কুরআন এন্ড ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগ থেকে দ্যা কুরআনিক স্টাডিজ, দাওয়াহ্ এন্ড ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগ থেকে দাওয়াহ রিসার্চ র্জানাল, আল-হাদীস এন্ড ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগ থেকে হাদীস রিসার্চ জার্নাল, আরবী ভাষা ও সাহিত্য বিভাগ থেকে এরাবিক রিসার্চ জার্নাল, ইংরেজি বিভাগে থেকে ক্রিটিক এবং বাংলা বিভাগ থেকে বাংলা গবেষণা পত্রিকা নিয়মিত প্রকাশিত হয়।
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রাথমিকভাবে সকল অনুষদের জন্য একটি জার্নাল প্রকাশিত হতো। পরে পাঁচটি অনুষদের অধীন 'দ্যা ইসলামিক ইউনিভারসিটি স্টাডিজ (পার্ট এ-ই)' নামে অনুষদগুলি থেকে, আইআইইআর থেকে রিসার্চ জার্নাল এবং ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় জার্নাল প্রকাশিত হতো। বর্তমানে প্রতিটি ফ্যাকাল্টির নামে আলাদা আলাদ জার্নাল প্রকাশিত হচ্ছে। এছাড়াও কিছু কিছু বিভাগ থেকে, যেমন আল-কুরআন এন্ড ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগ থেকে দ্যা কুরআনিক স্টাডিজ, দাওয়াহ্ এন্ড ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগ থেকে দাওয়াহ রিসার্চ জার্নাল, আল-হাদীস এন্ড ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগ থেকে হাদীস রিসার্চ জার্নাল, আরবী ভাষা ও সাহিত্য বিভাগ থেকে এরাবিক রিসার্চ জার্নাল, ইংরেজি বিভাগে থেকে ক্রিটিক এবং বাংলা বিভাগ থেকে বাংলা গবেষণা পত্রিকা নিয়মিত প্রকাশিত হয়।


Islamic University (Amendment) Act, 2006 মোতাবেক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে ফাযিল (ডিগ্রী) ৩ বৎসর এবং কামিল (স্নাতকোত্তর) ২বৎসর মোট ৫ বৎসরের আলিয়া মাদ্রাসা শিক্ষা কোর্স চালু করা হয়। উক্ত অ্যাক্ট অনুসারে ১০৮৭ টি ফাযিল (স্নাতক) ও ১৯৪টি কামিল (স্নাতকোত্তর) মোট ১২৮১ টি মাদ্রাসা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত হয়।
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের সংশোধিত আইন, ২০০৬ মোতাবেক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে ফাযিল (ডিগ্রি) ৩ বছর এবং কামিল (স্নাতকোত্তর) ২ বছর মোট ৫ বছরের আলিয়া মাদ্রাসা শিক্ষা কোর্স চালু করা হয়। উক্ত অ্যাক্ট অনুসারে ১০৮৭টি ফাযিল (স্নাতক) ও ১৯৪টি কামিল (স্নাতকোত্তর) মোট ১২৮১টি মাদ্রাসা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত হয়। পরীক্ষামূলকভাবে ৫৬টি মাদ্রাসায় সর্বপ্রথম অনার্স কোর্স চালু করা হয়। ২০১৫ সালে ইসলামী আরবী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হলে ২০১৭ সাল থেকে মাদ্রাসাগুলো এ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে অধিভুক্ত হয়।


ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম ভাইস-চ্যান্সেলর হিসেবে দায়িতত  পালন  করেন প্রফেসর এ.এন.এম মমতাজ উদ্দীন চৌধুরী। এরপর প্রফেসর সিরাজুল ইসলাম, প্রফেসর মুহাম্মদ আব্দুল হামীদ, প্রফেসর ইনআম-উল হক, প্রফেসর মুহম্মদ কায়েস উদ্দীন, প্রফেসর মোঃ লুৎফর রহমান, প্রফেসর মুহাম্মদ মুস্তাফিজুর রহমান, প্রফেসর এম. রফিকুল ইসলাম এবং প্রফেসর  ফয়েজ মোহাম্মদ সিরাজুল হক ভাইস চ্যান্সেলর হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান ভাইস-চ্যান্সেলর ও প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন প্রফেসর এম আলাউদ্দীন ও প্রফেসর কামাল উদ্দীন।  [.বি.এম সাইফুল ইসলাম সিদ্দিকী]
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিষেবাগুলির মধ্যে রয়েছে- স্বাস্থ্যসেবা ও পরিবহন সেবা। ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে মেডিকেল সেন্টারে রয়েছে ১৫ জন ডাক্তার, ডেন্টাল ইউনিট, চক্ষু ইউনিট, এক্সরে বিভাগ এবং দুটি অ্যাম্বুলেন্স এবং ৫০ টি শয্যা। কুষ্টিয়া এবং ঝিনাইদহ জেলা শহর থেকে শিক্ষার্থী এবং শিক্ষক কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পরিবহনের জন্য ৩১টি ভাড়া করা বাসসহ মোট ৪৭টি বাস রয়েছে।  [আ.ব.. সাইফুল ইসলাম সিদ্দীকী]


[[en:Islamic University]]
[[en:Islamic University]]

১৪:২৯, ১৬ অক্টোবর ২০২৩ তারিখে সম্পাদিত সর্বশেষ সংস্করণ

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়  বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর কুষ্টিয়ায় প্রতিষ্ঠিত দেশের প্রথম সরকারি ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়। বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে একটি ইসলামী বিদ্যাপীঠ স্থাপনের উদ্যোগ অনেক পুরনো। ১৮৫৭ সালে প্রতিষ্ঠিত কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে মুসলমানদের শিক্ষার সুযোগ কমে যওয়ায় ১৯০৩ সালে ‘নবনূর’ পত্রিকার সম্পাদক সৈয়দ এমদাদ আলী, সৈয়দ আমীর আলী, সৈয়দ নওয়াব আলী চৌধুরী প্রমুখ মুসলমানদের জন্য একটি স্বতন্ত্র মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার দাবি করেন। ১৯১১ সালে বঙ্গভঙ্গ রদ হলে বাংলার মুসলমানগণ ১৯১২ সালে ইসলামিক স্টাডিজ অনুষদসহ ঢাকায় একটি আবাসিক মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার দাবি করেন। অনেকের বিরোধিতা সত্ত্বেও ব্রিটিশ সরকার মুসলমানদের দাবি মেনে নিয়ে ঢাকায় একটি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার ঘোষণা দেয়।

কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় কমিশন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল কমিটি প্রস্তাবিত স্বতন্ত্র ইসলামিক স্টাডিজ অনুষদ প্রতিষ্ঠার সুপারিশ অগ্রাহ্য করে শুধু ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগ প্রতিষ্ঠার সুপারিশ করে। পূর্বের প্রস্তাবনা অনুযায়ী ১৯২১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হলে এদেশের খ্যাতনামা আলিমগণ আরবী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার জন্য আবার সোচ্চার হন। ১৯১৩ সালের মার্চে বগুড়া জেলায় মওলানা মোহাম্মদ আকরম খাঁ-কে সেক্রেটারি এবং মওলানা মনিরুজ্জামান ইসলামাবাদী জয়েণ্ট সেক্রেটারি করে আঞ্জুমানে ওলামায়ে বাঙ্গালা গঠিত হয়। আরবী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠা এই সংগঠনের অন্যতম পরিকল্পনা ছিল। ১৯১৫ সালে মওলানা মনিরুজ্জামান ইসলামাবাদী সর্বপ্রথম একটি আরবী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পরিকল্পনা করেন। এতদ উদ্দেশ্যে তিনি ফান্ড গঠন করেন এবং ১৯২০ সালে ব্যক্তিগত উদ্যোগে চট্টগ্রামের পটিয়া থানার দিয়াং পাহাড়ের পাদদেশে ৬ শত বিঘা জমির ব্যবস্থা করেন। ১৯২৯ সালে কলিকাতা আলীয়া মাদ্রাসায় জমিয়তে তালাবায়ে আরাবিয়ার ছাত্ররাও ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার দাবি উত্থাপন করে। এ দাবির স্বপক্ষে মাওলানা আকরম খাঁর দৈনিক আজাদ পত্রিকা (১০ আগস্ট ১৯৬৫) সহ কয়েকটি পত্রিকা মূখ্য ভূমিকা পালন করে।

১৯৩৫ সালে মাওলানা শওকত আলী অবিভক্ত ভারতবর্ষে প্রথম বেসরকারি ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। অবিভক্ত বাংলার মুখ্যমন্ত্রী শের-ই-বাংলা এ.কে ফজলুল হক ১৯৩৯ সালে কলিকাতা আলীয়া মাদ্রাসায় পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠানে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার ঘোষণা করেন। মওলানা ইসলামবাদীর ১৯৪০ সালে জাতীয় সংসদে প্রস্তাব পেশ ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পক্ষে ইতিবাচক ভূমিকা পালন করে। ১৯৪১ সালে মাওলা বক্স কমিটি, ১৯৪৬-৪৭ সালে সৈয়দ মোয়াজ্জেম উদ্দীন হোসেন কমিটি, ১৯৪৯ সালে মওলানা আকরম খাঁ কমিটি, ১৯৫৭ সালে আতাউর রহমান খান কমিশন, ১৯৫৮ সালের এস.এম শরীফ শিক্ষা কমিশন, ১৯৬৩ সালের ড. এস.এম হোসাইন কমিশন ইসলামী আরবী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার সুপারিশ করে। এসব কমিটি ও কমিশন ১৯৬৪ সালের ২৭ সেপ্টেম্বরে পেশকৃত রিপোর্টে এ বিষয়ে সুপারিশ করে। একই বছর গভর্ণর মোনায়েম খান প্রবল জনদাবির মুখে বরিশালের কাসেমাবাদে এবং ১৯৬৫ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি চট্টগ্রামে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার ঘোষণা দেন। ১৯৭৪ সালে মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী টাঙ্গাইলের সন্তোষে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় গড়ে তোলেন।

প্রধান ফটক, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়

বাংলাদেশ সরকার ১ ডিসেম্বর ১৯৭৬ সালে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার ঘোষণা দেয়। ১৯৭৭ সালের ২১ জানুয়ারি (এসআইভি/৫-৮৮/৭৬/৬৪ঊফহ) পত্র অনুযায়ী দেশে একটি ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভাইস-চ্যান্সেলর ও বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের চেয়ারম্যান দেশের খ্যাতনামা শিক্ষাবিদ প্রফেসর ড. এম.এ বারীকে সভাপতি করে সাত সদস্য বিশিষ্ট উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন কমিটি গঠন করা হয়। ড. এম.এ বারী কমিশন ১৯৭৭ সালের ২০ অক্টোবর দেশে একটি পূর্ণাঙ্গ ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠার সুপারিশ করে রিপোর্ট পেশ করেন। রিপোর্টে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠার মূল উদ্দেশ্যসমূহের উল্লেখ ছিল। উদ্দেশ্যসমূহ হচ্ছে: (১) কলা ও বিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখায় ইসলামী শিক্ষার সমন্বয় সাধন করা। (২)নতুন আঙ্গিকে মাদরাসা শিক্ষা যুগোপযোগী করে এর উন্নতি সাধন করা। (৩) ইসলামী শিক্ষার বিভিন্ন শাখায় উচ্চ শিক্ষা ও গবেষণার ব্যবস্থা করা। (৪) দ্বিমুখী শিক্ষা পদ্ধতির বিলুপ্তি ঘটিয়ে মুসলিম সমাজে ঐক্য স্থাপন করা। (৫). ইসলামী শিক্ষা প্রবর্তনের মাধ্যমে তথাকথিত অনৈসলামিক ও ইসলামী শিক্ষার বিরোধ অবসান করা। (৬) মুসলিম মনীষী সৃষ্টির মাধ্যমে গোটা পরিবেশ ইসলামী শিক্ষার পুনর্জাগরণ করা। (৭) ইসলামী শিক্ষা এবং মানবিক ও বিজ্ঞান বিষয়ে পারদর্শী স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পর্যায়ে এমন ছাত্র তৈরি করা যারা কর্ম জীবনে উচ্চ মর্যাদার অধিকারী হতে পারবে এবং ইসলামী মূল্যবোধের প্রতি আস্থাশীল জনগণের আশা আকাঙ্খা পুরণ করতে সক্ষম হবে।

কমিটির সুপারিশে থিওলজি এন্ড ইসলামিক স্টাডিজ অনুষদ-এর অধীন (১) আল-কুরআন ওয়া উলূমুল কুরআন, (২) উলূমুত তাওহীদ ওয়াদ দা‘ওয়াহ, (৩) আল হাদীস ওয়া উলূমুল হাদীস, (৪) আশ-শরীয়াহ ওয়া উসূলুস শরীয়াহ, এবং (৫) আল ফাল সাফাহ ওয়াততাসাউফ ওয়াল আখলাক বিভাগ, মানবিক ও সমাজবিজ্ঞান অনুষদ-এর অধীন (১) আরবী ভাষা ও সাহিত্য, (২) বাংলা ভাষা ও সাহিত্য, (৩) ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি, (৪) অর্থনীতি, (৫) লোক প্রশাসন, (৬) তুলনামূলক ধর্মতত্ত্ব, (৭) ভাষাতত্ত্ব, এবং বাণিজ্য বিভাগ এবং বিজ্ঞান অনুষদের অধীন (১) পদার্থ বিজ্ঞান, (২) গণিত, (৩) রসায়ন, (৪) উদ্ভিদবিদ্যা, এবং (৫) প্রাণিবিদ্যা বিভাগ প্রতিষ্ঠার কথা উল্লেখ করা হয়। এছাড়া রিপোর্টে টিচার্স ট্রেনিং ইনস্টিটিউট, অনুবাদ ও প্রকাশনা ব্যুরো, মধ্যপ্রাচ্য অধ্যয়ন ও মুসলিম বিশ্বের ভাষা শিক্ষা ইনস্টিটিউট এবং ১টি স্কুল-মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠার কথাও উল্লেখ থাকে।

৩১ মার্চ-৮ এপ্রিল ১৯৭৭ সালে মক্কায় অর্গানাইজেশন অব ইসলামিক কান্ট্রিজ (ওআইসি)-এর উদ্যোগে অনুষ্ঠিত মুসলিম বিশ্বের রাষ্ট্রপ্রধান ও সরকার প্রধানদের এক সম্মেলনে বাংলাদেশসহ বিভিন্ন মুসলিম রাষ্ট্রে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার সুপারিশ করা হয়। এই সুপারিশের ভিত্তিতে ১৯৭৯ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি প্রফেসর এ.এন.এম. মমতাজ উদ্দীন চৌধুরীকে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার জন্য প্রকল্প পরিচালক নিয়োগ করা হয়।

২২ নভেম্বর ১৯৭৯ সালে কুষ্টিয়া শহর থেকে ২৪ কিলোমিটার দক্ষিণে কুষ্টিয়া-ঝিনাইদহ মহাসড়কের পাশে শন্তিডাঙ্গা-দুলালপুর নামক স্থানে ১৭৫ একর জমিতে শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান দেশের দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চলের বৃহত্তম শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। ১৯৮০ সালের ১৮ জুলাই সরকারি আদেশে শান্তিডাঙ্গা-দুলালপুর থেকে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় গাজীপুরের বোর্ড বাজারে স্থানান্তর করা হয়।

প্রথম একাডেমিক ভবন, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়

১৯৮০ সালের ২৭ ডিসেম্ভর জাতীয় সংসদে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় আইন (অ্যাক্ট নং ২৭, ১৯৮০) পাশ হয়। অ্যাক্টে বিশ্ববিদ্যালয়কে শিক্ষা ও প্রশাসনিক কার্যাবলি পরিচালনায় স¦ায়ত্তশাসন প্রদান হয়। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন-এর অর্থে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালিত ও নিয়ন্ত্রিত হবে। প্রধানমন্ত্রী হবেন বিশ্ববিদ্যালয়ের চ্যান্সেলর এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক দায়িত্ব পালন করবেন ভাইস চ্যান্সেলর। তিনি চ্যান্সেলর কর্তৃক মনোনীত হবেন। ১৯৮১ সালের ১ জানুয়ারি প্রফেসর এ.এন.এম মমতাজ উদ্দীন চৌধুরীকে প্রথম উপাচার্য নিয়োগ করা হয়। ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় (সংশোধনী) অর্ডিন্যান্স ১৯৮২ (৪২)-এর ৪(বি) ধারা অনুসারে বোর্ড বাজারে ৫০ একর জমি অধিগ্রহণ করা হয়। ১৯৮৩ সালের ২১ জুলাই হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ বোর্ডবাজারে আনুষ্ঠানিকভাবে দ্বিতীয় বার বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন।

১৯৮৫-৮৬ শিক্ষাবর্ষে থিওলজি এন্ড ইসলামিক স্টাডিজ অনুষদের আল-কুরআন ওয়া উলূমুল কুরআন এবং উলূমুত তাত্তহীদ ওয়াদ দা’ওয়াহ বিভাগে এবং মানবিক ও সমাজবিজ্ঞান অনুষদের হিসাব বিজ্ঞান ও ব্যবস্থাপনা বিভাগে তিনশত ছাত্র ভর্তি করা হয়। ১৯৮৬ সালের ২৮ জুন ৮ জন শিক্ষক নিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে বোর্ড বাজারে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রম শুরু হয়। কলেজ ছাত্রদের জন্য ১০০ নম্বরের আরবি ও ইসলামিয়াত এবং মাদ্রাসা ছাত্রদের জন্য ১০০ নম্বরের ইংরেজি বাধ্যতামূলক করা হয়। ১৯৮৫-৮৬ থেকে ১৯৮৭-৮৮ শিক্ষাবর্ষ পর্যন্ত প্রত্যেক বিভাগে মোট ছাত্রের ৫০% মাদ্রাসা ছাত্র ভর্তি করা হয়।

১৯৮৯ সালের ৩ জানুয়ারি মন্ত্রীসভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ১৪ ডিসেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল কার্যক্রম বন্ধ ঘোষিত হয়। ১৯৯০ সালের ২৪ ফেরুয়ারি এক আদেশে বিশ্ববিদ্যালয় গাজীপুর থেকে কুষ্টিয়া শহরে পুনরায় স্থানান্তর করা হয়। ১৯৯০ সালে বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথম মহিলা শিক্ষক নিয়োগ ও ১৯৯০-৯১ শিক্ষাবর্ষে প্রথম ছাত্রী ভর্তি করা হয়। জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে ছাত্র-ছাত্রী ভর্তি ও শিক্ষক নিয়োগের ব্যবস্থা প্রবর্তিত হয়। ১৯৯২ সাল পর্যন্ত কুষ্টিয়া শহরে পিটিআই এবং প্যারামেডিক্যাল ভবনে বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রম পরিচালিত হয়। ১ নভেম্বর ১৯৯২ সালে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় মূল ক্যাম্পাস শান্তিডাঙ্গা-দুলালপুরে নিয়ে আসা হয়। ১৯৯৭-৯৮ শিক্ষাবর্ষ থেকে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রচলিত ৩ বছরের পরিবর্তে ৪ বছরের অনার্স কোর্স এবং ২০০৬-২০০৭ শিক্ষাবর্ষ থেকে গ্রেডিং পদ্ধতি চালু করা হয়।

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য সিন্ডিকেট এবং একাডেমিক কাউন্সিলের সাহায্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ও শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করেন। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা এবং প্রশাসনিক কর্মকান্ড পরিচালনার জন্য অর্থ কমিটি, পরিকল্পনা ও উন্নয়ন কমিটি, ওয়ার্কস কমিটি, উচ্চতর শিক্ষা ও গবেষণা কমিটি, অনুষদীয় কমিটি, বিভাগীয় পরিকল্পনা কমিটি ও একাডেমিক কমিটি রয়েছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ে বর্তমানে ৮টি অনুষদের অধীনে ৩৪টি বিভাগ রয়েছে। অনুষদ ও বিভাগগুলি হচ্ছে: (ক) থিওলজি এন্ড ইসলামিক স্টাডিজ অনুষদ (১৯৮৫): (১) আল-কুরআন এন্ড ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগ (১৯৮৫), (২) দাওয়াহ্ এন্ড ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগ (১৯৮৫) এবং (৩) আল হাদিস এন্ড ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগ (১৯৯১); (খ) কলা অনুষদ (২০১৭): (১) আরবী ভাষা ও সাহিত্য বিভাগ (১৯৯০), (২) বাংলা বিভাগ (১৯৯০), (৩) ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগ (১৯৯০), (৪) ইংরেজি বিভাগ (১৯৯০), (৫) ফোকলোর স্টাডিজ (২০১৫) এবং (৬) চারুকলা বিভাগ (২০১৯); (গ) সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদ (১৯৮৫): (১) অর্থনীতি বিভাগ (১৯৮৭), (২) লোকপ্রশাসন বিভাগ (১৯৯০), (৩) রাষ্ট্রনীতি (২০১৫), (৪) উন্নয়ন অধ্যয়ন বিভাগ (২০১৭) এবং (৫) সমাজকল্যাণ বিভাগ (২০১৭); (ঘ) আইন অনুষদ (১৯৯৪) (পূর্ব নাম আল-কানুন ওয়াশ শরীয়াহ): (১) আইন বিভাগ (১৯৯০), (২) আল-ফিকহও লিগ্যাল স্টাডিজ বিভাগ (২০০৩) এবং (৩) আইন ও ভূমি ব্যাবস্থাপনা বিভাগ (২০১৫); (ঙ) ব্যবসায় প্রশাসন অনুষদ (১৯৯৫): (১) হিসাব বিজ্ঞান ও তথ্য পদ্ধতি বিভাগ (১৯৮৫), (২) ব্যবস্থাপনা বিভাগ (১৯৮৫), (৩) ফিনান্স ও ব্যাংকিং বিভাগ (২০১৫), (৪) মার্কেটিং বিভাগ (২০১৫) এবং (৫) হিউম্যান এন্ড হসপিটালিটি ম্যানেজম্যান্ট বিভাগ (২০১৭); (চ) বিজ্ঞান অনুষদ (১৯৯৪): (১) গণিত বিভাগ (২০০৪), (২) পরিসংখ্যান বিভাগ (২০০৯) এবং (৩) পরিবেশ বিজ্ঞান ও ভূগোল (২০১৭); (ছ) প্রকৌশল ও প্রযুক্তি অনুষদ (২০১৭): (১) ইলেক্ট্রিক্যাল এন্ড ইলেক্ট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ (১৯৯৫), (২) ফলিত পদার্থবিজ্ঞান, (৩) ক্যামিকেল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ (১৯৯৫), (৪) কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিভাগ (১৯৯৫), (৫) ইনফরমেশন সায়েন্স এন্ড কমিউনিকেশন ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ (১৯৯৮) এবং (৬) বায়োমেডিকেল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ (২০১৭); (জ) জৈবিক বিজ্ঞানঅনুষদ (২০১৭): (১) জৈব প্রযুক্তি ও জীনতত্ত্ব প্রকৌশল বিভাগ (১৯৯৮) এবং (২) ফার্মেসী বিভাগ (২০১৭)।

প্রদত্ত ডিগ্রিসমূহ ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে বর্তমানে প্রদত্ত ডিগ্রিসমূহ হলো: স্নাতক (সম্মান) ডিগ্রি: বিটিআইএস, বিএ, বিএসএস, বিবিএ, বিএসসি, বি.ফার্ম, বিএসসি ইঞ্জি. /বি.ইঞ্জি. স্নাতকোত্তর ডিগ্রি: এমটিআইএস, এমএ, এমএসএস, এমবিএ, এনএমএসসি, এম.ফার্ম, এমএসসি ইঞ্জি./এম.ইঞ্জি. উচ্চতর ডিগ্রি: এমফিল ও পিএইচডি। ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে বর্তমানে বিদেশী শিক্ষার্থী ভর্তির জন্য আন্তর্জাতিক ভর্তি সেল গঠিত হয়েছে। গত কয়েক বছর থেকে এর মাধ্যমে বিদেশী শিক্ষার্থীরা এ বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হচ্ছেন। বর্তমানে সার্কভুক্ত দেশসমূহ, দক্ষিণ এশীয় দেশসমূহ ও মধ্যপ্রাচ্যের দেশসমূহ বিশেষত নেপাল, ভারত, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা, মালদ্বীপ, ভুটান, সোমালিয়া, কম্বোডিয়া, আফগানিস্তান এবং ইন্দোনেশিয়া থেকে শিক্ষার্থীরা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে পারবেন।

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে বর্তমানে (২০২২) ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা ১৫,৩৮৪ (বিদেশী ৩৮ জনসহ)। এম ফিল গবেষণারত ২৪৭ জন। পিএইচডি গবেষণারত ২৯৪ জন। এমফিল ডিগ্রিপ্রাপ্ত ৬৯৪ জন। পি.এইচডি ডিগ্রিপ্রাপ্ত ৫১০ জন। ২৫ জন মহিলা শিক্ষকসহ মোট শিক্ষক-শিক্ষিকার সংখ্যা ৩৯৪। কর্মকর্তা ৪৭৩ জন। কর্মচারির সংখ্যা ৩২৬ জন।

আবাসিক হল বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীদের জন্য ৮টি আবাসিক হল আছে। তন্মধ্যে ছাত্রদের জন্য পাঁচটি এবং ছাত্রীদের জন্য তিনটি। সেগুলো হলো- (১) সাদ্দাম হুসেন হল (১৯৮৬) আবাসিক সিট ৪৭৫টি। (২) শহীদ জিয়াউর রহমান হল (১৯৯৭) আবাসিক সিট ৪০০টি। (৩) জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হল (১৯৯৯) আবাসিক সিট ৩৬৬টি। (৪) লালন শাহ হল (২০০৫) আবাসিক সিট ৩৬৮টি। (৫) শেখ রাসেল হল (২০১৯)। (৬) খালেদা জিয়া হল (১৯৯৪) আবাসিক সিট ৩৯৮টি। (৭) বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হল, আবাসিক সিট ৪৮০টি। (৮) দেশরত্ন শেখ হাসিনা হল (২০১৩)।

শেখ রাসেল হল, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়

সউদী সরকারের অর্থানুকূল্যে বিশ্ববিদ্যালয়ে বাদশাহ ফাহাদ বিন আবদুল আজিজ কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগার প্রতিষ্ঠিত হয়। গ্রন্থাগারে বইয়ের সংখ্যা ৮১,১০০ এবং জার্নালের সংখ্যা ১৭০৭১। গ্রন্থাগারে রয়েছে 'বঙ্গবন্ধু কর্নার' ও মুক্তিযুদ্ধ কর্নার। প্রতিটি বিভাগে বিভাগীয় গ্রন্থাগার এবং কম্পিউটার সেন্টার রয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীদের জন্য রয়েছে শরীরচর্চা ও ক্রীড়া বিভাগ, ন্যাশনাল ক্যাডেট কোর ও স্কাউটস। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্র ও সাংস্কৃতিক কেন্দ্রসহ রয়েছে চিকিৎসা কেন্দ্র, স্টেডিয়াম, জিমনেসিয়াম, প্রেস, কেন্দ্রীয় মসজিদ, শহীদ মিনার, মুক্তিযুদ্ধের ভাস্কর্য, ল্যাবরেটরি স্কুল এন্ড কলেজ এবং নিজস্ব পরিবহন ব্যবস্থা। বর্তমানে ইনস্টিটিউট অফ ইসলামিক এডুকেশন অ্যান্ড রিসার্চ (আইআইআরআই)-এর অধীনে বিএড, এমএড, ডিপ্লোমা, গ্রন্থাগার ও তথ্য বিজ্ঞানে ডিপ্লোমা, চীনা ভাষায় জুনিয়র ডিপ্লোমা পরিচালিত হয়।

বাদশাহ ফাহাদ বিন আবদুল আজিজ কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগার, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়

ইতোমধ্যে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে ৪টি সমাবর্তন অনুষ্ঠিত হয়েছে। প্রথম সমাবর্তন ১৯৯৩ সালের ২০ এপ্রিল, দ্বিতীয় সমাবর্তন ১৯৯৯ সালের ৫ নভেম্বর, তৃতীয় সমাবর্তন ২০০২ সালের ২৮ মার্চ এবং চতুর্থ সমাবর্তন অনুষ্ঠিত হয় ২০১৮ সালের ৬ জানুয়ারি । ২০০৪ সালের ৩০ নভেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ের ২৫ বছর পূর্তিতে রজত-জয়ন্তী উৎসব পালন করা হয়।

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রাথমিকভাবে সকল অনুষদের জন্য একটি জার্নাল প্রকাশিত হতো। পরে পাঁচটি অনুষদের অধীন 'দ্যা ইসলামিক ইউনিভারসিটি স্টাডিজ (পার্ট এ-ই)' নামে অনুষদগুলি থেকে, আইআইইআর থেকে রিসার্চ জার্নাল এবং ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় জার্নাল প্রকাশিত হতো। বর্তমানে প্রতিটি ফ্যাকাল্টির নামে আলাদা আলাদ জার্নাল প্রকাশিত হচ্ছে। এছাড়াও কিছু কিছু বিভাগ থেকে, যেমন আল-কুরআন এন্ড ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগ থেকে দ্যা কুরআনিক স্টাডিজ, দাওয়াহ্ এন্ড ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগ থেকে দাওয়াহ রিসার্চ জার্নাল, আল-হাদীস এন্ড ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগ থেকে হাদীস রিসার্চ জার্নাল, আরবী ভাষা ও সাহিত্য বিভাগ থেকে এরাবিক রিসার্চ জার্নাল, ইংরেজি বিভাগে থেকে ক্রিটিক এবং বাংলা বিভাগ থেকে বাংলা গবেষণা পত্রিকা নিয়মিত প্রকাশিত হয়।

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের সংশোধিত আইন, ২০০৬ মোতাবেক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে ফাযিল (ডিগ্রি) ৩ বছর এবং কামিল (স্নাতকোত্তর) ২ বছর মোট ৫ বছরের আলিয়া মাদ্রাসা শিক্ষা কোর্স চালু করা হয়। উক্ত অ্যাক্ট অনুসারে ১০৮৭টি ফাযিল (স্নাতক) ও ১৯৪টি কামিল (স্নাতকোত্তর) মোট ১২৮১টি মাদ্রাসা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত হয়। পরীক্ষামূলকভাবে ৫৬টি মাদ্রাসায় সর্বপ্রথম অনার্স কোর্স চালু করা হয়। ২০১৫ সালে ইসলামী আরবী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হলে ২০১৭ সাল থেকে মাদ্রাসাগুলো এ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে অধিভুক্ত হয়।

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিষেবাগুলির মধ্যে রয়েছে- স্বাস্থ্যসেবা ও পরিবহন সেবা। ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে মেডিকেল সেন্টারে রয়েছে ১৫ জন ডাক্তার, ডেন্টাল ইউনিট, চক্ষু ইউনিট, এক্সরে বিভাগ এবং দুটি অ্যাম্বুলেন্স এবং ৫০ টি শয্যা। কুষ্টিয়া এবং ঝিনাইদহ জেলা শহর থেকে শিক্ষার্থী এবং শিক্ষক কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পরিবহনের জন্য ৩১টি ভাড়া করা বাসসহ মোট ৪৭টি বাস রয়েছে। [আ.ব.ম. সাইফুল ইসলাম সিদ্দীকী]