ইন্ডিয়া অ্যাক্ট, ১৮৫৮

ইন্ডিয়া অ্যাক্ট, ১৮৫৮  ভারতে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির শাসনের অবসান ঘটায় এবং এর বদলে সরাসরি ব্রিটিশ সরকারের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠিত হয়। এটি ছিল ১৮৫৭ সালের সিপাহি বিপ্লবের প্রত্যক্ষ ফল। যদিও বিপ্লব ব্যর্থ হয়, তথাপি এটি ভারতের ঔপনিবেশিক প্রশাসনে অতি গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন আনয়নে সমর্থ হয়। ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি তার কার্যকারিতা এবং ক্ষমতা অনেক আগেই হারিয়ে ফেলেছিল। ফলে ব্রিটিশ সরকার উপলব্ধি করে যে, ব্রিটিশ ভারতীয় সরকারের ওপর পার্লামেন্টের সরাসরি নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করা প্রয়োজন। এ ধরনের আমূল পরিবর্তন খুব একটা কঠিন ছিল না, কেননা ১৭৭৩ সালের রেগুলেটিং অ্যাক্ট কার্যকর হওয়ায় কোম্পানির কাছ থেকে ক্ষমতা ধীরে ধীরে হস্তান্তরিত হচ্ছিল পার্লামেন্টের কাছে। আর পরবর্তীকালে  চার্টার অ্যাক্টগুলি ১৮৫৩ সালের মধ্যে কোম্পানিকে কেবল তার পূর্বের ছায়ায় পরিণত করে।

এভাবে বিপ্লবের অব্যবহিত পরেই পার্লামেন্ট ভারতীয় প্রশাসনের ওপর তার নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে শুরু করে। ১৮৫৮ সালের ২ আগস্ট পার্লামেন্ট ইন্ডিয়া অ্যাক্ট আইনের মাধ্যমে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির শাসনের সমাপ্তি ঘটিয়ে রাজ শাসন প্রতিষ্ঠা করে। এ আইন বোর্ড অব কন্ট্রোল এবং কোর্ট অব ডাইরেক্টর্স-এর দ্বৈত শাসনের অবসান ঘটায়।

এ আইনে ভারত সচিব ও তার সহকারী হিসেবে আরও কয়েকজন আন্ডার সেক্রেটারি নিয়োগের ক্ষমতা প্রদান করা হয়। ১৫ সদস্য বিশিষ্ট কাউন্সিল প্রশাসন ভারত সচিবের উপদেষ্টা হিসেবে কাজ করে। ভারতীয় অভিজ্ঞতা পুষ্ট ব্যক্তিবর্গকে ইন্ডিয়া কাউন্সিলে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। সদস্যদেরকে নির্দিষ্ট ক্ষমতা প্রদান করা হয় এবং ভারতীয় রাজস্বের আয়-ব্যয় নির্ধারণের জন্য তাদের মতামতের প্রয়োজন ছিল। তখন থেকে সপরিষদ ভারত সচিব ভারত শাসন পরিচালনা করতেন। এ আইন ভারত সচিব, আন্ডার সেক্রেটারিবৃন্দ, কাউন্সিল ও গভর্নর জেনারেলের কার্য ও ক্ষমতা নির্দিষ্ট করে দেয়। ভারত সচিব গভর্নর জেনারেল এবং কাউন্সিল সদস্যদের নিয়োগদানের ক্ষমতা লাভ করেন।

গভর্নর জেনারেল ছিলেন ভারতে রাজার ব্যক্তিগত প্রতিনিধি এবং তার পদবি হলো ভাইসরয়। তবে এ পদবি শুধুই একটি সম্মাননা ছাড়া আর কিছুই ছিল না।

ভাইসরয়ের কাউন্সিলে সাধারণ সদস্যদের নিয়োগের জন্য ইন্ডিয়ান কাউন্সিল সদস্যদের মতামতের প্রয়োজন ছিল। তবে ভারত সচিব জরুরি অবস্থা এবং গোপনীয় বিষয়ে নিজেই সিদ্ধান্ত নেওয়ার অধিকার সংরক্ষণ করতেন।

বাহ্যত ১৮৫৮-এর অ্যাক্ট-এর মাধ্যমে শুধুই শাসকের পরিবর্তন মনে হলেও এর দ্বারা বেশকিছু পরিবর্তন সাধিত হয়। অতঃপর ভাইসরয় এবং গভর্নর জেনারেল ছিলেন ভারত সচিবের ‘এজেন্ট’ মাত্র।  [এম. আনসার আলী]