আহমদ, রেয়াজুদ্দীন মাশহাদী

আহমদ, রেয়াজুদ্দীন মাশহাদী (১৮৫৯-১৯১৮)  ইসলামি চিন্তাবিদ, লেখক। টাঙ্গাইল জেলার রতনগঞ্জের চারান গ্রামে তাঁর জন্ম। বাংলা ও সংস্কৃত ভাষায় তিনি বিশেষ ব্যুৎপন্ন ছিলেন। ইংরেজি ও উর্দু ভাষাতেও তাঁর দখল ছিল। ১৮৮৬ সালে তিনি কলকাতার আলিয়া মাদ্রাসায় সংস্কৃত ও বাংলা ভাষার অধ্যাপক নিযুক্ত হয়ে প্রায় সাত বছর অধ্যাপনা করেন। এ সময় তিনি কলকাতার বিভিন্ন সাহিত্যিক কর্মকান্ডের সঙ্গেও যুক্ত ছিলেন। দুই খন্ডে এসলামতত্ত্ব (১৮৮৮-৮৯) প্রকাশে তাঁর উল্লেখযোগ্য অবদান ছিল। সাপ্তাহিক  সুধাকর (সেপ্টেম্বর, ১৮৮৯) প্রকাশেও তাঁর ভূমিকা ছিল। মাশহাদী ১৯০০ সালে দেলদুয়ারের জমিদার আবদুল করিম গজনবীর আমন্ত্রণে  কলকাতা ত্যাগ করে তাঁর জমিদারির ম্যানেজার পদে যোগদান করেন। তাঁর অব্যবহিত পূর্বে মীর মশাররফ হোসেন ওই পদে বহাল ছিলেন।

মাশহাদীর সাহিত্য-সংস্কৃতি চর্চার মূল প্রেরণা ছিল মুসলমানদের জাতীয় জীবনের ঐতিহ্য সংরক্ষণ ও ভারতীয় রাজনৈতিক চেতনা। তৎকালে খ্রিস্টান মিশনারিরা যখন দলে দলে মুসলমানদের খ্রিস্টধর্মে দীক্ষিত করছিল, তখন তা থেকে মুসলমানদের রক্ষার জন্য তাদের অতীত ঐতিহ্যের প্রতিফলন ঘটিয়ে তিনি সাহিত্য রচনা শুরু করেন। এই প্রেক্ষাপটে রচিত তাঁর প্রধান দুটি গ্রন্থ: সমাজ ও সংস্কারক (১৮৮৯) এবং অগ্নিকুক্কুট (১৮৯০)। গ্রন্থ দুটি ‘ফকির আবদুল্লাহ বিন এসমাইল অল কোরেশী অল হিন্দি’ ছদ্মনামে প্রকাশিত হয়েছিল। প্রথম গ্রন্থটি সৈয়দ জামালউদ্দীন আফগানীর (১৮৩৮-১৮৯৭) জীবন ও চিন্তাধারা বিষয়ক রচনা। মাশহাদীর মুক্ত চিন্তাধারা ও বলিষ্ঠ মতবাদের কারণে ইংরেজ সরকার গ্রন্থটি বাজেয়াপ্ত করে। মীর মশাররফ হোসেনের গো-জীবন (১৮৮৮) গ্রন্থকে কেন্দ্র করে যে বিতর্কের সূত্রপাত হয়, মাশহাদীর অগ্নিকুক্কুট সে বিতর্কের সূত্র ধরেই রচিত। তাঁর অন্যান্য গ্রন্থ: প্রবন্ধ কৌমুদী (১ম খন্ড, ১৮৯২) ও সুরিয়া বিজয় (১৮৯৫)। এছাড়াও সিদ্ধান্ত পঞ্জিকা নামে একটি জাতীয়  পঞ্জিকা তিনি প্রকাশ করেন। সেটি দুবছর (১২৯৮ ও ১২৯৯) টিকে ছিল। ১৯১৮ সালের ২০ সেপ্টেম্বর তাঁর মৃত্যু হয়।  [খোন্দকার সিরাজুল হক]