আহমদ, এমাজউদ্দীন: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য

("'''আহমদ, এমাজউদ্দীন''' (১৯৩২-২০২০) রাষ্ট্রবিজ্ঞানী, ঢাকা বিশ..." দিয়ে পাতা তৈরি)
 
সম্পাদনা সারাংশ নেই
১ নং লাইন: ১ নং লাইন:
'''আহমদ, এমাজউদ্দীন''' (১৯৩২-২০২০)  রাষ্ট্রবিজ্ঞানী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ও একুশে পদকপ্রাপ্ত। এমাজউদ্দীন আহমদ পশ্চিম বাংলার নদীয়া জেলার কালিংগ গ্রামে ১৯৩২ সালের ১৫ই ডিসেম্বর জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম শামসুদ্দীন আহমদ এবং মাতার নাম আলোকজান। পিতা স্কুল শিক্ষক ও মাতা গৃহিনী ছিলেন। দেশবিভাগের পর তাদের পরিবার ভারত থেকে এসে পূর্ব বাংলার চাপাইনবাবগঞ্জে স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন। ১১ ভাই-বোনের মধ্যে তাঁর স্থান ছিল তৃতীয়।
'''আহমদ, এমাজউদ্দীন''' (১৯৩২-২০২০)  রাষ্ট্রবিজ্ঞানী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ও একুশে পদকপ্রাপ্ত। এমাজউদ্দীন আহমদ পশ্চিম বাংলার নদীয়া জেলার কালিংগ গ্রামে ১৯৩২ সালের ১৫ই ডিসেম্বর জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম শামসুদ্দীন আহমদ এবং মাতার নাম আলোকজান। পিতা স্কুল শিক্ষক ও মাতা গৃহিনী ছিলেন। দেশবিভাগের পর তাদের পরিবার ভারত থেকে এসে পূর্ব বাংলার চাপাইনবাবগঞ্জে স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন। ১১ ভাই-বোনের মধ্যে তাঁর স্থান ছিল তৃতীয়।


এমাজউদ্দীন আহমদ ১৯৪৮ সালে ম্যাট্রিকুলেশন, ১৯৫০ সালে ইন্টারমেডিয়েট, ১৯৫২ বি এ এবং ১৯৫৪ সালে [[ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়|ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়]] থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে এম এ ডিগ্রি লাভ করেন। একই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তিনি ইংরেজি বিষয়েও এম এ ডিগ্রি অর্জন করেন। ১৯৭৭ সালে তিনি কানাডার কুইন্স বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করেন। তিনি শিক্ষাজীবনে কৃতিত্বের স্বাক্ষর রাখেন। বি এ পরীক্ষায় তিনি প্রথম স্থান অধিকার করেন।
[[Image:AhamedEmajuddin.jpg|right|thumbnail|400px|এমাজউদ্দীন আহমদ]]
এমাজউদ্দীন আহমদ ১৯৪৮ সালে ম্যাট্রিকুলেশন, ১৯৫০ সালে ইন্টারমেডিয়েট, ১৯৫২ বি.এ এবং ১৯৫৪ সালে [[ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়|ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়]] থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে এম.এ ডিগ্রি লাভ করেন। একই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তিনি ইংরেজি বিষয়েও এম.এ ডিগ্রি অর্জন করেন। ১৯৭৭ সালে তিনি কানাডার কুইন্স বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে পিএইচ.ডি ডিগ্রি লাভ করেন। তিনি শিক্ষাজীবনে কৃতিত্বের স্বাক্ষর রাখেন। বি.এ পরীক্ষায় তিনি প্রথম স্থান অধিকার করেন।


কর্মময় জীবনে তিনি শিক্ষকতা পেশা বেছে নেন। তিনি একজন সফল ও জনপ্রিয় শিক্ষক ছিলেন। কলেজ থেকে তাঁর শিক্ষকতা পেশা শুরু। তিনি প্রথমে প্রভাষক হিসেবে বাগেরহাটের প্রফুল্ল চন্দ্র (পিসি) কলেজে যোগ দেন। অতঃপর তিনি নীলফামারী কলেজ, চুয়াডাঙ্গা কলেজ ও রংপুর কলেজের অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৭০ সালে তিনি সিনিয়র লেকচারার হিসেবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগে যোগদান করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে তাঁর কর্মজীবনে তিনি বিভাগের চেয়ারম্যান, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর, হাজী মোহাম্মদ মোহসীন হলের প্রভোস্ট, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো-উপাচার্য এবং ১৯৯২ থেকে ১৯৯৬ পর্যন্ত উপাচার্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অবসর গ্রহণের পর তিনি University of Development Alternative (UODA) নামে একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে দীর্ঘদিন উপাচার্য হিসেবে কর্তব্যরত ছিলেন।
কর্মময় জীবনে তিনি শিক্ষকতা পেশা বেছে নেন। তিনি একজন সফল ও জনপ্রিয় শিক্ষক ছিলেন। কলেজ থেকে তাঁর শিক্ষকতা পেশা শুরু। তিনি প্রথমে প্রভাষক হিসেবে বাগেরহাটের প্রফুল্ল চন্দ্র (পি.সি) কলেজে যোগ দেন। অতঃপর তিনি নীলফামারী কলেজ, চুয়াডাঙ্গা কলেজ ও রংপুর কলেজের অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৭০ সালে তিনি সিনিয়র লেকচারার হিসেবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগে যোগদান করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে তাঁর কর্মজীবনে তিনি বিভাগের চেয়ারম্যান, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর, হাজী মোহাম্মদ মোহসীন হলের প্রভোস্ট, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো-উপাচার্য এবং ১৯৯২ থেকে ১৯৯৬ পর্যন্ত উপাচার্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অবসর গ্রহণের পর তিনি University of Development Alternative (UODA) নামে একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে দীর্ঘদিন উপাচার্য হিসেবে কর্তব্যরত ছিলেন।


শিক্ষকতা জীবনে প্রফেসর এমাজউদ্দীন আহমদ বাংলা ও ইংরেজি উভয় ভাষায় বহুসংখ্যক গ্রন্থ এবং অসংখ্য আর্টিকেল রচনা ও প্রকাশ করেন। এছাড়া তাঁর একাধিক সম্পাদনা গ্রন্থও রয়েছে। তাঁর রচিত ও সম্পাদিত গ্রন্থসমূহের মধ্যে রাষ্ট্রবিজ্ঞানের কথা, (ঢাকা ১৯৬৫); মধ্যযুগের রাষ্ট্রচিন্তা, (ঢাকা ২০০০) বাংলাদেশে সংসদীয় গণতন্ত্র ও প্রাসঙ্গিক চিন্তাভাবনা, (ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, ১৯৯২), ''Bureaucratic Elites in Segmented Economic Growth: Bangladesh and Pakistan'', (UPL 1980); ''SARC: Seeds of Harmony'', (UPL 1985), ''Military Rule and Myth of Democracy'', (UPL 1988), (ed.), ''State and Culture'', (Asiatic Society of Bangladesh 2008) বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।
শিক্ষকতা জীবনে প্রফেসর এমাজউদ্দীন আহমদ বাংলা ও ইংরেজি উভয় ভাষায় বহুসংখ্যক গ্রন্থ এবং অসংখ্য আর্টিকেল রচনা ও প্রকাশ করেন। এছাড়া তাঁর একাধিক সম্পাদনা গ্রন্থও রয়েছে। তাঁর রচিত ও সম্পাদিত গ্রন্থসমূহের মধ্যে রাষ্ট্রবিজ্ঞানের কথা, (ঢাকা ১৯৬৫); মধ্যযুগের রাষ্ট্রচিন্তা, (ঢাকা ২০০০) বাংলাদেশে সংসদীয় গণতন্ত্র ও প্রাসঙ্গিক চিন্তাভাবনা, (ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, ১৯৯২), ''Bureaucratic Elites in Segmented Economic Growth: Bangladesh and Pakistan'', (UPL 1980); ''SARC: Seeds of Harmony'', (UPL 1985), ''Military Rule and Myth of Democracy'', (UPL 1988), (ed.), ''State and Culture'', (Asiatic Society of Bangladesh 2008) বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।


অন্যান্য পেশাজীবী সংগঠন ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে প্রফেসর এমাজউদ্দীন আহমদ রাষ্ট্রবিজ্ঞান সমিতির সভাপতি, বাংলা একাডেমির জীবন-সদস্য, বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটির সভাপতি ও ফেলো এবং বিএনপি সমর্থক শত নাগরিক কমিটির আহ্বায়ক ছিলেন। একুশে পদক (১৯৯২)সহ তিনি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান/সংগঠন থেকে সম্মাননা পদক প্রাপ্ত হন।
অন্যান্য পেশাজীবী সংগঠন ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে প্রফেসর এমাজউদ্দীন আহমদ রাষ্ট্রবিজ্ঞান সমিতির সভাপতি, বাংলা একাডেমির জীবন-সদস্য, [[বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি|বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি]]র সভাপতি ও ফেলো এবং বিএনপি সমর্থক শত নাগরিক কমিটির আহ্বায়ক ছিলেন। একুশে পদক (১৯৯২)সহ তিনি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান/সংগঠন থেকে সম্মাননা পদক প্রাপ্ত হন।


২০২০ সালের ১৭ই জুলাই ৮৬ বছর বয়সে এই কৃতী শিক্ষকের জীবনাবসান ঘটে। তাঁর স্ত্রীর নাম বেগম সেলিমা আহমদ। তিনিও প্রয়াত। এ দম্পতি ৩ কন্যা ও ২ পুত্র সন্তানের জনক-জননী ছিলেন।  [হারুন-অর-রশিদ]
২০২০ সালের ১৭ই জুলাই ৮৬ বছর বয়সে এই কৃতী শিক্ষকের জীবনাবসান ঘটে। তাঁর স্ত্রীর নাম বেগম সেলিমা আহমদ। তিনিও প্রয়াত। এ দম্পতি ৩ কন্যা ও ২ পুত্র সন্তানের জনক-জননী ছিলেন।  [হারুন-অর-রশিদ]

১৫:৩০, ১১ জুলাই ২০২৩ তারিখে সংশোধিত সংস্করণ

আহমদ, এমাজউদ্দীন (১৯৩২-২০২০) রাষ্ট্রবিজ্ঞানী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ও একুশে পদকপ্রাপ্ত। এমাজউদ্দীন আহমদ পশ্চিম বাংলার নদীয়া জেলার কালিংগ গ্রামে ১৯৩২ সালের ১৫ই ডিসেম্বর জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম শামসুদ্দীন আহমদ এবং মাতার নাম আলোকজান। পিতা স্কুল শিক্ষক ও মাতা গৃহিনী ছিলেন। দেশবিভাগের পর তাদের পরিবার ভারত থেকে এসে পূর্ব বাংলার চাপাইনবাবগঞ্জে স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন। ১১ ভাই-বোনের মধ্যে তাঁর স্থান ছিল তৃতীয়।

এমাজউদ্দীন আহমদ

এমাজউদ্দীন আহমদ ১৯৪৮ সালে ম্যাট্রিকুলেশন, ১৯৫০ সালে ইন্টারমেডিয়েট, ১৯৫২ বি.এ এবং ১৯৫৪ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে এম.এ ডিগ্রি লাভ করেন। একই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তিনি ইংরেজি বিষয়েও এম.এ ডিগ্রি অর্জন করেন। ১৯৭৭ সালে তিনি কানাডার কুইন্স বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে পিএইচ.ডি ডিগ্রি লাভ করেন। তিনি শিক্ষাজীবনে কৃতিত্বের স্বাক্ষর রাখেন। বি.এ পরীক্ষায় তিনি প্রথম স্থান অধিকার করেন।

কর্মময় জীবনে তিনি শিক্ষকতা পেশা বেছে নেন। তিনি একজন সফল ও জনপ্রিয় শিক্ষক ছিলেন। কলেজ থেকে তাঁর শিক্ষকতা পেশা শুরু। তিনি প্রথমে প্রভাষক হিসেবে বাগেরহাটের প্রফুল্ল চন্দ্র (পি.সি) কলেজে যোগ দেন। অতঃপর তিনি নীলফামারী কলেজ, চুয়াডাঙ্গা কলেজ ও রংপুর কলেজের অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৭০ সালে তিনি সিনিয়র লেকচারার হিসেবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগে যোগদান করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে তাঁর কর্মজীবনে তিনি বিভাগের চেয়ারম্যান, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর, হাজী মোহাম্মদ মোহসীন হলের প্রভোস্ট, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো-উপাচার্য এবং ১৯৯২ থেকে ১৯৯৬ পর্যন্ত উপাচার্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অবসর গ্রহণের পর তিনি University of Development Alternative (UODA) নামে একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে দীর্ঘদিন উপাচার্য হিসেবে কর্তব্যরত ছিলেন।

শিক্ষকতা জীবনে প্রফেসর এমাজউদ্দীন আহমদ বাংলা ও ইংরেজি উভয় ভাষায় বহুসংখ্যক গ্রন্থ এবং অসংখ্য আর্টিকেল রচনা ও প্রকাশ করেন। এছাড়া তাঁর একাধিক সম্পাদনা গ্রন্থও রয়েছে। তাঁর রচিত ও সম্পাদিত গ্রন্থসমূহের মধ্যে রাষ্ট্রবিজ্ঞানের কথা, (ঢাকা ১৯৬৫); মধ্যযুগের রাষ্ট্রচিন্তা, (ঢাকা ২০০০) বাংলাদেশে সংসদীয় গণতন্ত্র ও প্রাসঙ্গিক চিন্তাভাবনা, (ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, ১৯৯২), Bureaucratic Elites in Segmented Economic Growth: Bangladesh and Pakistan, (UPL 1980); SARC: Seeds of Harmony, (UPL 1985), Military Rule and Myth of Democracy, (UPL 1988), (ed.), State and Culture, (Asiatic Society of Bangladesh 2008) বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।

অন্যান্য পেশাজীবী সংগঠন ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে প্রফেসর এমাজউদ্দীন আহমদ রাষ্ট্রবিজ্ঞান সমিতির সভাপতি, বাংলা একাডেমির জীবন-সদস্য, বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটির সভাপতি ও ফেলো এবং বিএনপি সমর্থক শত নাগরিক কমিটির আহ্বায়ক ছিলেন। একুশে পদক (১৯৯২)সহ তিনি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান/সংগঠন থেকে সম্মাননা পদক প্রাপ্ত হন।

২০২০ সালের ১৭ই জুলাই ৮৬ বছর বয়সে এই কৃতী শিক্ষকের জীবনাবসান ঘটে। তাঁর স্ত্রীর নাম বেগম সেলিমা আহমদ। তিনিও প্রয়াত। এ দম্পতি ৩ কন্যা ও ২ পুত্র সন্তানের জনক-জননী ছিলেন। [হারুন-অর-রশিদ]

তথ্যসূত্র পরিবার কর্তৃক সরবরাহকৃত।