আলী, এম ইন্নাস

Mukbil (আলোচনা | অবদান) কর্তৃক ১২:৫৮, ৬ অক্টোবর ২০২৩ তারিখে সংশোধিত সংস্করণ ("right|thumbnail|200px|এম ইন্নাস আলী '''আলী, এম ইন্নাস''' (১৯১৬-২০১০) শিক্ষাবিদ, তীক্ষèধী পদার্থবিদ, লেখক, মুক্তচিন্তক এবং জাতীয় অধ্যাপক। তিনি ১৯১৬ সালের ১লা সেপ্টেম্বর নেত্রকোনার..." দিয়ে পাতা তৈরি)
(পরিবর্তন) ← পূর্বের সংস্করণ | সর্বশেষ সংস্করণ (পরিবর্তন) | পরবর্তী সংস্করণ → (পরিবর্তন)
এম ইন্নাস আলী

আলী, এম ইন্নাস (১৯১৬-২০১০) শিক্ষাবিদ, তীক্ষèধী পদার্থবিদ, লেখক, মুক্তচিন্তক এবং জাতীয় অধ্যাপক। তিনি ১৯১৬ সালের ১লা সেপ্টেম্বর নেত্রকোনার বারহাট্টায় জন্মগ্রহণ করেন। এম ইন্নাস আলী ১৯৪০ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পদার্থবিদ্যায় এম.এস.সি সম্পন্ন করেন এবং ইলেকট্রনিক্স গ্রুপে প্রথম শ্রেণিতে প্রথম হন। এম.এস.সি কোর্সে তাঁর গবেষণার বিষয় ছিল ‘এটমোস্ফেরিক্স অ্যাট ঢাকা ইন মিড অ্যান্ড হাই-ফ্রিকোয়েন্সি চ্যানেল’। এছাড়াও তিনি ১৯৪৮ সালে নিউইয়র্ক ইউনিভার্সিটি থেকে ইলেক্ট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিষয়ে আরেকটি স্নাতকোত্তর (MEE) ডিগ্রি অর্জন করেন। ১৯৫৫ সালে তিনি লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে নিউক্লিয়ার ফিজিক্সে পিএইচ.ডি করেন।

পিএইচ.ডি ডিগ্রির জন্য তাঁর গবেষণার বিষয় ছিল- নিউক্লিয়ার ফিজিক্স, ইলেকট্রন ডিজাইন এবং ২৫ MeV ইলেকট্রন এক্সিলারেটর, মাইকোট্রনের নির্মাণ এবং বিভাগীয় চেয়ারম্যান অধ্যাপক (স্যার) এইচ.এস.ডাব্লিউ ম্যাসির তত্ত্বাবধানে পারমাণবিক কাঠামোতে অধ্যয়ন। তাঁর দীর্ঘ কর্মজীবনে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ইলেকট্রনিক্স ও নিউক্লিয়ার ফিজিক্সে গবেষণা করেন। এছাড়া, ইন্ডিয়ান অ্যাসোসিয়েশন ফর কাল্টিভেশন অফ সায়েন্সেস, কলকাতা; ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ সায়েন্স, ব্যাঙ্গালোর; নিউইয়র্ক বিশ্ববিদ্যালয় (যুক্তরাষ্ট্র); ইউনিভার্সিটি কলেজ, লন্ডন; এবং ব্রুক হ্যাভেন ন্যাশনাল ল্যাবরেটরি (যুক্তরাষ্ট্র)-তে গবেষণা করেন। তাঁর ১৫০টি বৈজ্ঞানিক গবেষণাকর্ম এবং ৫টি বই প্রকাশিত হয়েছে।

১৯৪০ সাল থেকে ১৯৭৩ সাল পর্যন্ত ড. আলী বিভিন্ন পদে কর্মরত ছিলেন। সেসব পদ ছিলÑ প্রভাষক, ইসলামিয়া কলেজ, কলকাতা (১৯৪০-১৯৪২); টেকনিক্যাল অফিসার, গভর্নমেন্ট টেস্ট হাউস, কলকাতা (১৯৪২-১৯৪৬); গবেষণা প্রকৌশলী, ম্যাকে রেডিও, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র (১৯৪৭-১৯৪৮); সিনিয়র প্রভাষক, রিডার, অধ্যাপক এবং পদার্থবিদ্যা বিভাগের প্রধান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (১৯৪৮-১৯৬৩)। পরবর্তীতে, তিনি ১৯৬৩ সাল থেকে ১৯৬৭ সাল পর্যন্ত পাকিস্তান আণবিক শক্তি কমিশনের সদস্য; ১৯৬৮ সাল থেকে ১৯৭২ সাল পর্যন্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞান অনুষদের ডিন এবং ১৯৭২ সাল থেকে ১৯৭৩ সাল পর্যন্ত চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস-চ্যান্সেলর ছিলেন।

ড. ইন্নাস আলী জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক বিভিন্ন পুরষ্কার ও সম্মাননায় ভূষিত হন। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলোÑ ১৮৮৬ সালে দায়েমি কমপ্লেক্স পিস অ্যাওয়ার্ড, ১৯৯১ সালে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির জন্য বাংলাদেশ ‘স্বাধীনতা পুরস্কার’, ২০০৭ সালে বাংলাদেশ একাডেমি অফ সায়েন্সেস লাইফটাইম অ্যাচিভমেন্ট ইন সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি অ্যাওয়ার্ড; এবং ২০০৭ সালে বাংলা একাডেমির সম্মানসূচক ফেলোশিপ। তিনি বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য; বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশনের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান (১৯৭৩-১৯৭৬); বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতির বিজ্ঞান উপদেষ্টা,পরিকল্পনা কমিশন-এর সদস্য (১৯৭৬-১৯৭৯), এবং জেদ্দায় কিং আব্দুল আজিজ বিশ্ববিদ্যালয় নিউক্লিয়ার ইঞ্জিনিয়ারিং-এর অধ্যাপক (১৯৭৯-১৯৮২) ছিলেন। এরপর তিনি ইএসটিসিডি ট্রাস্ট-এর প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান, এবং ইনডিপেনডেন্ট ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ (১৯৯০)-এর রেক্টর হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। প্রফেসর ইন্নাস আলী ছিলেন বাংলাদেশ একাডেমি অফ সায়েন্সেসের একজন প্রতিষ্ঠাতা ফেলো (১৯৭৩)।

তিনি ১৯৫৮ এবং ১৯৬৪ সালে জেনেভায় অনুষ্ঠিত পরমাণবিক শক্তির শান্তিপূর্ণ ব্যবহার সংক্রান্ত জাতিসংঘ সম্মেলনে পাকিস্তান প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন। তিনি ১৯৬২ এবং ১৯৬৪ সালে ইউনেস্কো সাধারণ সম্মেলনে পাকিস্তান প্রতিনিধি দলের সদস্য, ১৯৬৪ এবং ১৯৬৬ সালে আন্তর্জাতিক আণবিক শক্তি বার্ষিক সম্মেলন (IAEA)-এ দু’বার পাকিস্তান প্রতিনিধি দলের সদস্য, ১৯৬৬-১৯৬৭ সময়ে এবং ১৯৭৫-১৯৭৬ সাল দুই দফায় IAEA বোর্ড অফ গভর্নর-এর সদস্য ছিলেন। তিনি ১৯৬৫ সালে জাপানে পাকিস্তান পরমাণু শক্তি কমিশন বিশেষজ্ঞ মিশনের নেতৃত্ব দেন। তিনি ১৯৭৬ সালে ইউনেস্কোর সাধারণ সম্মেলনে বাংলাদেশের প্রতিনিধি দলের সদস্য ছিলেন। তিনি নিয়মিতভাবে ১৯৭৪, ১৯৭৫ এবং ১৯৭৬ সালে IAEA সাধারণ সম্মেলনে বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন।

তিনি অর্গানাইজেশন অফ ইসলামিক কনফারেন্স (OIC)-এর বিশেষজ্ঞ কমিটির সদস্য হিসেবে IFSTAD (১৯৭৫-১৯৭৯) প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি ১৯৭৯ সালের আগস্ট-সেপ্টেম্বর মাসে ভিয়েনায় অনুষ্ঠিত ইউনাইটেড নেশনস কনফারেন্স অন সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি ফর ডেভেলপমেন্ট (UNCED)-এর জাতিসংঘ প্রস্তুতি কমিটির বৈঠকে বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন। ১৯৭৫, ১৯৭৭, ১৯৭৮, ১৯৭৯, ১৯৯০ সাল এবং ১৯৯১ সালের অক্টোবরে বুলগেরিয়ার সোফিয়াতে অনুষ্ঠিত ICSU সাধারণ পরিষদে বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলের নেতৃত্বে পুগওয়াশ সম্মেলনে অংশগ্রহণ করেন। তিনি ১৯৯১ সালে তৃতীয় বিশ্ব বিজ্ঞান একাডেমি (TWAS)-এর ফেলো নির্বাচিত হন। অধ্যাপক আলী ১৯৮৮-১৯৯২ সাল বাংলাদেশ বিজ্ঞান একাডেমির সভাপতি ছিলেন।

ড. আলী ১৯৬০ সালে পাকিস্তান একাডেমি অফ সায়েন্সেস-এর ফেলো ছিলেন। এছাড়া, তিনি ছিলেন পাকিস্তান অ্যাসোসিয়েশন অফ সায়েন্টিস্ট অ্যান্ড সায়েন্টিফিক প্রফেশনস-এর সভাপতি (১৯৬৪-১৯৬৭); পাকিস্তান অ্যাসোসিয়েশন ফর দ্য অ্যাডভান্সমেন্ট অফ সায়েন্স-এর সভাপতি (১৯৭০); রোটারি ক্লাব অব ঢাকার সভাপতি (১৯৭০-১৯৭১); বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সায়েন্টিস্ট অ্যান্ড সায়েন্টিফিক প্রফেশন্স-এর প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি (১৯৭৩); বাংলাদেশ সোসাইটি ফর কনজারভেশন অফ নেচার অ্যান্ড এনভায়রনমেন্ট-এর ভাইস-চেয়ারম্যান (১৯৮১); এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশন-এর সভাপতি (১৯৮৭)। তিনি ১৯৯৪ সালে বাংলাদেশের জাতীয় অধ্যাপক নিযুক্ত হন।

প্রফেসর এম ইন্নাস আলী ৩রা মে ২০১০ সালে ঢাকায় মৃত্যুবরণ করেন এবং তাঁকে বনানী কবরস্থানে দাফন করা হয়। [ইয়ারুল কবীর]