আনোয়ার, গাজী মাজহারুল: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য

("'''আনোয়ার, গাজী মাজহারুল''' (১৯৪৩-২০২২) মুক্তিযোদ্ধা, গীতিকার, সুরকার, চলচ্চিত্র রচয়িতা, পরিচালক ও প্রযোজক। বহুগুণে গুণাম্বিত দেশমাতৃকার একজন কৃতীসন্তান তিনি। ১৯৪৩ সালের..." দিয়ে পাতা তৈরি)
 
সম্পাদনা সারাংশ নেই
 
৪ নং লাইন: ৪ নং লাইন:
গাজী মাজহারুল আনোয়ার কুমিল্লা জিলা স্কুল থেকে ম্যাট্রিকুলেশন, কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজ থেকে বিজ্ঞান শাখায় ইন্টারমিডিয়েট পাস করে ঢাকা মেডিকেল কলেজে ভর্তি হন। পিতার ইচ্ছা ছিল তিনি ডাক্তার হবেন। কিন্তু সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের প্রতি তাঁর সেই ছাত্রজীবন থেকেই প্রচণ্ড জোক। অতএব মেডিকেল পড়া বাদ দিয়ে তিনি জগন্নাথ কলেজে (বর্তমান জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়) ভর্তি হয়ে সেখান থেকে বাণিজ্য শাখায় বি.কম ডিগ্রি লাভ করেন।
গাজী মাজহারুল আনোয়ার কুমিল্লা জিলা স্কুল থেকে ম্যাট্রিকুলেশন, কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজ থেকে বিজ্ঞান শাখায় ইন্টারমিডিয়েট পাস করে ঢাকা মেডিকেল কলেজে ভর্তি হন। পিতার ইচ্ছা ছিল তিনি ডাক্তার হবেন। কিন্তু সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের প্রতি তাঁর সেই ছাত্রজীবন থেকেই প্রচণ্ড জোক। অতএব মেডিকেল পড়া বাদ দিয়ে তিনি জগন্নাথ কলেজে (বর্তমান জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়) ভর্তি হয়ে সেখান থেকে বাণিজ্য শাখায় বি.কম ডিগ্রি লাভ করেন।


অতঃপর শুরু হয় সাংস্কৃতিক ভূবন ঘিরে তাঁর কর্মময়জীবন। তাঁর লেখা প্রথম গান পরিবেশিত হয় ১৯৬৪ সালে রেডিও পাকিস্তান ঢাকা কেন্দ্র থেকে। গানটি ছিল ‘বুঝেছি মনের বনে রং লেগেছে’। এটি গেয়েছিলেন শিল্পী ফরিদা ইয়াসমীন। তাঁর পরিচালিত প্রথম সিনেমা ‘নান্টুঘটক’ (১৯৮২); প্রথম সিনেমার গান ‘আকাশের হাতে আছে এক রাশ নীল)’ (ছায়াছবি ‘আয়না’ ও অবশিষ্ট’, ১৯৬৭ সাল)। শিল্পী মাজহারুল আনোয়ার তাঁর ৬০ বছরের বর্ণাঢ্য জীবনে বেতার, টেলিভিশন, চলচ্চিত্রসহ অন্যান্য মাধ্যমের জন্য ২০ হাজারের অধিক গান রচনা করেন। অনেক গানের তিনি নিজে সুর দিয়েছেন। আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে প্রচারিত বিখ্যাত গান ‘জয় বাংলা বাংলার জয়’ তারই রচিত। এ গান পরিণত হয়েছিল ঐ বেতার কেন্দ্রের প্রাত্যহিক অনুষ্ঠানের ‘উদ্বোধনী সংগীতস্বরূপ’, যা রণাঙ্গনের মুক্তিযোদ্ধাদের বিপুলভাবে উজ্জীবিত করে। বিবিসি বাংলা অনুষ্ঠান কর্তৃক নির্বাচিত সর্বশ্রেষ্ঠ ২০টি গানের তালিকায় তাঁর ৩টি গান স্থান করে নেয়। তাঁর শ্রেষ্ঠ অন্যান্য গানের মধ্যে ‘আসেন আমার মোক্তার, আছেন আমার ব্যারিস্টার’, ‘একতারা তুই দেশের কথা বল রে এবার বল’, ‘একবার যেতে দে না আমার ছোট্ট সোনারগাঁয়’, ‘অনেক সাধের ময়না আমার বাঁধন কেটে যায়’, ‘বলে দাও মাটির পৃথিবী কোথা শান্তি আমার জীবনে’, ‘আমি নিজের মনে নিজে যেন’, ‘ছোট একটি গ্রাম, মধুমতি তার নাম’, ‘গানের খাতায় স্বরলিপি লিখে’, ‘শুধু গান গেয়ে পরিচয়’, ‘এই মন তোমাকে দিলাম’, ‘সাগরের নীল থেকে’ ইত্যাদি বিশেষভাবে উল্øেখযোগ্য। যেসব ছায়াছবির গানে তিনি সুর দিয়েছেন, তার মধ্যে ‘পীচ ঢালা পথ, ‘নীল আকাশের নীচে’, ‘দীপ নেভে নাই’, ‘দর্পচূর্ণ’, ‘স্বরলিপি’, ‘অবুধ মন’, ‘রংবাজ’, ‘নয়নমনি’, ‘গোলাপী এখন ট্রেনে’, ‘কখনো মেঘ কখনো বৃষ্টি’ অন্যতম। তিনি বহু চলচ্চিত্রের কাহিনী রচনা করেন। তাঁর পরিচারিত চলচ্চিত্রের সংখ্যা চল্লিশের অধিক। এর মধ্যে ‘নান্টুঘটক’, ‘শাস্তি’, ‘স্বাধীন’, ‘টিট ফর ট্যাট’, ‘ক্ষুধা’, ‘আর্তনাদ’, ‘চুড়িওয়ালা’, ‘লাল দরিয়া’, ‘এই যে দুনিয়া’ উল্লেখযোগ্য।
অতঃপর শুরু হয় সাংস্কৃতিক ভূবন ঘিরে তাঁর কর্মময়জীবন। তাঁর লেখা প্রথম গান পরিবেশিত হয় ১৯৬৪ সালে রেডিও পাকিস্তান ঢাকা কেন্দ্র থেকে। গানটি ছিল ‘বুঝেছি মনের বনে রং লেগেছে’। এটি গেয়েছিলেন শিল্পী ফরিদা ইয়াসমীন। তাঁর পরিচালিত প্রথম সিনেমা ‘নান্টুঘটক’ (১৯৮২); প্রথম সিনেমার গান ‘আকাশের হাতে আছে এক রাশ নীল)’ (ছায়াছবি ‘আয়না’ ও অবশিষ্ট’, ১৯৬৭ সাল)। শিল্পী মাজহারুল আনোয়ার তাঁর ৬০ বছরের বর্ণাঢ্য জীবনে বেতার, টেলিভিশন, চলচ্চিত্রসহ অন্যান্য মাধ্যমের জন্য ২০ হাজারের অধিক গান রচনা করেন। অনেক গানের তিনি নিজে সুর দিয়েছেন। আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে প্রচারিত বিখ্যাত গান ‘জয় বাংলা বাংলার জয়’ তারই রচিত। এ গান পরিণত হয়েছিল ঐ বেতার কেন্দ্রের প্রাত্যহিক অনুষ্ঠানের ‘উদ্বোধনী সংগীতস্বরূপ’, যা রণাঙ্গনের মুক্তিযোদ্ধাদের বিপুলভাবে উজ্জীবিত করে। বিবিসি বাংলা অনুষ্ঠান কর্তৃক নির্বাচিত সর্বশ্রেষ্ঠ ২০টি গানের তালিকায় তাঁর ৩টি গান স্থান করে নেয়। তাঁর শ্রেষ্ঠ অন্যান্য গানের মধ্যে ‘আসেন আমার মোক্তার, আছেন আমার ব্যারিস্টার’, ‘একতারা তুই দেশের কথা বল রে এবার বল’, ‘একবার যেতে দে না আমার ছোট্ট সোনারগাঁয়’, ‘অনেক সাধের ময়না আমার বাঁধন কেটে যায়’, ‘বলে দাও মাটির পৃথিবী কোথা শান্তি আমার জীবনে’, ‘আমি নিজের মনে নিজে যেন’, ‘ছোট একটি গ্রাম, মধুমতি তার নাম’, ‘গানের খাতায় স্বরলিপি লিখে’, ‘শুধু গান গেয়ে পরিচয়’, ‘এই মন তোমাকে দিলাম’, ‘সাগরের নীল থেকে’ ইত্যাদি বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। যেসব ছায়াছবির গানে তিনি সুর দিয়েছেন, তার মধ্যে ‘পীচ ঢালা পথ, ‘নীল আকাশের নীচে’, ‘দীপ নেভে নাই’, ‘দর্পচূর্ণ’, ‘স্বরলিপি’, ‘অবুধ মন’, ‘রংবাজ’, ‘নয়নমনি’, ‘গোলাপী এখন ট্রেনে’, ‘কখনো মেঘ কখনো বৃষ্টি’ অন্যতম। তিনি বহু চলচ্চিত্রের কাহিনী রচনা করেন। তাঁর পরিচারিত চলচ্চিত্রের সংখ্যা চল্লিশের অধিক। এর মধ্যে ‘নান্টুঘটক’, ‘শাস্তি’, ‘স্বাধীন’, ‘টিট ফর ট্যাট’, ‘ক্ষুধা’, ‘আর্তনাদ’, ‘চুড়িওয়ালা’, ‘লাল দরিয়া’, ‘এই যে দুনিয়া’ উল্লেখযোগ্য।


এই কীর্তিমান শিল্পী আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধ ও শিল্প-সংস্কৃতির ক্ষেত্রে অসামান্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ একুশে পদক (২০০২), স্বাধীনতা পুরস্কার (২০২১), একাধিকবার শ্রেষ্ঠ জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারসহ অসংখ্য পুরস্কারে ভূষিত হন।
এই কীর্তিমান শিল্পী আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধ ও শিল্প-সংস্কৃতির ক্ষেত্রে অসামান্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ একুশে পদক (২০০২), স্বাধীনতা পুরস্কার (২০২১), একাধিকবার শ্রেষ্ঠ জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারসহ অসংখ্য পুরস্কারে ভূষিত হন।

১৬:৫৬, ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৩ তারিখে সম্পাদিত সর্বশেষ সংস্করণ

আনোয়ার, গাজী মাজহারুল (১৯৪৩-২০২২) মুক্তিযোদ্ধা, গীতিকার, সুরকার, চলচ্চিত্র রচয়িতা, পরিচালক ও প্রযোজক। বহুগুণে গুণাম্বিত দেশমাতৃকার একজন কৃতীসন্তান তিনি। ১৯৪৩ সালের ২২শে ফেব্রুয়ারি কুমিল্লা জেলার দাউদকান্দি থানা (বর্তমান উপজেলা)-র তালেশ্বর গ্রামে তাঁর জন্ম। পিতার নাম মোজাম্মেল হোসেন এবং মাতা খোদেজা বেগম। পিতা ছিলেন পেশায় আইনজীবী অপরদিকে মাতা ছিলেন গৃহিনী।

গাজী মাজহারুল আনোয়ার

গাজী মাজহারুল আনোয়ার কুমিল্লা জিলা স্কুল থেকে ম্যাট্রিকুলেশন, কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজ থেকে বিজ্ঞান শাখায় ইন্টারমিডিয়েট পাস করে ঢাকা মেডিকেল কলেজে ভর্তি হন। পিতার ইচ্ছা ছিল তিনি ডাক্তার হবেন। কিন্তু সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের প্রতি তাঁর সেই ছাত্রজীবন থেকেই প্রচণ্ড জোক। অতএব মেডিকেল পড়া বাদ দিয়ে তিনি জগন্নাথ কলেজে (বর্তমান জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়) ভর্তি হয়ে সেখান থেকে বাণিজ্য শাখায় বি.কম ডিগ্রি লাভ করেন।

অতঃপর শুরু হয় সাংস্কৃতিক ভূবন ঘিরে তাঁর কর্মময়জীবন। তাঁর লেখা প্রথম গান পরিবেশিত হয় ১৯৬৪ সালে রেডিও পাকিস্তান ঢাকা কেন্দ্র থেকে। গানটি ছিল ‘বুঝেছি মনের বনে রং লেগেছে’। এটি গেয়েছিলেন শিল্পী ফরিদা ইয়াসমীন। তাঁর পরিচালিত প্রথম সিনেমা ‘নান্টুঘটক’ (১৯৮২); প্রথম সিনেমার গান ‘আকাশের হাতে আছে এক রাশ নীল)’ (ছায়াছবি ‘আয়না’ ও অবশিষ্ট’, ১৯৬৭ সাল)। শিল্পী মাজহারুল আনোয়ার তাঁর ৬০ বছরের বর্ণাঢ্য জীবনে বেতার, টেলিভিশন, চলচ্চিত্রসহ অন্যান্য মাধ্যমের জন্য ২০ হাজারের অধিক গান রচনা করেন। অনেক গানের তিনি নিজে সুর দিয়েছেন। আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে প্রচারিত বিখ্যাত গান ‘জয় বাংলা বাংলার জয়’ তারই রচিত। এ গান পরিণত হয়েছিল ঐ বেতার কেন্দ্রের প্রাত্যহিক অনুষ্ঠানের ‘উদ্বোধনী সংগীতস্বরূপ’, যা রণাঙ্গনের মুক্তিযোদ্ধাদের বিপুলভাবে উজ্জীবিত করে। বিবিসি বাংলা অনুষ্ঠান কর্তৃক নির্বাচিত সর্বশ্রেষ্ঠ ২০টি গানের তালিকায় তাঁর ৩টি গান স্থান করে নেয়। তাঁর শ্রেষ্ঠ অন্যান্য গানের মধ্যে ‘আসেন আমার মোক্তার, আছেন আমার ব্যারিস্টার’, ‘একতারা তুই দেশের কথা বল রে এবার বল’, ‘একবার যেতে দে না আমার ছোট্ট সোনারগাঁয়’, ‘অনেক সাধের ময়না আমার বাঁধন কেটে যায়’, ‘বলে দাও মাটির পৃথিবী কোথা শান্তি আমার জীবনে’, ‘আমি নিজের মনে নিজে যেন’, ‘ছোট একটি গ্রাম, মধুমতি তার নাম’, ‘গানের খাতায় স্বরলিপি লিখে’, ‘শুধু গান গেয়ে পরিচয়’, ‘এই মন তোমাকে দিলাম’, ‘সাগরের নীল থেকে’ ইত্যাদি বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। যেসব ছায়াছবির গানে তিনি সুর দিয়েছেন, তার মধ্যে ‘পীচ ঢালা পথ, ‘নীল আকাশের নীচে’, ‘দীপ নেভে নাই’, ‘দর্পচূর্ণ’, ‘স্বরলিপি’, ‘অবুধ মন’, ‘রংবাজ’, ‘নয়নমনি’, ‘গোলাপী এখন ট্রেনে’, ‘কখনো মেঘ কখনো বৃষ্টি’ অন্যতম। তিনি বহু চলচ্চিত্রের কাহিনী রচনা করেন। তাঁর পরিচারিত চলচ্চিত্রের সংখ্যা চল্লিশের অধিক। এর মধ্যে ‘নান্টুঘটক’, ‘শাস্তি’, ‘স্বাধীন’, ‘টিট ফর ট্যাট’, ‘ক্ষুধা’, ‘আর্তনাদ’, ‘চুড়িওয়ালা’, ‘লাল দরিয়া’, ‘এই যে দুনিয়া’ উল্লেখযোগ্য।

এই কীর্তিমান শিল্পী আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধ ও শিল্প-সংস্কৃতির ক্ষেত্রে অসামান্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ একুশে পদক (২০০২), স্বাধীনতা পুরস্কার (২০২১), একাধিকবার শ্রেষ্ঠ জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারসহ অসংখ্য পুরস্কারে ভূষিত হন।

১৯৭২ সালে তিনি জোহরা গাজীর সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। এ দম্পত্তির এক পুত্র ও এক কন্যা সন্তান রয়েছে। ২০২২ সালের ৪ঠা সেপ্টেম্বর ৭৯ বছর বয়সে দেশবরেণ্য শিল্পী গাজী মাজহারুল আনোয়ার মৃত্যুবরণ করেন। তাঁর মরদেহ বনানী কবরস্থানে সমাহিত করা হয়। [হারুন-অর-রশিদ]