অ্যাসোসিয়েশন ফর দি অ্যাডভান্সমেন্ট অব সায়েন্টিফিক অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিয়াল এডুকেশন অব...

অ্যাসোসিয়েশন ফর দি অ্যাডভান্সমেন্ট অব সায়েন্টিফিক অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিয়াল এডুকেশন অব ইন্ডিয়ান নামক সংগঠনটি স্বদেশী আন্দোলনের সময় বৈজ্ঞানিক এবং শিল্পসংক্রান্ত শিক্ষা প্রচারের উদ্দেশ্যে গঠিত হয়। যে উদ্দেশ্য নিয়ে এ সংগঠন গঠিত হয়েছিল তার সঙ্গে ইন্ডিয়ান ইন্ডাস্ট্রিয়াল অ্যাসোসিয়েশন-এর সাদৃশ্য থাকলেও অ্যাসোসিয়েশন ফর দি অ্যাডভান্সমেন্ট অব সায়েন্টিফিক অ্যান্ড ইন্ডাস্টিয়াল এডুকেশন অব ইন্ডিয়ানস-এর দৃষ্টিভঙ্গি এবং পরিসর ব্যাপকতর ছিল। এ কারণে এটি অধিকতর সাফল্যলাভ করে।

চন্দ্রমাধব ঘোষের আইনজীবী পুত্র যোগেন্দ্রচন্দ্র ঘোষ এবং অন্যান্যরা ১৯০৪ সালের মার্চ মাসে এ সংগঠন প্রতিষ্ঠা করেন। এ সংগঠন উপলব্ধি করে যে, শিল্পসংক্রান্ত প্রযুক্তিতে প্রশিক্ষণ এমন দেশসমূহ থেকে গ্রহণ করা উচিত যেখানে ইতোমধ্যেই প্রযুক্তিগত স্তর অধিকতর উচ্চমাত্রায় অর্জিত হয়েছে। সুতরাং ইউরোপ, আমেরিকা এবং জাপানে প্রযুক্তিগত প্রশিক্ষণে ভারতীয় ছাত্রদের বৃত্তি প্রদানের উদ্দেশ্যে অনুদান এবং সর্বসাধারণের কাছ থেকে চাঁদা আদায়ের মাধ্যমে তহবিল গঠন করা হয়। সংগঠনের সভাপতি নরেন্দ্রনাথ সেন তাঁর কেন্দ্রীয় কাউন্সিলের রিপোর্টে উল্লেখ করেন যে, প্রতি বছর এক লক্ষ টাকার তহবিল সংগ্রহই মূলত এর উদ্দেশ্য ছিল। এ তহবিল থেকে বিদেশি বৃত্তির জন্য ৩৫,০০০ টাকা, প্রশিক্ষণ শেষে বিদেশ থেকে আগত ভারতীয় বিশেষজ্ঞদেরকে ঋণ হিসেবে ৪০,০০০ টাকা, এবং কলকাতায় বেসরকারি কলেজ ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য একটি কেন্দ্রীয় গবেষণাগার স্থাপনকল্পে ২৫,০০০ টাকা ব্যয় করা হবে। অবশ্য গবেষণাগার প্রতিষ্ঠার পরিকল্পনাটি সম্ভবত কখনওই বাস্তবায়িত হয় নি। স্যার ড্যানিয়েল হ্যামিলটনের মতো ইউরোপীয়গণ ছাত্রদের বিনা ভাড়ায় বিদেশে যাতায়াতের সুবিধা প্রদানের মাধ্যমে সংগঠনের পৃষ্ঠপোষকতা করেন।

সংগঠনের অধিকাংশ সদস্য মধ্যপন্থি হলেও তারা এমন সব কর্মীর প্রবল আগ্রহ ও উৎসাহ-উদ্দীপনার ওপর নির্ভরশীল ছিলেন যারা পরবর্তীকালে সন্ত্রাসবাদী আন্দোলনের বিখ্যাত ব্যক্তিতে পরিণত হন। এঁদের মধ্যে ছিলেন এ.সি ব্যানার্জী, এ.কে ঘোষ, বি.এস চট্টোপাধ্যায়, চিত্তরঞ্জন দাস এবং এস.কে মল্লিক। সংগঠনের সহকারী সম্পাদক এ.সি ব্যানার্জী সাংগঠনিক কাজে বিভিন্ন জেলা ভ্রমণ করেন এবং ১৯০৪ সালে ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, মেদিনীপুর, রানাঘাট, কৃষ্ণনগর, কুমিল্লা এবং নবদ্বীপের সভায় বক্তব্য রাখেন। সংগঠনের পক্ষ থেকে বিপিনচন্দ্র পাল এবং ভুবনমোহন গুপ্ত বিভিন্ন জেলা ভ্রমণ করেন।

সদস্য হওয়ার জন্য এ সংগঠন চার আনা ফি নির্ধারণ করে যা সংগঠনের অর্থনৈতিক ভিত্তিকে আরও সুদৃঢ় করে এবং বাংলার বুদ্ধিজীবী মহলের দৃষ্টি আকর্ষণ করে। এক বছরের মধ্যে বাংলার বিভিন্ন জেলায় এর ৪৮টি কমিটি গঠিত হয়। এখানে বিশেষভাবে উল্লেখ্য যে, বিক্রমপুরের গ্রামের একটি স্কুল কমিটি এ সংগঠনকে সাহায্য করার জন্য প্রতি ছাত্রের স্কুলের বেতন প্রতি মাসে এক ফার্দিং বৃদ্ধি করে। জানা যায় যে, কেবল বরিশালেই এক হাজারেরও বেশি সদস্য সংগৃহীত হয় এবং বহুসংখ্যক গ্রাম কমিটি গঠিত হয়।

এ সংগঠনের বৃত্তি নিয়ে অনেক ছাত্র বিদেশে প্রশিক্ষণ শেষ করে ফিরে এসে বাংলায় বহু শিল্প কলকারখানা স্থাপন করেন। এতে সংগঠনের সাফল্যের ব্যাপকতার চিত্র সুস্পষ্ট হয়ে ওঠে। টোকিও-র হায়ার পলিটেকনিক এবং জার্মানির ড. হারম্যান সিগারের গবেষণাগারে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ছাত্র সত্যসুন্দর দেব ক্যালকাটা পোটারি ওয়ার্কস-এর প্রধান স্থপতি ছিলেন। এ.পি ঘোষ এবং পি.সি রায় কলকাতায় বন্দে মাতরম ম্যাচ ফ্যাক্টরি স্থাপনে সাহায্য করেন; কে.সি দাস এবং আর.এন সেন ক্যালকাটা কেমিক্যালস প্রতিষ্ঠা করেন; সুরেন্দ্রমোহন বসু ‘ডাকব্যাক’ খ্যাত বেঙ্গল ওয়াটারপ্রুফ ওয়ার্কস প্রতিষ্ঠা করেন।

১৯০৭-০৮ থেকে এ সংগঠনের আর্থিক অবস্থার অবনতি লক্ষ্য করা যায়। ইতোমধ্যে বেঙ্গল ন্যাশনাল কলেজ ও বেঙ্গল টেকনিক্যাল ইনস্টিটিউট কারিগরি শিক্ষার দায়িত্বভার গ্রহণ করে।  [অমিত ভট্টাচার্য]