অ্যান্টিসেপটিক

অ্যান্টিসেপটিক (Antiseptic) বা জীবাণুনাশক হলো এমন কোনো রাসায়নিক পদার্থ যা একটি নির্দিষ্ট ঘনত্বে ব্যবহার করে কোনো জীবিত অথবা জড় বস্তুর পৃষ্ঠ থেকে কার্যকর জীবাণুর সংখ্যা কমিয়ে দিয়ে সংক্রমণের পুনরুৎপাদন বন্ধ করা হয়। ডাক্তার জোসেফ লিস্টার ১৮৬৭ সালে প্রথম অ্যান্টিসেপটিক আবিষ্কার করেন। তিনি তার অস্ত্রোপচারের সরঞ্জাম এবং একই সাথে ছোট ক্ষত পরিষ্কার করতে কার্বলিক অ্যাসিড ব্যবহার করতেন।

অ্যান্টিসেপটিককে তাদের কর্মপদ্ধতির উপর ভিত্তি করে কয়েকটি ধরনে শ্রেণীবদ্ধ করা হয়েছে। যেমন: ফেনল এবং এর ডেরিভেটিভস: ফেনল ব্যাকটেরিয়া প্রোটিনকে বিকৃত করে ফেলে এবং এইভাবে অণুজীবকে মেরে ফেলে। ফেনলের অন্যান্য ডেরিভেটিভ যেমন ক্রেসোল, কোলোরোক্সিলেনলও অ্যান্টিসেপটিক হিসাবে ব্যবহৃত হয়। পারঅক্সাইড এবং পারম্যাঙ্গানেট: এরা মুক্ত মূলক গঠন করে যা ব্যাকটেরিয়ার কোষ উপাদানগুলোকে ধ্বংস করে। এই অ্যান্টিসেপটিকগুলো মুখের ভেতরের জীবাণু, দেহগহ্বর এবং ত্বকের ক্ষত জীবাণুমুক্ত করার জন্য ব্যবহৃত হয়। ক্লোরহেক্সিডিন এবং অন্যান্য ডিগুয়ানাইডস: এগুলি ব্যাকটেরিয়া কোষের ঝিল্লিকে ভেঙ্গে দেয়। এদের অস্ত্রোপচারের যন্ত্র জীবাণুমুক্ত করতে, মুখের ভেতরের জীবাণু পরিস্কার করতে এবং সাধারণ ত্বকের অ্যান্টিসেপটিক হিসাবে ব্যবহার করা হয়। পোভিডোন-আয়োডিন: এটি আয়োডোপোভিডোন নামেও পরিচিত। পোভিডোন, হাইড্রোজেন আয়োডাইড এবং আয়োডিনের রাসায়নিক মিশ্রণ দিয়ে তৈরি পোভিডোন-আয়োডিন, যা অস্ত্রোপচারের আগে এবং পরে ত্বক জীবাণুমুক্ত করার জন্য ব্যবহৃত হয়।

আমাদের দৈনন্দিন জীবনে এবং চিকিৎসা ব্যবস্থায় অ্যান্টিসেপটিক-এর বিবিধ প্রয়োগ রয়েছে। সেগুলো হলো হাত ধোয়া: সহজে প্রয়োগের জন্য অ্যান্টিসেপটিক হ্যান্ড রাব এবং জেল আকারে পাওয়া যায়। ত্বক এবং শ্লেষ্মা ঝিল্লিকে জীবাণুমুক্ত করা: ক্যাথেটার ঢোকানোর আগে অ্যান্টিসেপটিক সাধারণত ত্বক এবং মূত্রনালী, মূত্রাশয়, যোনিপথ এলাকা পরিষ্কার করার জন্য প্রয়োগ করা হয়। অস্ত্রোপচারের যন্ত্রপাতি এবং হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা জীবাণুমুক্ত করা: হাসপাতালের মেঝে, আসবাবপত্র এবং অস্ত্রোপচারের সরঞ্জাম জীবাণুমুক্ত করার জন্য অ্যান্টিসেপটিক ব্যপকভাবে ব্যবহৃত হয়। ত্বকের সংক্রমণের চিকিৎসা: পোড়া, ক্ষত এবং ছোটখাটো কাটার ক্ষেত্রে অ্যান্টিসেপটিক যেমন হাইড্রোজেন পারক্সাইড এবং রাবিং অ্যালকোহল সংক্রমণের সম্ভাবনা কমাতে ব্যবহার করা হয়। সাইনাস সংক্রমণের চিকিৎসা: সাইনাস সংক্রমণের চিকিৎসায় অনুনাসিক গহ্বর জীবানুমুক্ত করার জন্য আয়োডিন দ্রবণ একটি অ্যান্টিসেপটিক হিসাবে ব্যবহৃত হয়।

অ্যান্টিসেপটিক সতর্কতার সাথে ব্যবহার করা জরুরি কারণ শক্তিশালী অ্যান্টিসেপটিক সঠিক অনুপাতে মিশ্রিত না থাকলে ত্বকে জ্বালাপোড়া বা ত্বক পুড়ে যেতে পারে। এছাড়াও চোখের আঘাত, গুরুতর ক্ষত এবং পোড়ার স্থানে অ্যান্টিসেপটিক ব্যবহার না করাই উত্তম। [মোহাম্মদ রিয়াজুল ইসলাম]