অমরকোষ

অমরকোষ  অমর বা অমরসিংহ প্রণীত প্রসিদ্ধ সংস্কৃত অভিধান। পন্ডিতদের মতে, অমরসিংহের জন্ম হয় ছয় শতকের মধ্যপর্বে। তিনি উজ্জয়িনীর মহারাজা বিক্রমাদিত্যের রাজসভার নবরত্নের অন্যতম ছিলেন। তাঁর ধর্ম-অনুসরণ নিয়ে মতভেদ আছে। কারও মতে, তিনি বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী ছিলেন, কারও মতে জৈন।

অমরসিংহের কোষগ্রন্থটি তখনকার একটা বড় অভাব মিটিয়েছিল। সেজন্য তিনি ‘নবরত্নমালা’র অন্যতম রত্ন হিসেবে বিক্রমাদিত্যের ‘কীর্তিগাথা’য় যুক্ত হয়ে আছেন।

অমরকোষ সংস্কৃত ভাষার প্রাচীন এবং সবচেয়ে প্রসিদ্ধ শব্দকোষ। এ কোষগ্রন্থের প্রকৃত নাম ‘নামলিঙ্গানুশাসন’ হলেও এটি অমরকোষ নামেই বিখ্যাত। এটি প্রচলিত অর্থে অভিধান নয়। এর প্রতিশব্দ কোষ, লিঙ্গানুসারে সাজানো। সরল পদ্যে এক হাজার পাঁচশ শ্লোকে রচিত। লিঙ্গ ভট্ট (দশটীকা), সুভূতিচন্দ্র (কামধেনু টীকা), সর্বানন্দ (টীকাসর্বস্ব, ১১৫৯-৬০), ক্ষীরস্বামী প্রমুখ পন্ডিত অমরকোষ-এর টীকা লিখেছেন।  হেনরি টমাস কোলব্রুক (Henry Thamas Colebrooke, 1775-1837) কলকাতা থেকে ১৮০৮ ও ১৮২৫ সালে অমরকোষ-এর একটি সংস্করণ প্রকাশ করেন। বোম্বাই থেকে চিন্তামণি শাস্ত্রী থাট্টে ও কিয়েন হর্ন ১৮৭৭ সালে মহেশ্বর-ভাষ্যসহ অপর একটি সংস্করণ প্রকাশ করেন।

এ অভিধান ‘ত্রিকান্ড’ বা ‘ত্রিকান্ডী’ নামেও অভিহিত। কারণ এটি তিন কান্ডে বা খন্ডে বিভক্ত। পুরুষোত্তম (১১শতক)-এর ‘ত্রিকান্ডশেষ’ (১০৫০ শ্লোক) অমরকোষ-এর পরিশিষ্ট হিসেবে, অমরকোষ-এ নেই এমন শব্দ সঙ্কলিত হয়েছে। উনিশ শতকের পূর্ব পর্যন্ত সংস্কৃত ভাষার সব অভিধান অমরকোষ-এর অনুসরণে রচিত হয়।

প্রসন্নকুমার শাস্ত্রী অমরকোষ-এর বাংলা অনুবাদ করার পর, জীবানন্দ বিদ্যাসাগর, ত্রৈলোক্যনাথ দত্ত, ভুবনচন্দ্র বসাক, হরগোবিন্দ রক্ষিত প্রমুখ এর নানা সংস্করণ প্রকাশ করেন। অমরকোষ ইংরেজি, ফার্সি, জার্মান প্রভৃতি ইউরোপীয় ভাষায় অনূদিত হয়েছে। [মুহম্মদ সাইফুল ইসলাম]