হুমায়ুন

Mukbil (আলোচনা | অবদান) কর্তৃক ১৫:০৭, ৩০ আগস্ট ২০২১ তারিখে সংশোধিত সংস্করণ
(পরিবর্তন) ← পূর্বের সংস্করণ | সর্বশেষ সংস্করণ (পরিবর্তন) | পরবর্তী সংস্করণ → (পরিবর্তন)
হুমায়ুন

হুমায়ুন (১৫৩০-১৫৫৬)  মুগল সম্রাট  বাবরের জ্যেষ্ঠ পুত্র। ১৫৩০ খ্রিস্টাব্দে পিতার উত্তরাধিকারী হিসেবে দিল্লির সিংহাসনে আরোহণ করেন। গুজরাটের সুলতান বাহাদুর শাহের সঙ্গে হুমায়ুন প্রথম থেকেই সংঘর্ষে লিপ্ত ছিলেন এবং পূর্বদিকে তাঁর জন্য বড় একটি বিপদ ক্রমেই ঘনীভূত হচ্ছিল। এসময়ে উদীয়মান আফগান নেতা শেরখান পূর্বাঞ্চলে শক্তিশালী হয়ে উঠছিলেন। তিনি ১৫৩৪ খ্রিস্টাব্দে সুরজগড়ের যুদ্ধে বিহারের জালাল খান লোহানী এবং বাংলার মাহমুদ শাহের যৌথ বাহিনীকে পরাজিত করে বিহারের সর্বময় কর্তৃত্বের অধিকারী হন।

শেরখান গৌড় অধিকার করেন এবং সুলতান মাহমুদ শাহকে বিপুল পরিমাণ কর প্রদানে বাধ্য করেন। শেরখানের উচ্চাভিলাষী পরিকল্পনা হুমায়ুনকে বিশেষভাবে উদ্বিগ্ন করে তোলে। এ কারণে তিনি পূর্ব দিকে অগ্রসর হয়ে চুনার অধিকার করেন। ইতোমধ্যে শেরখানের হাতে গৌড়ের পতন ঘটে (১৫৩৮ খ্রি)। বিতাড়িত সুলতান মাহমুদ শাহের অনুরোধে সম্রাট হুমায়ুন দ্রুত গৌড়ের দিকে অগ্রসর হন। শেরখান হুমায়ূনকে বাধা দেননি। মোটামুটিভাবে কোন বাধার সম্মুখীন না হয়েই হুমায়ূন গৌড়ে প্রবেশ করেন। সম্রাট হুমায়ুন বাংলার রাজধানীর নতুন নামকরণ করেন ‘জান্নাতাবাদ’ এবং হুমায়ূন এখানে ছয়মাস অবস্থান করেন।

এদিকে শেরখান বিহার পুনরুদ্ধার করেন এবং বেনারস ও কনৌজ পর্যন্ত এলাকা দখল করে নেন। তিনি সম্রাটের সঙ্গে সব ধরনের যোগাযোগ বন্ধ করে দেন, শক্তি সঞ্চয় করতে থাকেন এবং রাজধানীতে তাঁর পুনরাগমনে বাধা দিতে সতর্ক অবস্থান গ্রহণ করেন। গৌড়ে জাহাঙ্গীর কুলী খানের অধীনে পাঁচ হাজার সৈন্যের এক বাহিনী রেখে হুমায়ুন পশ্চিমের দিকে এগুতে শুরু করেন এবং ১৫৩৯ খ্রিস্টাব্দে বক্সার-এর নিকটবর্তী চৌসা নামক স্থানে পৌঁছেন।

শেরখানের সৈন্যবাহিনী মুগলদেরকে অতর্কিতে আক্রমণ করলে মুগল বাহিনী শোচনীয়ভাবে পরাজিত হয়। চৌসার যুদ্ধে শেরখান বিজয় লাভ করে নিজেকে একজন স্বাধীন ও র্সাবভৌম ক্ষমতার অধিকারী শাসক হিসেবে ঘোষণা দেন। এসময় তিনি  শেরশাহ উপাধি ধারণ করেন। চৌসার যুদ্ধের পরপরই শেরশাহ জাহাঙ্গীর কুলী খানকে পরাজিত করেন এবং বাংলা দখল করে নেন।

চৌসার যুদ্ধে পরাজয়ের পর হুমায়ুন শেরশাহের সঙ্গে চূড়ান্ত শক্তি পরীক্ষায় অবতীর্ণ হওয়ার প্রস্ত্ততি নিতে শুরু করেন। কিন্তু ১৫৪০ খ্রিস্টাব্দে কনৌজের যুদ্ধেও পরাজিত হওয়ার কারণে একদিকে হুমায়ুনকে সিংহাসন ত্যাগ করতে হয় এবং অন্যদিকে আফগান সালতানাত পুনরুদ্ধারে শেরশাহ সমর্থ হন। কনৌজের যুদ্ধের পর হুমায়ুন প্রায় ১৫ বছর গৃহহীন অবস্থায় যাযাবরের মতো জীবন যাপন করেন। ১৫৪২ খ্রিস্টাব্দে অমরকোটে হুমায়ুনের পুত্র  আকবরের জন্ম হয়। এরপর হুমায়ুন দ্রুত পারস্যের দিকে অগ্রসর হন। পারস্যের শাহ তামাস্প (Shah Tamasp) হুমায়ুনকে আন্তরিকভাবে গ্রহণ করেন এবং শত্রু মনোভাবাপন্ন ভাইদের হাত থেকে তাঁকে কাবুল ও কান্দাহার পুনরুদ্ধারে সাহায্য করেন। হুমায়ুন সরহিন্দে সিকান্দার শূর-এর নেতৃত্বাধীন আফগান বাহিনীকে পরাজিত করেন এবং  ১৫৫৬ খ্রিস্টাব্দে দিলি­ ও আগ্রা পুনর্দখল করেন। কিন্তু নিজের সাম্রাজ্যসীমা পুনরায় বৃদ্ধি এবং এটিকে সংহত করার মতো দীর্ঘ সময় তিনি বেঁচে থাকেননি। ১৫৫৬ খ্রিস্টাব্দের ২৭ জানুয়ারি দিল্লিতে গ্রন্থাগারের সিঁড়ি থেকে পড়ে গিয়ে হুমায়ুনের মৃত্যু ঘটে।  [কে.এম করিম]