অজৈব নিয়ামক

Mukbil (আলোচনা | অবদান) কর্তৃক ০৮:৩৫, ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ তারিখে সংশোধিত সংস্করণ

অজৈব নিয়ামক (Abiotic Stress) গাছপালা শেকড় দ্বারা মাটির সাথে আবদ্ধ থাকে বলে পরিবেশগত বিপর্যয় দ্বারা ব্যাপক ভাবে প্রভাবিত হয়। যে পরিস্থিতি উদ্ভিদের বৃদ্ধি এবং বিকাশের পাশাপাশি ফুল, ফল বা শস্যের উৎপাদনশীলতাকে নেতিবাচক ভাবে প্রভাবিত করে, সেই পরিস্থিতিকে পরিবেশগত বিপর্যয় হিসেবে সংজ্ঞায়িত করা যায়। উদ্ভিদের বৃদ্ধিকালীন সময়ে যদি পরিবেশগত কোনো নিয়ামক তাদের পারিপার্শ্বিক পরিবেশের ভৌত রাসায়নিক পরিবর্তন ঘটায়, তখন তাকে বলা হয় ‘অজৈব নিয়ামকের প্রভাব’ বা ‘অ্যাবায়োটিক স্ট্রেস’। অ্যাবায়োটিক স্ট্রেসের মধ্যে রয়েছে অতিরিক্ত তাপ বা ঠান্ডা, লবণাক্ত মাটি, খরা, বন্যা, খনিজ ঘাটতি/আধিক্য এবং অপর্যাপ্ত বা অত্যধিক আলো। এমনকি ওজোনও উদ্ভিদের জন্য বিষাক্ত। উদ্ভিদের উপর অ্যাবায়োটিক স্ট্রেসের প্রভাব কতটুকু প্রবল হবে তা নির্ভর করে উদ্ভিদের বৃদ্ধিকালীন পর্যায়, স্ট্রেসের সময়কাল, প্রকৃতি এবং প্রকারের ওপর। স্ট্রেসের ফলে উদ্ভিদের বিভিন্ন প্রতিক্রিয়ার মধ্যে রয়েছে তার জিন প্রকাশে ভিন্নতা, কোষীয় এবং শারীরবৃত্তীয় বিপাকের পরিবর্তন। কোনো কোনো স্ট্রেসের ক্ষেত্রে উদ্ভিদ সরাসরি প্রতিক্রিয়া দেখায় (যেমন: খরার সময় পানির অভাবজনিত প্রতিক্রিয়া)। আবার কোনো ক্ষেত্রে প্রতিক্রিয়া পরোক্ষ হয় (যেমন: দীর্ঘ দিন কোনো স্ট্রেসের কবলে থাকায় কোষঝিল্লির অখণ্ডতা হারানো)। স্ট্রেসের তীব্রতার হেরফেরের প্রভাবে ফসলের উৎপাদনশীলতা ৪০-৫০% পর্যন্ত হ্রাস পেয়ে থাকে। প্রচলিত প্রজনন পদ্ধতি বা জৈব প্রযুক্তিগত কৌশলের সফল প্রয়োগ চাপ সহনশীল ফসল উৎপাদনে সহায়ক হতে পারে, যা জলবায়ু পরিবর্তনের পাশাপাশি বিশ্ব জনসংখ্যা বৃদ্ধিজনিত সমস্যা মোকাবেলায় অত্যন্ত জরুরি পদক্ষেপ। তবে যে কোনো ফসল উন্নয়ন কর্মসূচি বাস্তবায়নের জন্য অভীষ্ট চাপ সহনশীল বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন দাতা উদ্ভিদের প্রয়োজন হয়। এই সকল দাতা উদ্ভিদের উৎস হিসেবে চিরাচরিত দেশীয় উদ্ভিদের জাত (যেগুলো যুগ যুগ ধরে প্রতিকূল পরিবেশের সাথে লড়াই করে টিকে আছে এবং কালানুক্রমে প্রতিকূলতার সাথে খাপ খাইয়ে নিয়েছে) ব্যবহার করা যেতে পারে। এই পরিকল্পনা সুস্পষ্টভাবেই জীব বৈচিত্র্য সংরক্ষণের প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে ধারণা দেয়। যার ফলে, জীব বৈচিত্র্য সংরক্ষণ প্রক্রিয়া হিসেবে বীজ/জিন ব্যাংকে প্রয়োজনীয় বৈশিষ্ট্য সম্পন্ন দাতা উদ্ভিদের বীজ সংগ্রহ করে তা সংরক্ষণ করা হয়ে থাকে। বর্তমানে, সিজিআইএআর (আন্তর্জাতিক কৃষি গবেষণা বিষয়ক পরামর্শক দল) এগারোটি জিন ব্যাংক পরিচালনা করছে, যাতে ৭০,০০০-এরও বেশি প্রকারের শস্য, শাক, ঘাস ও বিভিন্ন উদ্ভিদ প্রজাতির বীজ সংরক্ষিত আছে। এগুলোর মধ্যে অনেক প্রজাতি আছে যেগুলো মূলত বাণিজ্যিকভাবে প্রচলিত ফসলের বন্য জাত। এখন পর্যন্ত সিজিআইএআর-এর কেন্দ্রসমূহ ১৫০টিরও বেশি দেশের উদ্ভিদ প্রজননকারী এবং গবেষকদের কাছে আনুমানিক দশ লাখেরও বেশি নমুনা বিতরণ করেছে। [জেবা ইসলাম সেরাজ]