সৈয়দ হামজা

NasirkhanBot (আলোচনা | অবদান) কর্তৃক ২৩:১৩, ৪ মে ২০১৪ তারিখে সংশোধিত সংস্করণ (Added Ennglish article link)
(পরিবর্তন) ← পূর্বের সংস্করণ | সর্বশেষ সংস্করণ (পরিবর্তন) | পরবর্তী সংস্করণ → (পরিবর্তন)

সৈয়দ হামজা (আনু. ১৭৫৫-১৮১৫)  দোভাষী পুথি রচয়িতা। ফকির গরীবুল্লাহ প্রথম এ ধারার কাব্য রচনা করেন; সৈয়দ হামজা দ্বিতীয় প্রধান ও জনপ্রিয় কবি। পশ্চিমবঙ্গের হুগলি জেলার ভুরশুট পরগনার উদনা গ্রামে সৈয়দ হামজার পৈতৃক নিবাস ছিল; ১৭৯২ সালে দামোদর নদের ভাঙ্গনে সর্বস্ব হারিয়ে তাঁরা রায়ড়া পরগনার বসন্তপুর গ্রামে আশ্রয় নেন। সেখানে তিনি শিক্ষকতা করতেন।

অল্প বয়সে সৈয়দ হামজার কবি-প্রতিভার স্ফুরণ ঘটে। তিনি  পাঁচালি ও হেঁয়ালি জাতীয় ছড়া রচনার মাধ্যমে কাব্যচর্চা শুরু করেন। তাঁর প্রথম কাব্য মধুমালতী (১৭৮৮) সামান্য আঞ্চলিকতা ছাড়া শুদ্ধ সাহিত্যিক বাংলায় রচিত। হিন্দিতে কুতবন ও মনঝন এবং বাংলায় মুহম্মদ কবির পূর্বেই রোম্যান্সধর্মী এ কাব্য রচনা করেন। এর কাহিনী অলৌকিকতায় পূর্ণ হলেও মানুষের ধর্ম, সমাজ, নীতি, আচার, সংস্কার ইত্যাদি উপেক্ষিত হয়নি।

সৈয়দ হামজার দ্বিতীয় কাব্য  আমীর হামজা (১৭৯৫)। এ কাব্যের উৎস ফারসি দাস্তান্-ই-আমীর হাম্জা। এটি বাংলা, হিন্দি, আরবি ও ফারসি শব্দের মিশ্রণজাত ‘মুসলমানি বাংলা’য় রচিত। সাধারণভবে  দোভাষী পুথি হিসেবে পরিচিত এরূপ কাব্যরীতির প্রতি সৈয়দ হামজার বেশ আকর্ষণ ছিল। তাঁর পরের দুটি কাব্য  জৈগুনের পুথি (১৭৯৭) ও হাতেম তাই-এ একই ভাষারীতি অনুসৃত হয়েছে।

আমীর হামজা ও জৈগুনের পুথি  যথাক্রমে  হযরত মুহাম্মাদ (স.) এর পিতৃব্য আমীর হামজা এবং হযরত আলী (রা.) পুত্র হানিফার বীরত্বগাথা নিয়ে রচিত। হাতেম তাই-এর উৎস আরায়েশ মহ্ফিল নামক  উর্দু কাব্য। এতে আরবের লিজেন্ডারি পরোপকারী ধার্মিক পুরুষ হাতেম তাইকে কেন্দ্র করে বহু অলৌকিক কাহিনীর সমাবেশ ঘটেছে। আমীর হামজা ও হাতেম তাই উভয় কাব্যই আকারে বিশাল।

সৈয়দ হামজার কাব্যগুলি বটতলার প্রেস থেকে প্রকাশিত হয়। এসব কাব্যে যুদ্ধ-বিগ্রহ, প্রেম, ভোগ, সম্পদ, ক্ষমতা ইত্যাদির সঙ্গে বিধর্মী দমন-নিধন ও  ইসলাম প্রচারের কথা বিশদভাবে বর্ণনা করা হয়েছে। কিছুকাল পূর্ব পর্যন্ত মুসলমানদের ঘরে ঘরে এগুলি যত্নের সঙ্গে পঠিত হতো; সকল শ্রেণীর মানুষ এসব কাব্য পড়ে ইসলামি ঐতিহ্যে গর্ব অনুভব করত, ভাবাবেগে আপ্লুত হতো।

সৈয়দ হামজার মধুমালতী ও জৈগুনের পুথি থেকে উদ্ধৃত নিম্নের দুটি উক্তি থেকে যথাক্রমে বাংলা ও দোভাষী পুথির ভাষারীতি সম্পর্কে জানা যায়: ‘অকুমারী কন্যা আমি রাজার কুমারী। কেমনে তোমার সঙ্গে আলিঙ্গন করি\’ (মধুমালতী); ‘শরা আদালত কাম রাখিবে বহাল। রায়েতের এনছাফ করিবে হামেহাল\’ (জৈগুনের পুথি) প্রথম উক্তির ১০টি শব্দই তৎসম-তদ্ভব বাংলা, আর দ্বিতীয় উক্তির ৯টি শব্দের মধ্যে ৩টি বাংলা, বাকি ৬টি আরবি-ফারসি। উভয় কাব্যে ভাষার তফাৎটা এখানেই, নচেৎ পয়ার-ত্রিপদী ছন্দে রচিত উভয় কাব্যই আখ্যানধর্মী।  [ওয়াকিল আহমদ]