সিংহ, মণি

Mukbil (আলোচনা | অবদান) কর্তৃক ০৫:৩৯, ২২ মার্চ ২০১৫ তারিখে সংশোধিত সংস্করণ
(পরিবর্তন) ← পূর্বের সংস্করণ | সর্বশেষ সংস্করণ (পরিবর্তন) | পরবর্তী সংস্করণ → (পরিবর্তন)

সিংহ, মণি (১৯০১-১৯৯০)  বাম রাজনীতিক। বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির প্রতিষ্ঠাতা মণি সিংহ ১৯০১ সালের ২৮ জুন ময়মনসিংহ জেলার সুসং-দুর্গাপুরে জন্মগ্রহণ করেন। সেখানে প্রাথমিক শিক্ষা শেষে তিনি মাধ্যমিক শিক্ষা গ্রহণের জন্য কলকাতায় যান। কলকাতায় ১৯১৪ সালে তিনি সশস্ত্র বিপ্লবী গোষ্ঠী অনুশীলন দলে যোগ দেন। এক দশক পরে সন্ত্রাসবাদী আন্দোলন ত্যাগ করে ১৯২৫ সালে তিনি ভারতের কমিউনিস্ট পার্টিতে যোগ দেন।

মণি সিংহ

১৯২৮ সালে কলকাতার মেটিয়াবুরুজে কেশরাম কটন মিলে শ্রমিকদের ১৩ দিন ব্যাপী ধর্মঘটে নেতৃত্ব দিয়ে দাবি আদায়ের মাধ্যমে মনি সিংহ রাজনৈতিক কর্মকান্ডে প্রথম সফলতা অর্জন করেন। ১৯৩০ সালে তিনি গ্রেফতার হন এবং ১৯৩৭ সালের নভেম্বর মাসে জেল থেকে মুক্তি পেয়ে তিনি সুসং-দুর্গাপুরে আসেন। এখানে অবস্থানকালে তিনি এখানকার কৃষকদের সংগঠিত করে টংক প্রথার বিরুদ্ধে কৃষক আন্দোলন পরিচালনা করেন। ১৯৪৫ সালে নেত্রকোণায় অনুষ্ঠিত নিখিল ভারত কিষাণ সভার মহাসম্মেলনের তিনি অন্যতম সংগঠক ও অভ্যর্থনা কমিটির সভাপতি ছিলেন।

১৯৪৭ সালে ভারত বিভাগের পর মণি সিংহ পূর্ব বাংলায় কমিউনিস্ট আন্দোলনের নেতৃত্ব গ্রহণ করেন। এ সময় তিনি ময়মনসিংহ জেলার হাজং কৃষকদের নিয়ে আবার টংক প্রথা উচ্ছেদের আন্দোলন শুরু করেন। এই আন্দোলন সশস্ত্র রূপ পরিগ্রহ করলে পাকিস্তান সরকার ১৯৫১ সালে টংক প্রথা বাতিল করে এবং মণি সিংহের উপর হুলিয়া জারি করে তাঁর সমস্ত স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি ক্রোক করে নেয়।

১৯৫১ সালে মনি সিংহ পূর্ব বাংলার কমিউনিস্ট পার্টির সম্পাদক নির্বাচিত হন। ১৯৫৪ সালে পাকিস্তান সরকার কমিউনিস্ট পার্টিকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে। ১৯৫৬ সালে গোপনে অনুষ্ঠিত সম্মেলনে তিনি আবারও সম্পাদক নির্বাচিত হন। ১৯৬৭ সালে তিনি গ্রেফতার হন। ১৯৬৮ সালে গোপনে অনুষ্ঠিত পার্টির কংগ্রেসে তিনি তৃতীয়বার পার্টির সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন।

চীন ও সোভিয়েত দৃষ্টিভঙ্গিতে পার্থক্যের কারণে আন্তর্জাতিক কমিউনিস্ট রাজনীতিতে ভাঙনের পর তিনি সোভিয়েত ইউনিয়নকে অনুসরণের সিদ্ধান্ত নেন। ১৯৬৯ সালে গণআন্দোলনের চাপে সরকার তাঁকে মুক্তি দেয়। মুক্তিলাভের কিছুদিনের মধ্যেই পুনরায় তিনি গ্রেফতার হন। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে ৭ এপ্রিল সাধারণ কয়েদিদের সহায়তায় তিনি রাজশাহী কারাগার থেকে বের হয়ে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেন। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে তিনি মুজিবনগর সরকারের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ছিলেন।

স্বাধীনতার পর ১৯৭৩ সালে কমিউনিস্ট পার্টির কংগ্রেসে মণি সিংহ পার্টির সভাপতি নির্বাচিত হন। ১৯৭৫ সালে তিনি বাকশালে যোগদান করেন। ১৯৭৬ সালে তিনি কমিউনিস্ট পার্টিকে পুনরুজ্জীবিত করেন। ১৯৭৮ সালের রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে তিনি গণতান্ত্রিক ঐক্যজোটের পক্ষে নির্বাচনী প্রচারণায় অংশ নেন। ১৯৮০ সালে অনুষ্ঠিত বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির তৃতীয় কংগ্রেসে তিনি পুনরায় পার্টির সভাপতি নির্বাচিত হন। ১৯৯০ সালের ৩১ ডিসেম্বর তাঁর মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত এ পদে বহাল ছিলেন। দুই খন্ডে রচিত তাঁর আত্মজীবনীমূলক গ্রন্থ জীবন সংগ্রাম সমকালীন রাজনীতির একটি গুরুত্বপূর্ণ রচনা। [সালেহ আতহার খান]