শুল্কহার নীতি

NasirkhanBot (আলোচনা | অবদান) কর্তৃক ২৩:০৩, ৪ মে ২০১৪ তারিখে সংশোধিত সংস্করণ (Added Ennglish article link)
(পরিবর্তন) ← পূর্বের সংস্করণ | সর্বশেষ সংস্করণ (পরিবর্তন) | পরবর্তী সংস্করণ → (পরিবর্তন)

শুল্কহার নীতি  মূলত আমদানি পণ্যাদির উপর শুল্ক নিয়ন্ত্রণের জন্য প্রণীত হলেও রপ্তানি পণ্যের উপর শুল্কের জন্যও শুল্কহার নীতি প্রয়োগ হয়ে থাকে। শুল্কহার নীতিতে সরকারের উন্নয়ন লক্ষ্যাদির সঙ্গে সঙ্গতি রেখে আমদানি-রপ্তানি পণ্যাদির উপর শুল্ক আরোপ, হ্রাস-বৃদ্ধি বা প্রত্যাহার সম্পর্কিত বর্ণনা ও ঘোষণা থাকে। শুল্কহার নীতির প্রধান প্রধান লক্ষ্য হচ্ছে দেশীয় শিল্পের প্রতিরক্ষা, লেনদেন ভারসাম্য পরিস্থিতির উন্নয়ন, ক্ষতিকর প্রভাব বিস্তার করতে পারে এমন পণ্যাদির আমদানি সীমিতকরণ, রপ্তানি বৃদ্ধি এবং রপ্তানিকারক শিল্প উদ্যোক্তাদের উৎপাদনের উপকরণ ও যন্ত্র-সরঞ্জাম আমদানির প্রক্রিয়া সহজীকরণ। শুল্কহার নীতিতে সাধারণত এমন বিধান করা হয় যাতে বিদেশ থেকে আমদানি করা পণ্যাদি দেশে উৎপাদিত পণ্যাদির তুলনায় বাড়তি সুবিধা না পায়।

শুল্কহার নীতির একটি প্রধান অংশ হচ্ছে শুল্কহারের সামঞ্জস্য প্রতিষ্ঠা। এই প্রক্রিয়ায় উদ্যোক্তাদের স্বার্থের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে পর্যায়ক্রমে সংরক্ষণমূলক ব্যবস্থা প্রত্যাহার এবং পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর পণ্যাদির আমদানির উপর উচ্চহার শুল্ক আরোপ করা হয়। বাংলাদেশে আমদানি পণ্যাদির উপর আরোপিত শুল্কহার মূলত প্রণীত হয় শুল্ক আইন ১৯৬৯-এর প্রথম শিডিউল অনুযায়ী। তবে ১৯৯১-এর মূল্য সংযোজন আইনেও আমদানি শুল্ক এবং অধিশুল্ক আরোপের বিধান আছে। উল্লেখ্য যে, আমদানিকৃত পণ্যের উপর দেশের প্রবেশ বন্দরে আরোপিত শুল্ক ছাড়াও দেশে উৎপাদিত বা বিদেশি পণ্যের উপর অভ্যন্তরীণ বাজারে নানাবিধ শুল্ক আরোপিত হতে পারে।

১৯৯২-৯৩ সাল অবধি শুল্ক আইনের দ্বিতীয় শিডিউলে রপ্তানি শুল্কের বিধান ছিল। ১৯৯৩ সালে অর্থ-আইন (Finance Act) প্রণয়নের পর তা রহিত হয়। বাংলাদেশে শুল্ক আদায়ের প্রধান সংস্থা হচ্ছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের শুল্ক, আবগারি ও ভ্যাট উইং। শুল্কহারে পরিবর্তনের সুপারিশ করার জন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থা হচ্ছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ ট্যারিফ কমিশন। ১৯৮০ সালের পূর্ব পর্যন্ত শুল্কহার প্রণয়নে ১৯৩৪ সালের শুল্ক আইনের অংশ বিশেষ অনুসরণ করা হতো (১৯৬৯ সালে ১৯৩৪ সালের শুল্ক আইনের পুরানো ধারাগুলো বাতিল করা হয়)। ঐবৎসরে অর্থ আইনে ১৯৩৪ সালের যাবতীয়, ধারাসমূহ বাতিল করে একটি সমন্বিত শুল্ক করনীতি প্রচলন করা হয়।

১৯৮৮-এর পূর্ব পর্যন্ত শুল্কহার প্রণয়নে কাস্টমস কো-অপারেশন কাউন্সিলের (সিসিসি) প্রণীত হার-তালিকা ভিত্তি হিসেবে ব্যবহার করা হতো। ওই বছর ১ জুলাই নতুন সমন্বিত হার-তালিকা ব্যবস্থা প্রণীত হয়। সিসিসি-র হার-তালিকা সকল পণ্যকে ২১টি প্রধান খাতে ৯৯টি উপখাত ও ১০১১ শিরোনামে বিন্যস্ত করেছিল এবং সকল পণ্যকে প্রতি শিরোনাম দুইভাগে দুই অঙ্কের সংখ্যা দ্বারা চিহ্নিত করে। পক্ষান্তরে, নতুন ব্যবস্থায় বিভিন্ন উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা যেতে পারে এমন লক্ষ্যে পণ্য তালিকায় অন্তর্ভুক্ত ৫০১৯টি পণ্যকে নতুনভাবে শ্রেণিকরণ এবং প্রতিটি পণ্যের জন্য একেকটি ৬-অঙ্কের কোড দ্বারা চিহ্নিত করে। এই ব্যবস্থাতেও প্রধান খাত ২১টি, তবে উপখ্যাত ৯৬টি এবং মোট শিরোনাম ১২৪১টি।

আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল এবং বিশ্বব্যাংক প্রণীত ‘স্ট্রাকচারাল অ্যাডজাস্টমেন্ট ফ্যাসিলিটি’-র আওতামুক্ত প্রথম ৩৫টি দেশের অন্যতম বাংলাদেশ এই সুবিধা শুরুতে ১৯৮৬-৮৯ এই তিন বছরের জন্য গ্রহণ করে ১৯৮৭ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি। এরপর ১৯৯০ সালের ১০ আগস্ট বাংলাদেশ আরও তিন বছরের (১৯৯০-৯৩) জন্য গ্রহণ করে এই সুবিধার নতুন সংস্করণ ‘এনহ্যান্সড স্ট্রাকচারাল অ্যাডজাস্টমেন্ট ফ্যাসিলিটি’। প্রথম মেয়াদে এই সুবিধার আওতাভুক্ত হয়ে বাংলাদেশের জন্য প্রধান কাজ ছিল বাণিজ্য ও বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময় হার উদারীকরণ। দ্বিতীয় মেয়াদে বাংলাদেশের জন্য করণীয় হয় রপ্তানি ভর্তুকি রদকরণ, আমদানি উদারীকরণ এবং শুল্কহারের অধিকতর সামঞ্জসীকরণ।

উপরোক্ত দুই মেয়াদের সাফল্য যতটুকুই হোক, আমদানিতে শুল্কহার প্রতিবন্ধকতা হ্রাস এবং একই সঙ্গে, দেশীয় উৎপাদনকে নিরুৎসাহিত করতে পারে এমন শুল্ক কাঠামো প্রত্যাহার ও রপ্তানি পণ্য উৎপাদনের জন্য বিনা শুল্কে কাঁচামাল বা যন্ত্রপাতি আমদানি করাই হচ্ছে বাংলাদেশের বর্তমান শুল্কহার নীতির প্রধান বিষয়।  [স্বপন কুমার বালা]