শিকদার

NasirkhanBot (আলোচনা | অবদান) কর্তৃক ২৩:০২, ৪ মে ২০১৪ তারিখে সংশোধিত সংস্করণ (Added Ennglish article link)
(পরিবর্তন) ← পূর্বের সংস্করণ | সর্বশেষ সংস্করণ (পরিবর্তন) | পরবর্তী সংস্করণ → (পরিবর্তন)

শিকদার  শেরশাহ এর ‘শিক’ নামক প্রশাসনিক বিভাগের প্রধান। পূর্ববর্তী হিন্দু ও তুর্কি-আফগান শাসনামলে প্রদেশ সমূহকে  কয়েকটি জেলায় ভাগ করে নতুন প্রশাসনিক ব্যবস্থা চালু করা হয়েছিল। সুলতানী আমলে এই নতুন জেলাসমূহকে বলা হত ‘শিক’। তবে এই সময়ের শিক সমূহ সুগঠিত বা শৃঙ্খলিত ছিল না।  শেরশাহ প্রথম জেলা পর্যায়ে ‘সরকার’ নামে একটি নিয়মিত এবং সুশৃঙ্খল প্রশাসনিক ব্যবস্থার প্রবর্তণ করেন এবং দুইজন প্রধান দায়িত্বশীল কর্মকর্তার অধীনে সরকার এর দায়িত্ব অর্পণ করা হয়। যেমন: ১. প্রধান শিকদার (শিকদার-ই-শিকদারান)। ইনি প্রশাসনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এবং ২. প্রধান মুন্সেফ (মুন্সেফ-ই-মুন্সেফান)। এর পরবর্তীতে শেরশাহ পরগণার শাসন ব্যবস্থাকে ঢেলে সাজান এবং কয়েকটি নতুন কর্মকর্তার পদ সৃস্টি করেন। যেমন: ১. সীমিত ক্ষমতার অধিকারী শিকদার বা সেনা অধিনায়ক এবং পুলিশ বাহিনীর প্রধান। ২. আমিন বা মুন্সেফ। ৩. ফোতাহদার বা কোষাধ্যক্ষ। ৪. কারকুন্স বা রেকর্ড রক্ষক। তাঁর আমলে শিকদার ও আমিন যথাক্রমে পরগণার সামরিক ও রাজস্ব বিভাগের কর্মকর্তা রূপে নিয়োজিত ছিলেন। শেরশাহ এর প্রশাসনিক এককে কয়েকটি গ্রাম নিয়ে পরগণা গঠিত হয়েছিলো এবং তখন শিকদার পুলিশের দায়িত্ব পালন করতেন।

মুগল প্রশাসনের অধীনে সম্রাট আকবর জেলা বা সরকার সমূহকে কয়েকটি পরগণা বা মহলে বিভক্ত করেছিলেন এবং প্রত্যেক পরগণায় পাঁচজন করে প্রধান কর্মকর্তার পদ সৃষ্টি করেন। তাঁদের মধ্যে শিকদার (বা চৌকিদার) ছিলেন প্রত্যেক সরকারের উপ বিভাগ পরগণার ফৌজদার এর অধীনস্থ প্রধান নির্বাহী এবং ম্যাজিস্ট্রেট, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী,ফৌজদারী বিচারকার্য পরিচালনা, প্রভৃতির দায়িত্বপ্রাপ্ত। শিকদারগণ সরকার বা জেলার রাজস্ব বিভাগের কর্মকর্তা আমিন বা আমলগুজারকে প্রয়োজনে রাজস্ব আদায়ের কাজে সহযোগিতা করার জন্য আদেশপ্রাপ্ত ছিলেন। তাছাড়াও শিকদার নাম, পেশা ও ঠিকানাসহ স্থানীয় অধিবাসীর জমির পরিমাণের হিসাব  নেয়ার জন্যও দায়িত্বপ্রাপ্ত হন।

শিকদার মূলত ভূমি রাজস্ব আদায়ের জন্য নিযুক্ত কর্মচারী। কখনো কখনো এই নাম বা পদবিটি প্রাদেশিক শাসনকর্তার অর্থনৈতিক দায়িত্ব সংক্রান্ত বিষয়েও প্রয়োগ করা হতো। খাজনাদার বা কোষাধ্যক্ষের কোনো প্রকার আবশ্যকীয় খরচের প্রয়োজন হলে দেওয়ানের আদেশপত্র না থাকলেও শিকদারের আদেশে তিনি সেই খরচ করতে পারতেন এবং পরে তা প্রশাসনকে অবিহিত করতেন। অর্থাৎ এই সময়ে আমিল ও কারকুন এর সঙ্গে শিকদারগণ যৌথভাবে পরগণার কোষাগারে জমাকৃত অর্থের যথার্থ বিতরণের ব্যবস্থার দায়িত্ব পালন করতে পারতেন।

প্রাথমিক কালের শিকদার একজন সামরিক কর্মকর্তা থেকে মুগল শাসনামলে রাজস্ব বিভাগের কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্বপ্রাপ্ত হন। শিকদার শব্দটি আঠারো শতক পর্যন্ত চালু ছিল। তার পরবর্তী সময় থেকে এই শব্দটি প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের পদবি থেকে পারিবারিক উপাধিতে রূপান্তরিত হয়।  [নাসরীন আক্তার]

গ্রন্থপঞ্জি  JN Sarkar, Mughal Polity, Delhi, 2009. Noman Ahmad Siddiqi, Land Revenue Administration under the Mughal, Delhi, 1970.