পৌন্ড্রক্ষত্রিয়

NasirkhanBot (আলোচনা | অবদান) কর্তৃক ২২:১৩, ৪ মে ২০১৪ তারিখে সংশোধিত সংস্করণ (Added Ennglish article link)
(পরিবর্তন) ← পূর্বের সংস্করণ | সর্বশেষ সংস্করণ (পরিবর্তন) | পরবর্তী সংস্করণ → (পরিবর্তন)

পৌন্ড্রক্ষত্রিয়  পৌন্ড্রক্ষত্রিয় তফসিলভুক্ত একটি জনগোষ্ঠী। রাঢ়ীয় ব্রাহ্মণদের গাঞি পরিচয়ের মতো ধুলিয়াপুর, বাজিতপুর, নূরনগরিয়া, সৈয়দপুরিয়া প্রভৃতি নামে আন্তবিভাজিত এ জনগোষ্ঠী ভারতের পশ্চিমবঙ্গসহ বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলীয় বাগেরহাট, খুলনা ও সাতক্ষীরা জেলায় বাস করে। ১৯০১ সালের পরিসংখ্যান অনুযায়ী এ গোষ্ঠীর জনসংখ্যা ৪,৬৪,৭৩৬; ১৯১১ সালে ৫,৩৬,৫৬৮; ১৯২১ সালে ৫,৮৮,৩৯৪ এবং ১৯৩১ সালে ৬,৬৭,৭৩১।

১৯৭২ সালের জনবিবরণীতে এ জনগোষ্ঠীকে ‘পোদ’ অভিধায় উল্লেখ করা হয়। এরপর এ জাতির জন্ম, শ্রেণীবিভাগ, অবস্থান, বৃত্তি ইত্যাদি বিষয়ে দেশি বিদেশি অনেকে কথা বলেছেন। পৌন্ড্রক্ষত্রিয় জনসমষ্টির আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে ১৯২১ সালের জনবিবরণীতে ‘পোদ’ শব্দের পাশে ব্রাকেটে ‘পৌন্ড্র’ লেখা হলেও ১৯৩১ সালে এর ব্যতিক্রম ঘটে। ১৯৩৯ সালের ১৪ ডিসেম্বর বঙ্গীয় ব্যবস্থাপক সভায় ৭৬ নং তারকা চিহ্নিত স্থানে পতিরাম রায় এমএলএ এই জাতির ‘পৌন্ড্রক্ষত্রিয়’ নাম দাবি করায় তা গ্রহণযোগ্য হয়। এর আগে ১৯৩৮ সালের ৬ মে বঙ্গীয় সরকারের সচিব একটি পত্রে পতিরাম রায়কে অবহিত করেন যে, অফিস আদালতে এ জনগোষ্ঠীকে ‘পৌন্ড্রক্ষত্রিয়’ নামে অভিহিত করা হবে।

পৌন্ড্রক্ষত্রিয়ের নৃতাত্ত্বিক প্রসঙ্গ উঠলে স্বভাবত মানবগোষ্ঠীর বিষয়টি উঠে আসে। তবে বিষয়টি যতখানি বর্গ (genus) ও প্রজাতিগত (species) ততখানি সামাজিক ক্রিয়াকর্মবাচক নয়। কেননা, এক জাতির সঙ্গে অন্য জাতির যে পার্থক্য তা নরগোষ্ঠীগত পার্থক্য ছাড়া আর কিছু নয়। অন্যান্য ক্ষেত্রে, ধরা যাক, আত্মরক্ষা, জীবিকার্জন, যৌথ চেষ্টায় অর্থনৈতিক সমস্যা সমাধানের তাগিদ থেকে যেভাবে সমাজের জন্ম হয়েছিল, তার সঙ্গে বঙ্গদেশের অন্যান্য গোষ্ঠীর কোনো মৌলিক পার্থক্য নেই। পার্থক্য নেই পিছিয়ে পড়া তফসিলি জনগোষ্ঠীর সঙ্গে অগ্রসর জনগোষ্ঠীর। নৃতাত্ত্বিক বিচারে দেখা যায় যে, এ মাটির জাতি-উপজাতি, তফসিলভুক্ত জাতি, ব্রাহ্মণ, কায়স্থ, সদগোপ, গোয়ালা, কৈবর্ত, পৌন্ড্র (পোদ), রাজবংশী, বাগদী, বাউরি, চন্ডাল, সাঁওতাল, ওরাং, মালপাহাড়িয়া কেউ বিস্তৃত-শিরস্ক (Brachycephalic) নয়, সবাই নাতিদীর্ঘ বা মাঝারি আকারের। কিছুটা ভিন্নতা থাকলেও নৃতাত্ত্বিক পরিমাপে মিল আছে ব্রাহ্মণ, বৈদ্য, কায়স্থ ও সদগোপের মধ্যে। অনুরূপভাবে মিল রয়েছে গোয়ালা, কৈবর্ত ও পোদদের মধ্যে। কোনো কোনো পন্ডিত মনে করেন যে, পোদ, মাহিষ্য এবং আরও অনেক বর্ণ মিলে নমঃশুদ্র জাতির উদ্ভব। নমঃশুদ্র, পোদ, পৌন্ড্রক্ষত্রিয় ও মাহিষ্যদের মধ্যে নৈকট্য দৃষ্টে মনে হয় যে, এরা সবাই একই বৈশিষ্ট্যের মানুষ।

পৌন্ড্রক্ষত্রিয় জনগোষ্ঠী ব্রাহ্মণত্ব দাবি, উপবীত ধারণ, দ্বাদশাহাশৌচ ইত্যাদি সামাজিক আন্দোলন করে। তাদের কথা বলার মুখপাত্র হিসেবে প্রকাশিত হয়েছিল ব্রাত্য-ক্ষত্রিয়-বান্ধব, প্রতিজ্ঞা, ক্ষত্রিয়, পৌন্ড্রক্ষত্রিয় সমাচার, সত্যযুগ, ক্ষত্রিয় বান্ধব, দীপ্তি, সঙ্ঘ, মাসিক পৌন্ড্রক্ষত্রিয়, শুভবাণী, প্রতিভা ইত্যাদি পত্রিকা।  [সুরঞ্জন রায়]