গাজী, দেওয়ান ফরিদ: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য

সম্পাদনা সারাংশ নেই
(Text replacement - "\[মুয়ায্যম হুসায়ন খান\]" to "[মুয়ায্‌যম হুসায়ন খান]")
 
১৯ নং লাইন: ১৯ নং লাইন:
ফরিদ গাজী ছিলেন সংস্কৃতিমনা এবং শিক্ষার উদার পৃষ্ঠপোষক। সিলেট অঞ্চলে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের উন্নয়নে তাঁর অসামান্য অবদান রয়েছে। তিনি সুদীর্ঘকাল সিলেটের সাহিত্য-সাংস্কৃতিক সংগঠন কেন্দ্রীয় মুসলিম সাহিত্য সংসদের সভাপতি ছিলেন। উদার হূদয়ের মানুষ ফরিদ গাজী অত্যন্ত সাদাসিদা জীবনযাপন করতেন। নিরহঙ্কার ও সজ্জন এই মানুষটি দলমত নির্বিশেষে ছিলেন সকল শ্রেণির লোকের শ্রদ্ধাভাজন।
ফরিদ গাজী ছিলেন সংস্কৃতিমনা এবং শিক্ষার উদার পৃষ্ঠপোষক। সিলেট অঞ্চলে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের উন্নয়নে তাঁর অসামান্য অবদান রয়েছে। তিনি সুদীর্ঘকাল সিলেটের সাহিত্য-সাংস্কৃতিক সংগঠন কেন্দ্রীয় মুসলিম সাহিত্য সংসদের সভাপতি ছিলেন। উদার হূদয়ের মানুষ ফরিদ গাজী অত্যন্ত সাদাসিদা জীবনযাপন করতেন। নিরহঙ্কার ও সজ্জন এই মানুষটি দলমত নির্বিশেষে ছিলেন সকল শ্রেণির লোকের শ্রদ্ধাভাজন।


দেওয়ান ফরিদ গাজী ২০১০ সালের ১৯ নভেম্বর ঢাকায় মৃত্যুবরণ করেন। তাঁকে সিলেটে হযরত শাহজালালের (র) মাযার সংলগ্ন কবরস্থানে সমাহিত করা হয়।  [মুয়ায্যম হুসায়ন খান]
দেওয়ান ফরিদ গাজী ২০১০ সালের ১৯ নভেম্বর ঢাকায় মৃত্যুবরণ করেন। তাঁকে সিলেটে হযরত শাহজালালের (র) মাযার সংলগ্ন কবরস্থানে সমাহিত করা হয়।  [মুয়ায্‌যম হুসায়ন খান]


[[en:Gazi, Dewan Farid]]
[[en:Gazi, Dewan Farid]]

১৬:২১, ১৭ এপ্রিল ২০১৫ তারিখে সম্পাদিত সর্বশেষ সংস্করণ

দেওয়ান ফরিদ গাজী

গাজী, দেওয়ান ফরিদ (১৯২৪-২০১০)  রাজনীতিক। ১৯২৪ সালের ১ মার্চ হবিগঞ্জ জেলায় নবীগঞ্জ থানার দেবপাড়া গ্রামে তাঁর জন্ম। তাঁর পিতা দেওয়ান মোহাম্মদ হামিদ গাজী ছিলেন দিনারপুর পরগণার জমিদার। ফরিদ গাজী হযরত শাহজালাল মুজাররদ-ই-ইয়েমেনীর (র) সফরসঙ্গী হযরত তাজউদ্দিন কোরেশীর (র) ১৬তম বংশধর।

দেওয়ান ফরিদ গাজীর প্রাথমিক শিক্ষা শুরু হয় গ্রামের প্রাইমারি স্কুলে। এরপর তিনি মৌলভীবাজার জুনিয়র মাদ্রাসা এবং সিলেট আলিয়া মাদ্রাসায় পড়াশুনা করেন। পরে মাদ্রাসা কারিকুলাম ত্যাগ করে সিলেট রসময় মেমোরিয়াল হাইস্কুলে ভর্তি হন। তিনি রসময় হাইস্কুল থেকে ১৯৪৫ সালে প্রবেশিকা, ১৯৪৭ সালে সিলেট মুরারিচাঁদ কলেজ থেকে আইএ এবং ১৯৪৯ সালে সিলেট মদন মোহন কলেজ থেকে বিএ পাস করেন।

ফরিদ গাজী ছাত্র জীবনেই রাজনীতিতে সম্পৃক্ত হন। ১৯৪২ সালে ‘কুইট ইন্ডিয়া’ বা ভারত ছাড় আন্দোলনে অংশগ্রহণ করেন। তিনি ১৯৪৩ সালে মুসলিম লীগের অঙ্গ সংগঠন আসাম মুসলিম ছাত্র ফেডারেশনে যোগ দেন। তিনি ছাত্র ফেডারেশনের আসাম প্রাদেশিক শাখার সহ-সম্পাদক এবং সিলেট এম. সি কলেজ শাখার সম্পাদক ছিলেন। ১৯৪৫ সালে আসামে অহমীয়দের ‘বাঙ্গাল খেদাও’ অভিযানের প্রতিবাদে আন্দোলন এবং লাইন প্রথা বিলোপ আন্দোলনের একজন অগ্রণী কর্মী ছিলেন ফরিদ গাজী। এ সব আন্দোলনে অংশগ্রহণের জন্য বহুবার তাঁকে পুলিশী নির্যাতনের শিকার হতে হয়। ১৯৪৭ সালে সিলেটের গণভোটে তাঁর উল্লেখযোগ্য ভূমিকা ছিল। ১৯৪৮ সালে ভাষা আন্দোলনের সূচনাপর্বে তিনি সিলেটে আন্দোলন সংগঠনে নেতৃত্ব দেন। ১৯৫০ সালে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা প্রতিহত করার লক্ষ্যে সূচিত শান্তি আন্দোলনে তাঁর অগ্রণী ভূমিকা ছিল।

দেওয়ান ফরিদ গাজী প্রথম জীবনে শিক্ষকতা ও সাংবাদিকতা পেশায় আকৃষ্ট হন। ১৯৫০ সালে কিছুকাল তিনি সিলেট রসময় মেমোরিয়াল হাইস্কুল ও সিলেট গভর্নমেন্ট হাইস্কুলে শিক্ষকতা করেন। ১৯৫২ সালে তিনি সিলেটের সাপ্তাহিক যুগভেরী (বর্তমানে দৈনিক) পত্রিকার সম্পাদক নিযুক্ত হন। ১৯৫৩ সালে যুগপৎ তিনি ইংরেজি সাপ্তাহিক Eastern Herald (বর্তমানে অবলুপ্ত) সম্পাদনার দায়িত্ব লাভ করেন। ফরিদ গাজী  ১৯৫৪ সাল পর্যন্ত যুগভেরী এবং ১৯৫৫ সাল পর্যন্ত Eastern Herald পত্রিকা সম্পাদনার দায়িত্ব পালন করেন।

ফরিদ গাজী ১৯৫২ সালে আওয়ামী মুসলিম লীগে যোগ দেন এবং দলের সিলেট জেলা শাখার যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন।  ১৯৫৪ সালে  যুক্তফ্রন্ট নির্বাচনে তিনি সিলেট জেলা নির্বাচন পরিচালনা কমিটির যুগ্ম আহবায়ক ছিলেন। ফরিদ গাজী ১৯৬৪ সালে সিলেটের তোপখানা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এবং সিলেট পৌরসভার কমিশনার নির্বাচিত হন। আওয়ামী লীগের ছয়দফা কর্মসূচিতে অংশগ্রহণের দায়ে ১৯৬৭ সালে তিনি গ্রেফতার হন এবং ১১ মাস কারাভোগ করেন। ১৯৬৯ সালে আইয়ুব বিরোধী গণআন্দোলনে তাঁর অগ্রণী ভূমিকা ছিল। ফরিদ গাজী আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে ১৯৭০ সালে সিলেট সদর আসন থেকে পাকিস্তান জাতীয় পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন।

১৯৭১ সালের মার্চ মাসে বঙ্গবন্ধু ঘোষিত অসহযোগ আন্দোলনকালে ফরিদ গাজী সিলেটে আন্দোলন সংগঠিত করেন। মুক্তিযুদ্ধে তিনি উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রণাঙ্গনে ৪ ও ৫ নম্বর সেক্টরের বেসামরিক উপদেষ্টা এবং দীর্ঘদিন উত্তর-পূর্ব রণাঙ্গনের আঞ্চলিক প্রশাসনিক কাউন্সিলের চেয়ারম্যান ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধ সংগঠিত করার পাশাপাশি তিনি শরণার্থীদের তত্ত্বাবধানেও নিয়োজিত ছিলেন।

দেওয়ান ফরিদ গাজী ১৯৭৩ সালে বাংলাদেশের প্রথম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সিলেট সদর আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। তিনি বঙ্গবন্ধুর মন্ত্রিসভায় প্রথমে স্থানীয় সরকার ও সমবায় প্রতিমন্ত্রীর এবং পরে বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। বঙ্গবন্ধুর একজন ঘনিষ্ঠ সহযোগী হিসেবে যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ পুনর্গঠনে ফরিদ গাজীর অবদান ছিল অপরিসীম। বিশেষ করে ওয়েজ আর্নার্স স্কিম চালু ছিল তাঁরই চিন্তার ফসল। ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধুর হত্যাকান্ডের পর খোন্দকার মোশতাক আহমদের মন্ত্রিসভায় প্রতিমন্ত্রী ছিলেন ফরিদ গাজী।

ফরিদ গাজী দীর্ঘকাল আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য ছিলেন। তিনি পঁচাত্তর পরবর্তী সামরিক শাসনবিরোধী আন্দোলনে সক্রিয় ছিলেন। ১৯৯০ সালে স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনে তাঁর অগ্রণী ভূমিকা ছিল। ফরিদ গাজী ১৯৯৬, ২০০১ ও ২০০৮ সালে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে হবিগঞ্জ-১ আসন থেকে পর পর সংসদ-সদস্য নির্বাচিত হন। শেষদিকে তিনি আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামন্ডলীর সদস্য এবং ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে নির্বাচিত দশম জাতীয় সংসদে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ছিলেন।

ফরিদ গাজী ছিলেন সংস্কৃতিমনা এবং শিক্ষার উদার পৃষ্ঠপোষক। সিলেট অঞ্চলে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের উন্নয়নে তাঁর অসামান্য অবদান রয়েছে। তিনি সুদীর্ঘকাল সিলেটের সাহিত্য-সাংস্কৃতিক সংগঠন কেন্দ্রীয় মুসলিম সাহিত্য সংসদের সভাপতি ছিলেন। উদার হূদয়ের মানুষ ফরিদ গাজী অত্যন্ত সাদাসিদা জীবনযাপন করতেন। নিরহঙ্কার ও সজ্জন এই মানুষটি দলমত নির্বিশেষে ছিলেন সকল শ্রেণির লোকের শ্রদ্ধাভাজন।

দেওয়ান ফরিদ গাজী ২০১০ সালের ১৯ নভেম্বর ঢাকায় মৃত্যুবরণ করেন। তাঁকে সিলেটে হযরত শাহজালালের (র) মাযার সংলগ্ন কবরস্থানে সমাহিত করা হয়।  [মুয়ায্‌যম হুসায়ন খান]