খাদ্যসম্পর্কিত বিধিনিষেধ

NasirkhanBot (আলোচনা | অবদান) কর্তৃক ২০:০২, ৪ মে ২০১৪ তারিখে সংশোধিত সংস্করণ (Added Ennglish article link)
(পরিবর্তন) ← পূর্বের সংস্করণ | সর্বশেষ সংস্করণ (পরিবর্তন) | পরবর্তী সংস্করণ → (পরিবর্তন)

খাদ্যসম্পর্কিত বিধিনিষেধ (Food Taboos)  সামাজিক প্রথা, চিরাচরিত বিশ্বাস বা ধর্মীয় নিষেধাজ্ঞার কারণে বিশেষ কোনো খাদ্য বা খাদ্যবস্ত্ত গ্রহণে বিরত থাকা। খাদ্যসম্পর্কিত বিধিনিষেধ খাদ্য সম্পর্কে খেয়ালিপনাও বলা যায় যা ধর্ম ও বর্ণ ভেদে ভিন্ন হয়ে থাকে। এসব বিশ্বাসের কারণে খাদ্যতালিকা থেকে কিছু কিছু খাদ্যদ্রব্য বাদ পড়ে যায়। এতে অনেক সময় ক্ষতিগ্রস্ত হন গর্ভবতী, স্তন্যদাত্রী মা বা রোগীরা। একটি ধারণা প্রচলিত আছে যে, প্রসবের সুবিধার জন্য বাচ্চার আকার ছোট রাখতে গর্ভবতী মায়েদের কম খেতে হয়। এটি অত্যন্ত বিপজ্জনক ও বিভ্রান্তিকর ধারণা। গর্ভবতী মায়েদের স্বাভাবিক প্রয়োজনের চেয়ে এক-চতুর্থাংশ পরিমাণ বেশি খাওয়া দরকার। তাকে পেটের বাচ্চার জন্যও খেতে হয়, অন্যথায় মা ও শিশু উভয়েই অপুষ্টিতে ভুগবে, এমনকি মারাও যেতে পারে।

প্রসবের সময় ঘামের সঙ্গে, রক্তপাতের সঙ্গে এবং প্রসবের পানির সঙ্গে মায়েদের বিপুল পরিমাণ পানিক্ষয় ঘটে। এ ঘাটতি পূরণ এবং পানিশূন্যতা থেকে বাঁচানোর জন্য তাকে পর্যাপ্ত পরিমাণ তরল খাওয়ানো উচিত। গর্ভকালীন সময়ে প্রায়শ মায়েদের পেঁপে, কলা, কালজাম, আরও অনেক পুষ্টিকর ফল খেতে দেওয়া হয় না এ বিশ্বাসে যে এতে শিশুর ক্ষতি হতে পারে। কোনো কোনো প্রাচীনপন্থি পরিবারে অজ্ঞাত কারণে গর্ভবতীর জন্য তালমিছরি নিষিদ্ধ। গর্ভের সঙ্গে অবাঞ্ছিত প্রতিক্রিয়া ঘটবে এ বিশ্বাসে প্রায়শই গর্ভবতীকে ডিম না খেতে বলা হয়। বাংলাদেশে অনেক সময় নবজাত শিশুকে শালদুধ খেতে দেওয়া হয় না, কারণ ধারণা করা হয় এতে বাচ্চার পেট খারাপ হবে। কিছু লোক বিশ্বাস করে চিংড়ি স্তন্যদাত্রী মায়ের বুকের দুধ কমিয়ে দেয়, যার কোনো বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নেই। কোনো কোনো পরিবারে এমন ধারণা আছে যে, নবজাতক গরু বা মহিষের দুধ খেলে জন্তুর চরিত্র পাবে এবং বিদ্যাবুদ্ধি কম হবে। কলা খেলে শিশুদের খিঁচুনি বা ধনুষ্টঙ্কার হয়ে থাকে এমন বিশ্বাসও বিরল নয়। আরেকটি ধারণাও প্রচলিত, শিশুরা অজীর্ণতায় ভুগলে তাদের ক্যাস্টর অয়েল (রেড়ির তেল) খাওয়ানো উচিত।

সনাতন চিকিৎসকদের বিশ্বাস পেট খারাপ হলে শীতল খাদ্য আর সর্দি, ঠান্ডা বা শ্বাসকষ্টে উষ্ণ খাদ্য উপকারী। অধিকন্তু,তাদের মতে, চর্মরোগ রক্তদূষণজনিত রোগ, অতএব উষ্ণ খাদ্য বর্জনীয়। জন্ডিসে আক্রান্ত রোগীকে কোনো হলুদ রঙের খাদ্য দেওয়া হয় না, কারণ হলুদ রঙের খাদ্যে নাকি রোগবৃদ্ধি ঘটে। হিন্দু সম্প্রদায়ের মধ্যে হাম, জলবসন্ত ও অন্যান্য ভাইরাসজনিত রোগে আমিষ জাতীয় খাদ্য নিষিদ্ধ, কারণ তাদের প্রচলিত বিশ্বাসে এসব রোগ এক দেবীর ইচ্ছার ফল আর এ দেবী আমিষ খাদ্য অপছন্দ করেন। বলা বাহুল্য, এসব বিশ্বাস ভিত্তিহীন এবং পুষ্টিকর খাদ্যগ্রহণের প্রধান অন্তরায়।  [এম কবিরউল্লাহ]