কাফী, মুহম্মদ আবদুল্লাহ-হিল: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য

(Added Ennglish article link)
 
(Text replacement - "সোহ্রাওয়ার্দী" to "সোহ্‌রাওয়ার্দী")
 
২ নং লাইন: ২ নং লাইন:
'''কাফী, মুহম্মদ আবদুল্লাহ-হিল''' (১৯০০-১৯৬০)  রাজনীতিবিদ, সাংবাদিক, লেখক। ১৯০০ সালে পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান জেলার টুবগ্রামে তাঁর জন্ম। তাঁর পৈত্রিক নিবাস দিনাজপুর জেলার বস্তিয়াড়া গ্রামে। আবদুল্লাহ-হিল কাফীর পিতার নাম সৈয়দ আবদুল হাদী। পিতৃগৃহে তাঁর প্রাথমিক শিক্ষা শুরু হয়। মাতার কাছে তিনি উর্দু ও ফারসি এবং পিতার কাছে আরবি ভাষা শেখেন। ১৯০৬ সালে তিনি স্থানীয় নূরুল হুদা মাদ্রাসায় ভর্তি হন এবং ১৯০৯ সাল পর্যন্ত সেখানে পড়াশোনা করেন। এরপর তিনি রংপুর শহরের কৈলাসরঞ্জন হাইস্কুল এবং পশ্চিমবঙ্গে হুগলি জেলা স্কুলে অধ্যয়ন করেন। তিনি ১৯১৭ সালে কলকাতার ‘মাদ্রাসা-ই-আলিয়া’ থেকে প্রবেশিকা এবং সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজ থেকে আই.এ. পাস করেন (১৯১৯)। একই কলেজে তিনি বি.এ. শ্রেণিতে ভর্তি হন কিন্তু অসহযোগ ও  [[খিলাফত আন্দোলন|খিলাফত আন্দোলন]] এ অংশগ্রহণ করে ইংরেজি শিক্ষা বর্জন করেন।
'''কাফী, মুহম্মদ আবদুল্লাহ-হিল''' (১৯০০-১৯৬০)  রাজনীতিবিদ, সাংবাদিক, লেখক। ১৯০০ সালে পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান জেলার টুবগ্রামে তাঁর জন্ম। তাঁর পৈত্রিক নিবাস দিনাজপুর জেলার বস্তিয়াড়া গ্রামে। আবদুল্লাহ-হিল কাফীর পিতার নাম সৈয়দ আবদুল হাদী। পিতৃগৃহে তাঁর প্রাথমিক শিক্ষা শুরু হয়। মাতার কাছে তিনি উর্দু ও ফারসি এবং পিতার কাছে আরবি ভাষা শেখেন। ১৯০৬ সালে তিনি স্থানীয় নূরুল হুদা মাদ্রাসায় ভর্তি হন এবং ১৯০৯ সাল পর্যন্ত সেখানে পড়াশোনা করেন। এরপর তিনি রংপুর শহরের কৈলাসরঞ্জন হাইস্কুল এবং পশ্চিমবঙ্গে হুগলি জেলা স্কুলে অধ্যয়ন করেন। তিনি ১৯১৭ সালে কলকাতার ‘মাদ্রাসা-ই-আলিয়া’ থেকে প্রবেশিকা এবং সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজ থেকে আই.এ. পাস করেন (১৯১৯)। একই কলেজে তিনি বি.এ. শ্রেণিতে ভর্তি হন কিন্তু অসহযোগ ও  [[খিলাফত আন্দোলন|খিলাফত আন্দোলন]] এ অংশগ্রহণ করে ইংরেজি শিক্ষা বর্জন করেন।


আবদুল্লাহ-হিল কাফী ১৯২১ সালে উর্দু দৈনিক পত্রিকা জমানার সম্পাদক হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন। তিনি ১৯২২ সালে জমিয়তে উলামায়ে বাঙ্গালার সহকারী সম্পাদক নিযুক্ত হন। ১৯২৪ সালে তিনি সাপ্তাহিক পত্রিকা সত্যাগ্রহী প্রকাশ করেন। ১৯২৬ সালে [[সোহ্রাওয়ার্দী, হোসেন শহীদ|হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী]] এর ইন্ডিপেন্ডেন্ট মুসলিম পার্টির সংগঠন ও প্রচারণার কাজে অংশগ্রহণ করেন। তিনি এ দলের সেক্রেটারি এবং নির্বাচন বোর্ডেরও সদস্য ছিলেন। ১৯৩০ সালে [[আইন অমান্য আন্দোলন|আইন অমান্য আন্দোলন]]এ তিনি দিনাজপুরে নেতৃত্ব দেন। এ সময় তিনি মুসলিম ন্যাশনাল পার্টির নেতা হিসেবে আন্দোলনের সমর্থনে বক্তব্য দিতে গিয়ে গ্রেফতার হন।
আবদুল্লাহ-হিল কাফী ১৯২১ সালে উর্দু দৈনিক পত্রিকা জমানার সম্পাদক হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন। তিনি ১৯২২ সালে জমিয়তে উলামায়ে বাঙ্গালার সহকারী সম্পাদক নিযুক্ত হন। ১৯২৪ সালে তিনি সাপ্তাহিক পত্রিকা সত্যাগ্রহী প্রকাশ করেন। ১৯২৬ সালে [[সোহ্‌রাওয়ার্দী, হোসেন শহীদ|হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী]] এর ইন্ডিপেন্ডেন্ট মুসলিম পার্টির সংগঠন ও প্রচারণার কাজে অংশগ্রহণ করেন। তিনি এ দলের সেক্রেটারি এবং নির্বাচন বোর্ডেরও সদস্য ছিলেন। ১৯৩০ সালে [[আইন অমান্য আন্দোলন|আইন অমান্য আন্দোলন]]এ তিনি দিনাজপুরে নেতৃত্ব দেন। এ সময় তিনি মুসলিম ন্যাশনাল পার্টির নেতা হিসেবে আন্দোলনের সমর্থনে বক্তব্য দিতে গিয়ে গ্রেফতার হন।


আবদুল্লাহ-হিল কাফী ১৯৩২ সালে রাজনীতি থেকে অবসর নেন এবং ইসলাম প্রচার ও সংশ্লিষ্ট কর্মকান্ডে আত্মনিয়োগ করেন। তিনি ১৯৩৫ সালে রংপুর জেলার হারাগাছা বন্দরে অনুষ্ঠিত উত্তরবঙ্গ আহলে হাদিস সম্মেলনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। আবদুল্লাহ-হিল কাফী ১৯৪০ সালে দিল্লিতে অনুষ্ঠিত নিখিল ভারত জাতীয়তাবাদী মুসলিম কনফারেন্সে এবং ১৯৪৪ ও ১৯৪৫ সালে নিখিল ভারত আহলে হাদিস সম্মেলনে বাংলার প্রতিনিধি হিসেবে যোগ দেন। তিনি ১৯৪৬ সালে ‘নিখিল বঙ্গ ও আসাম জমিয়তে আহলে হাদিস’-এর সভাপতি নির্বাচিত হন। এ সময় থেকে তিনি দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে আহলে হাদিস আন্দোলনকে জনপ্রিয় করে তোলার চেষ্টা করেন। ১৯৪৭ সালে দেশ বিভাগের পর তিনি ইসলামি শাসনতন্ত্র চালুর পক্ষে অবস্থান নেন। এ সময় সংগঠনের নামকরণ করা হয় ‘পূর্ব পাকিস্তান জমিয়তে আহল-ই-হাদিস’ এবং কলকাতা থেকে কেন্দ্রীয় কার্যালয় পাবনায় স্থানান্তরিত হয়।
আবদুল্লাহ-হিল কাফী ১৯৩২ সালে রাজনীতি থেকে অবসর নেন এবং ইসলাম প্রচার ও সংশ্লিষ্ট কর্মকান্ডে আত্মনিয়োগ করেন। তিনি ১৯৩৫ সালে রংপুর জেলার হারাগাছা বন্দরে অনুষ্ঠিত উত্তরবঙ্গ আহলে হাদিস সম্মেলনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। আবদুল্লাহ-হিল কাফী ১৯৪০ সালে দিল্লিতে অনুষ্ঠিত নিখিল ভারত জাতীয়তাবাদী মুসলিম কনফারেন্সে এবং ১৯৪৪ ও ১৯৪৫ সালে নিখিল ভারত আহলে হাদিস সম্মেলনে বাংলার প্রতিনিধি হিসেবে যোগ দেন। তিনি ১৯৪৬ সালে ‘নিখিল বঙ্গ ও আসাম জমিয়তে আহলে হাদিস’-এর সভাপতি নির্বাচিত হন। এ সময় থেকে তিনি দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে আহলে হাদিস আন্দোলনকে জনপ্রিয় করে তোলার চেষ্টা করেন। ১৯৪৭ সালে দেশ বিভাগের পর তিনি ইসলামি শাসনতন্ত্র চালুর পক্ষে অবস্থান নেন। এ সময় সংগঠনের নামকরণ করা হয় ‘পূর্ব পাকিস্তান জমিয়তে আহল-ই-হাদিস’ এবং কলকাতা থেকে কেন্দ্রীয় কার্যালয় পাবনায় স্থানান্তরিত হয়।

১৬:০৫, ১৭ এপ্রিল ২০১৫ তারিখে সম্পাদিত সর্বশেষ সংস্করণ

কাফী, মুহম্মদ আবদুল্লাহ-হিল (১৯০০-১৯৬০)  রাজনীতিবিদ, সাংবাদিক, লেখক। ১৯০০ সালে পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান জেলার টুবগ্রামে তাঁর জন্ম। তাঁর পৈত্রিক নিবাস দিনাজপুর জেলার বস্তিয়াড়া গ্রামে। আবদুল্লাহ-হিল কাফীর পিতার নাম সৈয়দ আবদুল হাদী। পিতৃগৃহে তাঁর প্রাথমিক শিক্ষা শুরু হয়। মাতার কাছে তিনি উর্দু ও ফারসি এবং পিতার কাছে আরবি ভাষা শেখেন। ১৯০৬ সালে তিনি স্থানীয় নূরুল হুদা মাদ্রাসায় ভর্তি হন এবং ১৯০৯ সাল পর্যন্ত সেখানে পড়াশোনা করেন। এরপর তিনি রংপুর শহরের কৈলাসরঞ্জন হাইস্কুল এবং পশ্চিমবঙ্গে হুগলি জেলা স্কুলে অধ্যয়ন করেন। তিনি ১৯১৭ সালে কলকাতার ‘মাদ্রাসা-ই-আলিয়া’ থেকে প্রবেশিকা এবং সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজ থেকে আই.এ. পাস করেন (১৯১৯)। একই কলেজে তিনি বি.এ. শ্রেণিতে ভর্তি হন কিন্তু অসহযোগ ও  খিলাফত আন্দোলন এ অংশগ্রহণ করে ইংরেজি শিক্ষা বর্জন করেন।

আবদুল্লাহ-হিল কাফী ১৯২১ সালে উর্দু দৈনিক পত্রিকা জমানার সম্পাদক হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন। তিনি ১৯২২ সালে জমিয়তে উলামায়ে বাঙ্গালার সহকারী সম্পাদক নিযুক্ত হন। ১৯২৪ সালে তিনি সাপ্তাহিক পত্রিকা সত্যাগ্রহী প্রকাশ করেন। ১৯২৬ সালে হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী এর ইন্ডিপেন্ডেন্ট মুসলিম পার্টির সংগঠন ও প্রচারণার কাজে অংশগ্রহণ করেন। তিনি এ দলের সেক্রেটারি এবং নির্বাচন বোর্ডেরও সদস্য ছিলেন। ১৯৩০ সালে আইন অমান্য আন্দোলনএ তিনি দিনাজপুরে নেতৃত্ব দেন। এ সময় তিনি মুসলিম ন্যাশনাল পার্টির নেতা হিসেবে আন্দোলনের সমর্থনে বক্তব্য দিতে গিয়ে গ্রেফতার হন।

আবদুল্লাহ-হিল কাফী ১৯৩২ সালে রাজনীতি থেকে অবসর নেন এবং ইসলাম প্রচার ও সংশ্লিষ্ট কর্মকান্ডে আত্মনিয়োগ করেন। তিনি ১৯৩৫ সালে রংপুর জেলার হারাগাছা বন্দরে অনুষ্ঠিত উত্তরবঙ্গ আহলে হাদিস সম্মেলনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। আবদুল্লাহ-হিল কাফী ১৯৪০ সালে দিল্লিতে অনুষ্ঠিত নিখিল ভারত জাতীয়তাবাদী মুসলিম কনফারেন্সে এবং ১৯৪৪ ও ১৯৪৫ সালে নিখিল ভারত আহলে হাদিস সম্মেলনে বাংলার প্রতিনিধি হিসেবে যোগ দেন। তিনি ১৯৪৬ সালে ‘নিখিল বঙ্গ ও আসাম জমিয়তে আহলে হাদিস’-এর সভাপতি নির্বাচিত হন। এ সময় থেকে তিনি দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে আহলে হাদিস আন্দোলনকে জনপ্রিয় করে তোলার চেষ্টা করেন। ১৯৪৭ সালে দেশ বিভাগের পর তিনি ইসলামি শাসনতন্ত্র চালুর পক্ষে অবস্থান নেন। এ সময় সংগঠনের নামকরণ করা হয় ‘পূর্ব পাকিস্তান জমিয়তে আহল-ই-হাদিস’ এবং কলকাতা থেকে কেন্দ্রীয় কার্যালয় পাবনায় স্থানান্তরিত হয়।

আব্দুল্লাহ-হিল কাফী ১৯৪৯ সালে মাসিক পত্রিকা তর্জমানুল হাদীস এবং ১৯৫৭ সালে সাপ্তাহিক আরাফত প্রকাশ করেন। সাপ্তাহিক আরাফত-এর প্রকাশনা এখনও অব্যাহত আছে। তিনি একজন সমাজসেবকও ছিলেন। তিনি দেশের বিভিন্ন স্থানে মাদ্রাসা ও ঈদগাহ প্রতিষ্ঠা করেন। আব্দুল্লাহ-হিল কাফী তাঁর গবেষণা কর্মকান্ড ও লেখালেখির জন্য খ্যাতি অর্জন করেন। তাঁর রচিত গ্রন্থের সংখ্যা ছাবিবশ। উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ হলো- ইসলামী শাসনতন্ত্রের সূত্র, নবুওতে মোহাম্মদী আহলে হাদীস পরিচিতি, ধন বণ্টনের রকমারি ফর্মুলা, আল-ইসলাম ও কমিউনিজম  ইত্যাদি।

আবদুল্লাহ-হিল কাফী প্রবন্ধ ও গবেষণার জন্য ১৯৬০ সালে বাংলা একাডেমী পুরস্কার লাভ করেন। ১৯৬০ সালে ঢাকায় তাঁর মৃত্যু হয়।  [মোঃ আবদুস সালাম]