ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ

Mukbil (আলোচনা | অবদান) কর্তৃক ০৪:৩৫, ৭ মে ২০১৪ তারিখে সংশোধিত সংস্করণ

ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ  ইসলামের আদর্শ ও মূল্যবোধ প্রচার এবং ইসলামী কর্মকান্ড পরিচালনার উদ্দেশ্যে গঠিত একটি স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান। ১৯৫৯ সালে ঢাকায় একটি বৃহৎ মসজিদ প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্যে ‘বায়তুল মুকাররম সোসাইটি’ নামে একটি সমিতি গঠন করা হয়। একই বছর ঢাকার কয়েকজন ইসলামী চিন্তাবিদ তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে ইসলামী জীবনাদর্শের বিভিন্ন দিক সম্পর্কে গবেষণা এবং ইসলামী সংস্কৃতির প্রচার ও প্রসারের উদ্দেশ্যে ‘দারুল উলুম’ প্রতিষ্ঠা করেন। পরের বছর ‘ইসলামিক একাডেমী’ নামে এর নতুন নামকরণ করে করাচিতে প্রতিষ্ঠিত কেন্দ্রীয় ইসলামিক রিসার্চ ইনস্টিটিউটের শাখারূপে একে স্বীকৃতি দেওয়া হয়।

১৯৭৫ সালের ২২ মার্চ বায়তুল মুকাররম সোসাইটি এবং ইসলামিক একাডেমী একীভূত করে এক অধ্যাদেশবলে ‘ইসলামিক ফাউন্ডেশন’ প্রতিষ্ঠা করা হয়। ২৮ মার্চ ১৯৭৫ ইসলামিক ফাউন্ডেশন অ্যাক্ট প্রণীত হয়।

১৯৭৮ সালের ২০-২২ মার্চ বাংলাদেশসহ ১৬টি দেশের প্রতিনিধিদের নিয়ে ঢাকায় ও.আই.সি-র (Organisation of Islamic Conference) উদ্যোগে ‘Human and Natural Resources in the Islamic Countries’ শীর্ষক যে সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়, তার মাধ্যমে ইসলামিক ফাউন্ডেশন মুসলিম বিশ্বের সুদৃষ্টি আকর্ষণ করে। পরবর্তী সময়ে ১৯৭৯-৮০ অর্থবছর থেকে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের অগ্রযাত্রায় বিশেষ গতি সঞ্চারিত হয়। প্রতিষ্ঠার পর থেকে ফাউন্ডেশনের প্রধান কার্যালয়  বায়তুল মুকাররম মসজিদ সংশ্লিষ্ট ভবনে অবস্থিত ছিল; পরে ১৯৯৯ সালে আগারগাঁওস্থ নিজস্ব ভবনে স্থানান্তর করা হয়।

লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য  ইসলামিক ফাউন্ডেশন অ্যাক্ট অনুযায়ী ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য হলো: ক. মসজিদ ও ইসলামিক কেন্দ্র, একাডেমী ও ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠা করা, এগুলি পরিচালনা ও রক্ষণাবেক্ষণ করা এবং এগুলিকে আর্থিক সহায়তা দেওয়া; খ. সংস্কৃতি, চিন্তা, বিজ্ঞান ও সভ্যতার ক্ষেত্রে ইসলামের অবদান সম্পর্কে গবেষণা পরিচালনা করা; গ. ইসলামের মৌলিক আদর্শ বিশ্ব ভ্রাতৃত্ববোধ, পরমতসহিষ্ণুতা ও ন্যায় বিচার প্রচার ও প্রসারে সহায়তা করা; ঘ. ইসলামী মূল্যবোধ ও নীতিমালা বাস্তবায়নের জন্য ইসলামের ইতিহাস, দর্শন, সংস্কৃতি ও আইন সম্পর্কে অধ্যয়ন ও গবেষণা করা; এ সংক্রান্ত পুস্তক, সাময়িকী প্রকাশ করা এবং সম্মেলন, বক্তৃতা, বিতর্ক ও সেমিনার-সিম্পোজিয়ামের আয়োজন করা; ঙ. ইসলামের বিভিন্ন বিষয়ে কৃতিত্বপূর্ণ অবদানের জন্য পুরস্কার ও পদক প্রবর্তন এবং অধ্যয়ন-গবেষণার জন্য বৃত্তি প্রদান করা; চ. বায়তুল মুকাররম মসজিদ ও এর আওতাধীন অন্যান্য মসজিদের ব্যবস্থাপনা ও উন্নয়ন সাধন করা এবং ছ. উল্লিখিত কর্মসূচিসমূহ বাস্তবায়িত করার কাজে সহায়তা প্রদান ও প্রয়োজনীয় প্রকল্প গ্রহণ করা।

ব্যবস্থাপনা ১৯৭৫ সালে প্রতিষ্ঠার পর থেকে ইসলামিক ফাউন্ডেশন শিক্ষা ও সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের অধীনে ছিল; পরবর্তী সময়ে ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয় গঠিত হলে তার আওতাধীন একটি স্বায়ত্তশাসিত সংস্থা হিসেবে এটি প্রতিষ্ঠা লাভ করে। ফাউন্ডেশনের সঠিক নীতি নির্ধারণ, নির্দেশনা প্রদান, কার্যক্রম গ্রহণ, তত্ত্বাবধান ও পর্যবেক্ষণের জন্য একটি শক্তিশালী বোর্ড অব গভর্নরস রয়েছে, যার সদস্য-সংখ্যা সতেরো। উক্ত বোর্ডে তিন ধরনের সদস্য রয়েছেন: পদাধিকার বলে সদস্য, মনোনীত সদস্য এবং নির্বাচিত সদস্য। ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী/প্রতিমন্ত্রী, সচিব এবং ফাউন্ডেশনের মহাপরিচালক পদাধিকার বলে বোর্ডের যথাক্রমে চেয়ারম্যান, ভাইস-চেয়ারম্যান ও সদস্য সচিব। মহাপরিচালক এর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা। সরকার কর্তৃক নিয়োগপ্রাপ্ত হয়ে তিনি বোর্ড অব গভর্নরস-এর সিদ্ধান্তসমূহ বাস্তবায়ন করেন। তাঁকে সহযোগিতা করার জন্য একজন সচিব, পনেরোজন পরিচালক, একজন প্রকল্প পরিচালক ও একজন প্রকল্প ব্যবস্থাপক (প্রেস) রয়েছেন। তাঁরা প্রত্যেকে এক একটি বিভাগের প্রধান। এ ছাড়া উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় তিনজন প্রকল্প পরিচালক রয়েছেন।

তহবিলের উৎস  ফাউন্ডেশনের তহবিল নিম্নোক্ত উৎসসমূহ থেকে আহরিত হয়: ক. ফাউন্ডেশনের কাছে হস্তান্তরিত বায়তুল মুকাররম ও ইসলামী একাডেমীর অর্থ; খ. সরকারের অনুদান ও ঋণ; গ. দেশের অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে সংগৃহীত ঋণ; ঘ. সরকারের পূর্বানুমতিক্রমে বিদেশি সরকার ও সংস্থা থেকে প্রাপ্ত সাহায্য ও অনুদান; ঙ. চাঁদা ও দান; চ. বিনিয়োগ আয়, রয়্যালটি ও ফাউন্ডেশনের নিজস্ব সম্পদ থেকে প্রাপ্ত আয় এবং ছ. অন্যান্য সূত্র থেকে প্রাপ্ত আয়।

কার্যক্রম  ফাউন্ডেশনের কর্মসূচি বাস্তবায়নের জন্য বিভিন্ন বিভাগ রয়েছে। কর্মসূচিসমূহ দ্বিবিধ: রাজস্ব ও উন্নয়ন। গৃহীত কার্যক্রমসমূহ ১৩টি বিভাগ (Department), ৪টি বিভাগীয় ও ৬৪টি জেলা কার্যালয়, ৭টি ইমাম প্রশিক্ষণ একাডেমি, ২৯টি ইসলামিক মিশন কেন্দ্র এবং ৮টি উন্নয়ন প্রকল্পের মাধ্যমে বাস্তবায়িত হয়ে থাকে। কোনো কোনো বিভাগে আবার একাধিক শাখা রয়েছে; কোনো কোনো বিভাগ শুধু রাজস্ব বা উন্নয়ন কর্মসূচি, আবার কোনো কোনো বিভাগ রাজস্ব ও উন্নয়ন উভয়বিধ কর্মসূচি বাস্তবায়ন করে। তেরটি বিভাগ হলো: প্রশাসন, সমন্বয়, অর্থ ও হিসাব, পরিকল্পনা, ইসলামিক মিশন, প্রকাশনা, গবেষণা, অনুবাদ ও সংকলন, ইসলামী বিশ্বকোষ সংকলন ও প্রকাশনা, দ্বীনি দাওয়াত ও সংস্কৃতি, ইসলামিক ফাউন্ডেশন লাইব্রেরি, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ছাপাখানা এবং যাকাত বোর্ড।

বিভাগীয়.জেলা কার্যালয় ১৯৭৯-৮০ অর্থবছরে চারটি বিভাগীয় এবং তিনটি জেলা সদরে কার্যালয় স্থাপন করার মাধ্যমে ফাউন্ডেশনের কার্যক্রম জেলা পর্যায়ে সম্প্রসারণের প্রক্রিয়া শুরু হয় এবং ১৯৮৯ সাল নাগাদ প্রতিটি জেলা সদরে ফাউন্ডেশনের কার্যালয় স্থাপন করা হয়। এসব বিভাগীয় ও জেলা কার্যালয়সমূহ ফাউন্ডেশনের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য বাস্তবায়ন করে থাকে।

প্রকাশনা-কার্যক্রম ফাউন্ডেশনের প্রকাশনা-কার্যক্রম বিশ্বকোষ বিভাগ, অনুবাদ ও সংকলন বিভাগ, প্রকাশনা বিভাগ এবং গবেষণা বিভাগের মাধ্যমে বাস্তবায়িত হয়ে থাকে। ফাউন্ডেশন ‘ইসলামী বিশ্বকোষ প্রকল্পে’র অধীনে ২৭ খন্ডে বৃহত্তর ইসলামী বিশ্বকোষ প্রকাশ করেছে। উক্ত প্রকল্পের অধীনে চলতি পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় সীরাত বিশ্বকোষ নামে ২২ খন্ডে সমাপ্য আরেকটি বিশ্বকোষ প্রকাশের কাজ শুরু হয়েছে। প্রকাশনা বিভাগ থেকে ইসলামী মৌলতত্ত্ব, ইসলামের ইতিহাস-ঐতিহ্য, সাহিত্য-সংস্কৃতি এবং জাতির শ্রেষ্ঠ মনীষীদের জীবনীবিষয়ক প্রায় দু হাজারের অধিক গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে। অগ্রপথিক ও সবুজ পাতা নামে দুটি মাসিক পত্রিকাও প্রকাশিত হচ্ছে। গবেষণা বিভাগ ত্রৈমাসিক গবেষণামূলক ইসলামিক ফাউন্ডেশন পত্রিকা প্রকাশ করছে। এ গবেষণা পত্রিকা ইতোমধ্যে চল্লিশ বর্ষ অতিক্রম করেছে। এ বিভাগ থেকে বেশকিছু মৌলিক গবেষণামূলক গ্রন্থও প্রকাশিত হয়েছে। তন্মধ্যে ইসলাম ও মুসলিম উম্মার ইতিহাস, Scientific Indications in the Holy Quran, বিজ্ঞান ও কারিগরি ক্ষেত্রে মুসলমানদের অবদান, বিধিবদ্ধ ইসলামী আইন ফাতওয়া ও মাসায়েল, আল-কুরআনে অর্থনীতি, আল-কুরআনে বিজ্ঞান, মুসলিম বাংলার উৎপত্তি ও বিকাশ ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। এ বিভাগ থেকে অর্ধশতাধিক গবেষণাগ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে।

ইমাম প্রশিক্ষণ কার্যক্রম  মুসলিম প্রধান বাংলাদেশে স্বভাবতই মসজিদ-মক্তবের সংখ্যা বেশি। এসব মসজিদের ইমামদের ইসলামের মৌলিক বিষয় সম্পর্কে জ্ঞান দানের পাশাপাশি গণশিক্ষা, পরিবারকল্যাণ, কৃষি, মৎস্যচাষ, প্রাথমিক চিকিৎসা, বৃক্ষরোপণ, বনায়ন, হাঁস-মুরগি ও গবাদি পশু পালন ও চিকিৎসা ইত্যাদি বিষয়ে প্রশিক্ষণ দানের মাধ্যমে তাদেরকে উপার্জনক্ষম এবং দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে অবদান রাখার মতো উপযুক্ত করে গড়ে তোলার উদ্দেশ্যে ১৯৭৮ সালের শেষ দিকে ‘ইমাম প্রশিক্ষণ প্রকল্প’ নামে একটি প্রকল্প গৃহীত হয়। এ পর্যন্ত সাতটি ইমাম প্রশিক্ষণ একাডেমির অধীনে ছেচল্লিশ হাজার অধিক ইমামকে প্রশিক্ষণ দান করা হয়। এ প্রকল্পের আওতায় পর্যায়ক্রমে ফাউন্ডেশনের সকল কর্মকর্তা-কর্মচারীর অফিস-ব্যবস্থাপনায় দক্ষতা ও ইসলাম-সম্পর্কিত জ্ঞান বৃদ্ধির লক্ষ্যে প্রশিক্ষণ প্রদানেরও কর্মসূচি রয়েছে।

গ্রন্থাগার-ব্যবস্থাপনা  জাতীয় পর্যায়ে গুরুত্বপূর্ণ একটি আধুনিক ইসলামী গ্রন্থাগার স্থাপন ইসলামিক ফাউন্ডেশনের লক্ষ্য। বর্তমানে এর গ্রন্থাগারটি বায়তুল মুকাররম মসজিদ চত্বরে অবস্থিত। এ পর্যন্ত লক্ষাধিক দেশি-বিদেশি গ্রন্থ এখানে সংগৃহীত হয়েছে এবং নতুন সংগ্রহকাজও চলছে। দেশি-বিদেশি অনেক সাময়িকীও এ সংগ্রহের অন্তর্ভুক্ত। গ্রন্থাগারের সম্প্রসারণ অব্যাহত রয়েছে। এটি বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম গ্রন্থাগার। দেশের প্রতিটি বিভাগীয় ও জেলা সদরে একটি করে ইসলামী গ্রন্থাগার রয়েছে।

সাধারণ মানুষের মধ্যে পাঠাভ্যাস গড়ে তোলার উদ্দেশ্যে ফাউন্ডেশন ১৯৮০-৮১ অর্থবছরে মসজিদভিত্তিক পাঠাগার স্থাপনের একটি প্রকল্প গ্রহণ করে। এ প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য ইসলামী আদর্শ ও মূল্যবোধ সম্পর্কে মানুষের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি করা। এ লক্ষ্যে নতুন নতুন পাঠক সৃষ্টির জন্য বিভাগ ও জেলা পর্যায়ে ইসলামী চিন্তাবিদদের সমন্বয়ে সেমিনার ও ওয়ার্কশপের আয়োজন করা এবং আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন-কর্মকান্ডের সঙ্গে মসজিদ-পাঠাগারসমূহকে সম্পৃক্ত করা হচ্ছে। এ প্রকল্পের আওতায় এ পর্যলত ৬৪টি মডেল পাঠাগারসহ ১৮,৯০০টির অধিক পাঠাগার স্থাপন করা হয়েছে।

ইসলামিক মিশন  ১৯৮৩ সালের জুলাই মাস থেকে ইসলামিক মিশন প্রতিষ্ঠার কাজ শুরু হয়। সেবামূলক এ কর্মসূচির অন্তর্ভুক্ত রয়েছে চিকিৎসা, এতিম ও দুঃস্থ নারীদের সেবা ও বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণ প্রদান, বেকার যুবকদের প্রশিক্ষণ ও সুদমুক্ত ঋণ প্রদান এবং বৃত্তিমূলক উপকরণ সরবরাহের মাধ্যমে উপার্জনক্ষম করে তোলা এবং সে সঙ্গে স্বাক্ষরতা দান ও ইসলামী জীবনব্যবস্থা সম্পর্কে মৌলিক জ্ঞান দান করা। দেশের ২৯টি অঞ্চলে মিশন প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে এবং পর্যায়ক্রমে প্রতি জেলায় মিশন স্থাপনের পরিকল্পনা রয়েছে। এ ছাড়া সমাজের নৈতিক অবক্ষয় রোধ এবং ইসলামী মূল্যবোধ জাগ্রত করার উদ্দেশ্যে স্বেচ্ছাসেবী প্রশিক্ষণ ও মাহফিলের আয়োজন করা হয়ে থাকে।

মিশনের আওতায় আরও দুটি কাজ শুরু করা হয়েছে মক্তব শিক্ষক ও মুবাল্লিগ (ধর্ম প্রচারক) প্রশিক্ষণ। মসজিদ ও দহলিজে পরিচালিত মক্তব শিক্ষকগণকে এমনভাবে প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে যাতে তারা কুরআন পাঠ শিক্ষাদানের সঙ্গে সঙ্গে বাংলা, অঙ্ক, স্বাস্থ্যবিধি ইত্যাদি সম্পর্কেও ছাত্রদেরকে প্রাথমিক জ্ঞান দান করতে পারেন এবং কৃষি, পশুপালন, পরিবেশ পরিচ্ছন্ন রাখা ইত্যাদি সম্পর্কেও প্রাথমিক ধারণা দিতে পারেন। ডাক্তার, প্রকৌশলী, প্রশাসক, ব্যবসায়ী, শিক্ষক প্রভৃতি স্তরের প্রশিক্ষণ গ্রহণেচ্ছু নাগরিকদেরকে মুবাল্লিগ প্রশিক্ষণের জন্য নির্বাচন করা হয়। মিশনে কর্মরত ডাক্তার, প্রোগ্রাম অফিসার ও শিক্ষকগণ মুবাল্লিগরূপে প্রশিক্ষণ লাভ করে থাকেন।

মিশনের মাধ্যমে স্বাস্থ্যসেবা কার্যক্রমের একটি বিশেষ দিক হলো দরিদ্র রোগীদের জন্য অ্যালোপ্যাথিক, হোমিওপ্যাথিক ও ইউনানি চিকিৎসার ব্যবস্থা করা। প্রতিদিন অসংখ্য দুঃস্থ মানুষ এ সকল চিকিৎসাকেন্দ্র থেকে বিনামূল্যে ব্যবস্থাপত্র ও ঔষধ পেয়ে থাকে।

যাকাত বোর্ড  যাকাতের টাকা সুষ্ঠুভাবে উত্তোলন ও বণ্টন নিশ্চিত করার জন্য ১৯৮২ সালের ৫ জানুয়ারি একটি যাকাত বোর্ড গঠন করা হয়। এতে ১৩ সদস্যবিশিষ্ট একটি কমিটি রয়েছে। দেশের খ্যাতনামা একজন মুসলিম জ্ঞানী ব্যক্তি এর চেয়ারম্যান নিযুক্ত হন। যাকাত ফান্ডে প্রাপ্ত অর্থ দিয়ে সমাজের অসহায় ও দুস্থ জনগণকে পুনর্বাসনের জন্য বিভিন্ন প্রকল্প গ্রহণ করা হয়, যেমন: ক. দুস্থ ও দরিদ্র শিশুদের বিনামূল্যে চিকিৎসার জন্য টঙ্গীস্থ শিশু হাসপাতাল পরিচালনা; খ. অসহায় বেকারদের কর্মক্ষম করে পুনর্বাসনের উদ্দেশ্যে ২৫টি সেলাই প্রশিক্ষণ কেন্দ্র পরিচালনা; গ. দরিদ্র ও দুস্থ ছাত্রদের মধ্যে শিক্ষা উপকরণ বিতরণ; ঘ. দরিদ্র মেধাবী ছাত্রদেরকে বৃত্তি প্রদান; ঙ. রিকশা/ভ্যানগাড়ি প্রদানের মাধ্যমে সহায়-সম্বলহীন বেকারদের পুনর্বাসন; চ. হাঁস-মুরগি পালনের মাধ্যমে দুস্থ বিধবারা যাতে পুনর্বাসিত হতে পারে সেজন্য আর্থিক সহযোগিতা দান ইত্যাদি।

দ্বীনি দাওয়াত ও সংস্কৃতিচর্চা  দ্বীনি দাওয়াত ও সাংস্কৃতিক কর্মকান্ড পরিচালনা ফাউন্ডেশনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ কর্মসূচি। ইসলামের শিক্ষা, আদর্শ ও মূল্যবোধ প্রচার; ধর্মীয় ও জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ দিবসসমূহ উদযাপন; সাহাবা কেরাম (রা), মুসলিম মনীষী ও জাতীয় নেতৃবৃন্দ স্মরণে এবং ইসলামের গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে আলোচনা সভা ও সেমিনার-সিম্পোজিয়ামের আয়োজন; বায়তুল মুকাররম মসজিদে কুরআনুল করিমের তাফসির, দরসে হাদীস এবং বিষয়ভিত্তিক ওয়াজ মাহফিলের আয়োজন;  ঈদুল ফিতরঈদুল আযহাশবে কদর, শবে বরাআত, মীলাদুন্নবী প্রভৃতি উপলক্ষে বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ; স্থানীয়, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে অনুষ্ঠিতব্য কেরাত ও হেফ্জ প্রতিযোগিতার আয়োজন ইত্যাদি এ বিভাগের কাজ। এসব উপলক্ষ্যে প্রতিবছর বিভিন্ন প্রতিযোগিতারও আয়োজন করা হয়।

জাতীয় চাঁদ দেখা কমিটি  ইসলামিক ফাউন্ডেশনের ব্যবস্থাপনায় ১৯৮১ সালে গঠিত হয়। ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী/প্রতিমন্ত্রী এর চেয়ারম্যান এবং এতে প্রখ্যাত উলামায়ে কেরাম এবং আবহাওয়া অধিদপ্তর, মহাকাশ গবেষণা ও দূর অনুধাবন কেন্দ্র, তথ্য মন্ত্রণালয় ও অন্যান্য কয়েকটি মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ বেতার ও টেলিভিশন ও ঢাকা আলীয়া মাদ্রাসার প্রতিনিধি এবং ঢাকার জেলা প্রশাসক সদস্য হিসেবে কাজ করেন। দেশের ৬৪টি জেলা সদরেও চাঁদ দেখা কমিটি রয়েছে। প্রতি হিজরী মাসের ২৯ তারিখে চাঁদ দেখা কমিটির সভা অনুষ্ঠিত হয়। জেলা প্রশাসকগণের সভাপতিত্বে ফাউন্ডেশনের জেলা কার্যালয়ের তত্ত্বাবধানে সারাদেশ থেকে চাঁদ দেখার সংবাদ সংগ্রহ করা হয়। সংগৃহীত সংবাদের ভিত্তিতে কমিটি চাঁদ দেখার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। এ কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বাংলাদেশ এবং মালদ্বীপের মুসলমানগণ বিভিন্ন ধর্মীয় উৎসব ও বিধি পালন করেন।

মসজিদভিত্তিক শিক্ষাকার্যক্রম এর আওতায় রয়েছে শিশু ও গণশিক্ষা নামক একটি বৃহৎ প্রকল্প। ১৯৯২ সাল থেকে এ প্রকল্পের কাজ শুরু হয়। প্রকল্পের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য হচ্ছে: ক. ৪-৫ বছর বয়স্ক শিশুদের জন্য মসজিদভিত্তিক একটি সুসংগঠিত প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা কার্যক্রম চালুর মাধ্যমে প্রাথমিক পর্যায়ের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তির হার বৃদ্ধি করা; খ. মসজিদভিত্তিক প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামোতে প্রস্ত্ততিমূলক শিক্ষা প্রদানপূর্বক শিক্ষাঙ্গন-বহির্ভূত ৬-১০ বয়ঃস্তরের শিশুদেরকে প্রাথমিক পর্যায়ে বিদ্যালয়ে ফিরিয়ে আনার পথ সুগম করা; গ. বিদ্যালয়ত্যাগী বা বিদ্যালয়ে যায় নি এরূপ ১১-১৪ বয়ঃস্তরের কিশোর-কিশোরীদের জন্য মসজিদভিত্তিক উপ-আনুষ্ঠানিক শিক্ষা প্রদানের ব্যবস্থা গ্রহণ; ঘ. মসজিদভিত্তিক এ কর্মসূচির মাধ্যমে চলমান উপ-আনুষ্ঠানিক শিক্ষাকার্যক্রম আরও শক্তিশালীকরণ ও কর্মসূচির সম্প্রসারণপূর্বক ১৫-৩৫ বয়ঃস্তরের নিরক্ষর জনগোষ্ঠীকে স্বাক্ষরজ্ঞানসম্পন্ন করে তোলার ব্যবস্থা গ্রহণ এবং ঙ. নব্য ও স্বল্পশিক্ষা-প্রাপ্তদের জন্য জীবনব্যাপী শিক্ষাগ্রহণ কার্যক্রম অব্যাহত রাখা, যাতে তাদের অর্জিত জ্ঞান কার্যকর থাকে এবং তাদের পেশাগত দক্ষতা বৃদ্ধি পায়। এ পর্যন্ত এ প্রকল্পের আওতায় প্রায় ৯,৮০,০০০ জনকে অক্ষরজ্ঞান প্রদান করা হয়েছে।

ইসলামিক ফাউন্ডেশন পুরস্কার  ইসলাম ও মুসলমানদের জাতীয় জীবনের বিভিন্ন ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য অবদানের স্বীকৃতি প্রদানের উদ্দেশ্যে ১৯৮২ সালে ‘ইসলামিক ফাউন্ডেশন পুরস্কার’ প্রবর্তন করা হয়। ইসলামের মূলতত্ত্ব, সীরাতগ্রন্থ, সমাজবিজ্ঞান, বিজ্ঞানচর্চা, সৃজনশীল সাহিত্য, ইতিহাস, জীবনীগ্রন্থ,  শিশুসাহিত্য, অনুবাদ, শিক্ষা, সাংবাদিকতা, শিল্পকলা,  ইসলাম প্রচার ও সমাজসেবার ক্ষেত্রে প্রতি হিজরি সনে এ পুরস্কার দেওয়া হতো; তবে কিছুকাল যাবৎ নিয়মিত এ পুরস্কার প্রদান বন্ধ রয়েছে।

অন্যান্য কার্যক্রম ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ উপর্যুক্ত কার্যক্রম ছাড়াও নানা ধরনের উন্নয়নমূলক, সমাজ-সচেতনতা ও শিক্ষামূলক কর্মকান্ড পরিচালনা করে থাকে, যেমন: শিক্ষিত, বিশেষত, মাদ্রাসা শিক্ষাপ্রাপ্ত বেকার যুবকদের বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণ প্রদানপূর্বক উপার্জনক্ষম করে তোলার জন্য মসজিদকেন্দ্রিক সমাজকল্যাণমূলক কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে; ইসলামিক একাডেমি কর্তৃক প্রবর্তিত  আরবি শিক্ষাদানের কোর্সটি সম্প্রসারিত আকারে চালু রাখা হয়েছে এবং দুস্থ ও বাস্ত্তহারা মানুষের কর্মসংস্থান ও পুনর্বাসনের উদ্দেশ্যে ‘হুকুকুল ইবাদ’-এর আওতায় সহায়তামূলক কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা হয়েছে।  [সৈয়দ আশরাফ আলী এবং সৈয়দ মোহাম্মদ শাহ এমরান]

গ্রন্থপঞ্জি The Islamic Foundation Act-1975 (Act XVII of 1975); যাকাত বোর্ড অ্যাক্ট ১৯৮২; ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ পরিচিতি, সংক্ষিপ্ত ইসলামী বিশ্বকোষ, ১ম খন্ড, ১৯৮৮।