বৃহস্পতি মিশ্র্র, রায়মুকুট
বৃহস্পতি মিশ্র্র, রায়মুকুট (১৫শ শতক) স্মার্ত ও সংস্কৃত পন্ডিত। গুরু শ্রীধরের নিকট অধ্যয়ন করে তিনি ‘মিশ্র’ উপাধি লাভ করেন। তাঁর রচিত দুখানি স্মৃতিনিবন্ধ গ্রন্থ স্মৃতিরত্নহার ও রায়মুকুট পদ্ধতি থেকে জানা যায় যে, তিনি ‘মহীন্তা’ গোত্রের রাঢ়ীশ্রেণীর ব্রাহ্মণ ছিলেন। তাঁর পৃষ্ঠপোষক ছিলেন গৌড়াধিপ সুলতান জালালুদ্দীন (১৪১৮-১৪৩১) ও বারবক শাহ। জালালুদ্দীনের সময় বৃহস্পতি মিশ্র ছিলেন পন্ডিতদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ।
বৃহস্পতি ছিলেন পরম বৈষ্ণব ও গৌড়াধিপের অধীনে উচ্চ রাজকার্যে নিযুক্ত। মর্যাদার প্রতীক হিসেবে তিনি সুলতানের নিকট থেকে উজ্জ্বল মণিময় হার, ভাস্কর কুন্ডলদ্বয় এবং দশাঙ্গুলে ধারণযোগ্য প্রভাময় অঙ্গুরীয় লাভ করেন। শুধু তাই নয়, সুলতান তাঁকে হস্তিপৃষ্ঠে উপবেশন করিয়ে স্বর্ণপাত্রের জলে অভিষিক্ত করেন এবং পান্ডিত্যের স্বীকৃতিস্বরূপ ছত্র ও অশ্বসহ ‘রায়মুকুট’ উপাধি দান করেন। পরে তিনি আরও উপাধিতে ভূষিত হন, যেমন: মহীন্তাপনীয়, কবিচক্রবর্তী, রাজপন্ডিত, পন্ডিতসার্বভৌম, পন্ডিতচূড়ামণি, মহাচার্য ইত্যাদি।
বৃহস্পতি নিজ রচনায় শূলপাণির (আনু. ১৩৭৫-১৪৬০) শ্রাদ্ধবিবেক ও অন্যান্য গ্রন্থের উল্লেখ করেছেন; আবার রঘুনন্দন (১৬শ শতক) তাঁর মলমাসতত্ত্ব, শ্রাদ্ধতত্ত্ব প্রভৃতি গ্রন্থে রায়মুকুটের উল্লেখ করেছেন। সুতরাং রায়মুকুট ছিলেন শূলপাণির পরবর্তী, কিন্তু রঘুনন্দনের পূর্ববর্তী।
বৃহস্পতি মিশ্রের বিখ্যাত স্মৃতিগ্রন্থ স্মৃতিরত্নহার আনুমানিক ১৪৩০ থেকে ১৪৪০ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে এবং অমরকোষটীকা পদচন্দ্রিকা ১৪৭৪ খ্রিস্টাব্দে রচিত হয়। তিনি বিখ্যাত কয়েকটি সংস্কৃত কাব্যের টীকা রচনা করেন, যা সে সময়ে উক্ত গ্রন্থসমূহের চর্চায় বিশেষ সহায়ক ভূমিকা পালন করেছিল। সেগুলির মধ্যে সুবোধা নামে কুমারসম্ভবটীকা, রঘুবংশবিবেক নামে রঘুবংশটীকা, নির্ণয়বৃহস্পতি নামে শিশুপালবধটীকা, বোধবতী নামে মেঘদূতটীকা এবং গীতগোবিন্দের টীকা সবিশেষ উল্লেখযোগ্য। [সুরেশচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়]