বিচার বিভাগীয় উদ্যোগ

NasirkhanBot (আলোচনা | অবদান) কর্তৃক ২২:২৮, ৪ মে ২০১৪ তারিখে সংশোধিত সংস্করণ (Added Ennglish article link)

বিচার বিভাগীয় উদ্যোগ সাধারণ আইনে আদালতে বাদী-বিবাদী ব্যবস্থায় বিচারকদের নিরপেক্ষ বলে গণ্য করা হয়। যতক্ষণ না মামলার স্বার্থসংশ্লিষ্ট (লোকাস স্ট্যান্ডি) ব্যক্তি বা ব্যক্তিবর্গ বিচারকদের সামনে মামলা উপস্থাপন করেন ততক্ষণ তাঁরা কোনো ধরনের সিদ্ধান্ত দেবেন না বলে ধরে নেওয়া হয়। কমনওয়েলথভূক্ত অনেক রাষ্ট্রে লিখিত সংবিধান গৃহীত হবার পর সংবিধান প্রদত্ত মৌলিক অধিকার বাস্তবায়নের দায়িত্ব উচ্চতর আদালতের ওপর বর্তায়। এধরনের অধিকার লঙ্ঘনের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগে সুবিচার প্রার্থণা করে মামলা করা সমাজের দরিদ্র ও বঞ্চিত লোকদের জন্য কঠিন এবং কোনো কোনো সময় অসম্ভব হয়ে দাঁড়ায়। জনস্বার্থে উদ্বুদ্ধ কোনো ব্যক্তি বা কোনো সংস্থা স্বেচ্ছায় এ ধরনের অধিকার লঙ্ঘনের বিরুদ্ধে প্রতিকার চেয়ে মামলা করতে পারে।  দেওয়ানি কার্যবিধি অনুযায়ী ক্ষতিগ্রস্ত কোনো জনগোষ্ঠী বা জনস্বার্থে উদ্বুদ্ধ কোনো ব্যক্তি নিম্নতর আদালতে প্রতিকার প্রার্থণা করে জনস্বার্থে মামলা করতে পারলেও, ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তির পক্ষে শুধু হেবিয়াস কর্পাসের রিট মামলার ক্ষেত্র ছাড়া ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিবর্গ বা জনস্বার্থে উদ্বুদ্ধ ব্যক্তির পক্ষে হাইকোর্ট বিভাগে প্রতিকার চেয়ে মামলা করার কোনো বিধান সংবিধানে নেই।

যদি কোনো ব্যক্তি মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত না হয় তাহলে কোনো মৌলিক অধিকার লঙ্ঘন অথবা প্রশাসনিক সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে বিচার বিভাগীয় পর্যালোচনার প্রতিকার কামনা করতে পারে না। সামাজিক বা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তির পক্ষে অথবা স্বার্থে হাইকোর্ট বিভাগে জনস্বার্থে উদ্বুদ্ধ ব্যক্তির প্রতিকার প্রার্থনা করে মামলার ক্ষেত্রে স্বার্থ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির লোকাস স্ট্যান্ডির প্রশ্নটি দীর্ঘসময় নিষিদ্ধ ছিল। ১৯৭৪ সালে বেরুবাড়ি মামলার ক্ষেত্রে এই প্রশ্ন ওঠে এবং আদালত এই মর্মে তা বাতিল করে দেয় যে, অতীব গুরুত্বপূর্ণ সাংবিধানিক বিষয় আদালত বিবেচনা করতে পারে, তবে দাবি উত্থাপনকারীর ঐ ধরনের শুনানির আর্জি পেশ করার অধিকার আছে কিনা তা নিশ্চিত করতে হবে।

১৯৯২ সালে প্রথমবারের মতো বিচার বিভাগীয় স্বতঃপ্রনোদিত উদ্যোগ শুরু হয়। সংবাদপত্রের রিপোর্টের ভিত্তিতে হাইকোর্ট বিভাগ সাতক্ষীরার ডেপুটি কমিশনারের প্রতি একটি সুয়োমটো রুল জারি করে এবং শেষ পর্যন্ত নজরুল ইসলাম নামের একটি শিশুকে আটকাদেশ থেকে মুক্তি দানের আদেশ দেয়। হাফিজুর রহমানের মামলায় তালাকপ্রাপ্ত মুসলিম স্ত্রীর কোনো প্রকার আবেদন ছাড়াই হাইকোর্ট বিভাগ ঘোষণা দেয় যে, মহিলাটি তার পুনর্বিবাহ বা মৃত্যু পর্যন্ত তার সাবেক স্বামীর কাছ থেকে ভরণপোষণ লাভ করবে। অবশ্য পরবর্তী  সময়ে আপিল বিভাগ সে রায় বাতিল করে। হাইকোর্ট বিভাগ একটি সুয়োমটো রুলে ঘোষণা দেয় যে, হরতালের পক্ষে ও বিপক্ষের কার্যক্রম ফৌজদারি অপরাধ এবং একটি আমলযোগ্য বিষয়। ফৌজদারি মামলায় একটি শিশুকে অভিযুক্ত করা হচ্ছে এই মর্মে সংবাদপত্রে প্রকাশিত রিপোর্টের ভিত্তিতে হাইকোর্ট বিভাগ একটি সুয়োমটো রুল জারি করলে পুলিশ অভিযোগনামা (চার্জশিট) থেকে ছেলেটির নাম বাদ দেয়। তবে ভারতের সুপ্রিম কোর্টের মতো শুধু আদালত অবমাননাকারী ব্যক্তির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ ব্যতীত সংবাদপত্রের রিপোর্ট অথবা ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তি বা তার প্রতি সহানুভূতিসম্পন্ন কোনো ব্যক্তির চিঠির ভিত্তিতে হাইকোর্ট বিভাগ রীট এখতিয়ার মোতাবেক এখনও কোনো সুয়োমটো রুল জারি করে নি।  [কাজী এবাদুল হক]

আরও দেখুন জনস্বার্থ সংশ্লিষ্ট মামলা।