বাঁওড়
বাঁওড় (Baor) গাঙ্গেয় মৃতপ্রায় বদ্বীপ অঞ্চলে অবস্থিত নদীর পরিত্যক্ত বাহু। একে অশ্বক্ষুরাকৃতি হ্রদও বলা হয়ে থাকে। এগুলো দেখতে অনেকটা পিরিচ আকৃতির খাদের মতো। বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চলে বহুল পরিচিত বাঁওড় অনেকাংশেই বিল-এর সমার্থক। সাগরখালি, জালেশ্বর, ক্ষেদাপারা, রামপুর, পাঠানপাড়া, কাঠগড়া, যোগীনি ভাগীনি, ইছামতি, জয়দিয়া, মারজাত, হরিনা এবং আরিয়ল বাংলাদেশের প্রধান বাঁওড়গুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য। আয়তনের দিক দিয়ে এগুলো অর্ধ-বর্গ কিমি থেকে ১৩ বর্গ কিমি পর্যন্ত।
তুলনামূলকভাবে বিল-এর চাইতে বাঁওড় অধিক স্থিতিশীল এবং সাধারণত সারা বৎসর এগুলোতে পানি থাকে। বাঁওড় উৎপত্তির সাধারণ চিত্র হলো - নদীর গতিপথ পরিবর্তিত হওয়ায় অথবা জলধারার কোন অংশের উৎসমুখ পলিকণা ইত্যাদি দিয়ে ভরাট হয়ে মূলধারা থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ায় যে হ্রদ সৃষ্টি হয় তাকেই বাঁওড় বলে। মূল নদীতে যখন উঁচুমাত্রার বন্যা হয় কেবলমাত্র তখনই বাঁওড়গুলো বিপুল জলরাশি লাভ করে। তবে সাধারণভাবে বর্ষার সময় স্থানীয় বৃষ্টির পানি বাঁওড় এলাকায় এসে জমা হয় এবং এই সঞ্চিত জলরাশি কখনও কখনও আশেপাশের প্লাবনভূমিতে ছড়িয়ে পড়ে স্থানীয়ভাবে বন্যার সৃষ্টি করতে পারে। অসংখ্য জলজ উদ্ভিদ ও প্রাণীর আবাসস্থল হিসেবে বাঁওড় বাংলাদেশের জলাভূমির এক গুরুত্বপূর্ণ অংশরূপে পরিগণিত হয়ে আসছে। বাঁওড়-এর প্রান্তীয় এলাকার তুলনামূলক উঁচু ভূমিগুলো সাধারণত ধান চাষ এবং গো-চারণের জন্য ব্যবহূত হয়ে থাকে। [মোহা. শামসুল আলম]
আরও দেখুন জলাভূমি; বিল; হাওর।