সম্পত্তি হস্তান্তর আইন, ১৮৮২
সম্পত্তি হস্তান্তর আইন, ১৮৮২ (১৮৮২ সালের ৪নং আইন) সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলোর সম্পত্তি হস্তান্তর কার্যক্রম সম্পর্কিত আইনের কোনো কোনো অংশের ব্যাখ্যা ও সংশোধনের উদ্দেশ্যে প্রণীত। এটি কোন সমন্বিত আইন নয় অথবা এটি সম্পত্তি হস্তান্তরের ক্ষেত্রে সকল নিয়মকানুন বিষয়ক দলিলের তাৎপর্যও বহন করে না। এ আইনে কেবল স্বেচ্ছায় একজন জীবিত ব্যক্তি অপর জীবিত ব্যক্তির নিকট স্থাবর সম্পত্তি হস্তান্তর করতে পারে। আইনটি ব্রিটেনের স্থাবর সম্পত্তি আইনের ভিত্তিতে প্রণীত এবং এটির বহু ধারা ইতোপূর্বে নাকচ ও রহিতকৃত বিভিন্ন আইন থেকে গৃহীত হয়েছে।
জীবিত ব্যক্তিদের মধ্যে সম্পত্তি হস্তান্তরে আইনটি প্রযোজ্য হলেও ১৯২৫ সালের একটি সংশোধনীর মাধ্যমে ‘জীবিত ব্যক্তি’ কথাটির চৌহদ্দি বাড়ানো হয়, যাতে রয়েছে কোনো কোম্পানি বা কোনো সমিতির মতো কল্পিত বা বৈধ কোনো ব্যক্তি। এতে আছে বর্তমান তথা ভবিষ্যতের লেনদেন ও হস্তান্তর। এ আইনে ‘সম্পত্তি’ সামগ্রিক অর্থে ব্যবহূত, যাতে শুধু ভৌত বস্ত্তই নয়, এগুলির অন্তর্গত স্বার্থও বোঝায়। এতে আছে দায়মোচন সংক্রান্ত ন্যায়বিচার লাভের অধিকার ও জামানতসহ ঋণ। মামলাযোগ্য দাবিগুলোও এই শ্রেণীর সম্পত্তি।
সম্পত্তি হস্তান্তর আইন বিক্রয়, বন্ধক, দান, বিনিময় ও ইজারা ধরনের কয়েক প্রকার হস্তান্তরের ক্ষেত্রে সুনির্দিষ্টভাবে ব্যবহূত হয়। একশত বা তদূর্ধ্ব টাকার স্থাবর সম্পত্তির বিক্রয় অবশ্যই নিবন্ধীকরণ দলিলে সম্পন্ন হতে হবে। একশত টাকার কম মূল্যের স্থাবর সম্পত্তি নিবন্ধীকরণ দলিল বা সাধারণ দখলদানের মাধ্যমে সম্পন্ন হতে পারে। এক্ষেত্রে ক্রেতা ও বিক্রেতার অধিকার ও বাধ্যবাধকতা এ আইনের ৫৫ ধারায় উল্লেখ করা হয়েছে। এ আইনে বন্ধক হলো ঋণ হিসেবে অগ্রিম প্রদত্ত বা প্রদেয় অর্থ অথবা কোনো বর্তমান বা ভবিষ্যৎ দেনা পরিশোধ বা আর্থিক দায় সৃষ্টি করতে পারে এরূপ কোনো কার্যসম্পাদনের নিশ্চয়তা বিধানের উদ্দেশ্যে কোনো নির্দিষ্ট স্থাবর সম্পত্তির স্বত্ব হস্তান্তর। এ আইনে ৬ ধরনের বন্ধকের উল্লেখ করা হয়েছে; যেমন (১) অমিশ্র বন্ধক, (২) শর্তাধীন বিক্রয়ে বন্ধক, (৩) খায়খালাসি বন্ধক, (৪) ইংলিশ বন্ধক, (৫) দলিল জমা দেওয়া বন্ধক ও (৬) শ্রেণীহীন বন্ধক। সকল বন্ধকের ক্ষেত্রে গচ্ছিত টাকা একশত বা ততোধিক হলে ‘দলিল জমা দেওয়া বন্ধক’ ছাড়া অন্যান্য যাবতীয় বন্ধকের ক্ষেত্রে অন্তত দুজন সাক্ষিসহ নিবন্ধীকরণ আবশ্যক।
সম্পত্তি হস্তান্তর আইন একটি সাধারণ আইন, যা বিভিন্ন ধরনের স্থাবর সম্পত্তি হস্তান্তর ও মামলাযোগ্য দাবির ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। এ আইন সংক্রান্ত যেকোন বিরোধ দেওয়ানি আদালতের এখতিয়ারভুক্ত। এ বিষয়ে পৃথক আইন চালু না হওয়া পর্যন্ত যেখানে কৃষিজমি হস্তান্তর বাংলার প্রজাস্বত্বব আইন (বর্তমানে পূর্ব-বাংলা জমিদারি অধিগ্রহণ ও প্রজাস্বত্ত্ব আইন) দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হতো সেখানে অকৃষিজমি এবং বসতবাড়ি ও গৃহসংলগ্ন জায়গা উভয়ের হস্তান্তর সম্পত্তি হস্তান্তর আইনের আওতাভুক্ত ছিল। এসব পৃথক ও বিশেষ সংবিধি হলো: (ক) অকৃষি প্রজাস্বত্ব আইন ১৯৪৯ এবং (খ) বাড়ি ভাড়া নিয়ন্ত্রণ আইন ১৯৯১। শেষোক্ত আইনটি ১৯৪২ সালের ‘বাংলার বাড়িভাড়া নিয়ন্ত্রণ আদেশ’ থেকে উদ্ভূত। পৌর এলাকার বাড়িভাড়া সম্পর্কিত বিরোধ, ভাড়াটিয়া কর্তৃক ভাড়া পরিশোধ, ভাড়া বাড়ি মেরামত বিষয়ে বাড়িভাড়া নিয়ন্ত্রণ ১৯৯১ আইনে নিয়োগকৃত কন্ট্রোলারের (বাড়িভাড়া) নিকট অভিযোগ দায়ের করতে হয় এবং তিনিই তা নিষ্পত্তি করেন। [আমিনুল হক]