বড়লেখা উপজেলা
বড়লেখা উপজেলা (মৌলভীবাজার জেলা) আয়তন: ৩১৫.৫৮ বর্গ কিমি। অবস্থান: ২৪°৩৬´ থেকে ২৪°৫০´ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৯২°০১´ থেকে ৯০°১৮´ পূর্ব দ্রাঘিমাংশ। সীমানা: উত্তরে সিলেট জেলার বিয়ানীবাজার, দক্ষিণে জুড়ী উপজেলা, পূর্বে ভারতের আসাম রাজ্য, পশ্চিমে কুলাউড়া, ফেঞ্চুগঞ্জ ও গোলাপগঞ্জ উপজেলা। ভারতের সঙ্গে আন্তর্জাতিক সীমান্তের দৈর্ঘ্য ২০ কিমি।
জনসংখ্যা ১৫৫২২১; পুরুষ ৭৭৯৮৯, মহিলা ৭৭২৩২। মুসলিম ১৩০৪১৬, হিন্দু ২৩৪৮৩, বৌদ্ধ ১২৬৯ এবং অন্যান্য ৫৩। এ উপজেলায় মণিপুরী, খাসিয়া, সাঁওতাল প্রভৃতি আদিবাসী জনগোষ্ঠীর বসবাস রয়েছে।
জলাশয় প্রধান নদী: সোনাই, জুড়ী। বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় হাওর ‘হাকালুকি’র একাংশ এ উপজেলার অন্তর্ভুক্ত। হাকালুকি হাওরের মোট আয়তন ১৮১.১৫ বর্গ কিলোমিটারের মধ্যে বড়লেখার অন্তর্ভুক্ত ৭২.৪৬ বর্গ কিমি।
প্রশাসন থানা গঠিত হয় ১৯৪০ সালে এবং থানাকে উপজেলায় রূপান্তর করা হয় ১৯৮৩ সালের ১ জুলাই।
উপজেলা | ||||||||
পৌরসভা | ইউনিয়ন | মৌজা | গ্রাম | জনসংখ্যা | ঘনত্ব(প্রতি বর্গ কিমি) | শিক্ষার হার (%) | ||
শহর | গ্রাম | শহর | গ্রাম | |||||
১ | ৮ | ১০৯ | ২৫৩ | ১৪৩৬৫ | ১৪০৮৫৬ | ৪৯২ | ৫৩.৭ | ৪২.০ |
উপজেলা শহর | ||||
আয়তন (বর্গ কিমি) | মৌজা | লোকসংখ্যা | ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) | শিক্ষার হার (%) |
১০.১৮ | ১০ | ২৭৪৫৩ | ২৬৯৭ | ৫৪.৮ |
ইউনিয়ন | ||||
ইউনিয়নের নাম ও জিও কোড | আয়তন (একর) | লোকসংখ্যা | শিক্ষার হার (%) | |
পুরুষ | মহিলা | |||
উত্তর দক্ষিণভাগ ৮০ | ৭৭১১ | ৬৭২৭ | ৬৮০৬ | ৩৯.১৯ |
উত্তর শাহবাজপুর ৮৫ | ১১২১০ | ৯৩৩১ | ৯৬০৬ | ৩৭.০১ |
তালিমপুর ৯৪ | ২০৬৫৮ | ৮৬৮৩ | ৮৭১৮ | ৪১.১২ |
দক্ষিণ শাহবাজপুর ২৯ | ১১৫৫৪ | ১০৩১৬ | ১০২০৬ | ৩৪.৮৫ |
দাসের বাজার ৩৯ | ৫৩২২ | ৮৬৫০ | ৭৮৩৩ | ৫২.০৯ |
নিজ বাহাদুরপুর ৬৩ | ৬০৮২ | ৯৩৮৭ | ৯৫৮৩ | ৪৬.৮৫ |
বড়লেখা ০৭ | ১০০৬৭ | ১৮৩১৪ | ১৭৩৯৪ | ৪৮.৫৫ |
বর্নি ১৫ | ৩৭৭৫ | ৬৫৮১ | ৭০৮৬ | ৩৯.৬০ |
সূত্র আদমশুমারি রিপোর্ট ২০০১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো।
প্রাচীন নিদর্শনাদি ও প্রত্নসম্পদ দাসের বাজার ইউনিয়নের লঘাটি গ্রামে অবস্থিত খাজা মসজিদ (আনুমানিক ষোড়শ শতাব্দীতে নির্মিত), মাধবকুন্ড জলপ্রপাতের কাছে অবস্থিত মাধব মন্দির।
ঐতিহাসিক ঘটনাবলি ১৯৫৭ সালের ঐতিহাসিক সিপাহী বিপ্লবের সময় উপজেলার শাহবাজপুরের অদুরে এক প্রচন্ড যুদ্ধ হয়। এ যুদ্ধে ২৬ জন বিপ্লবী সিপাহী মৃত্যুবরণ করে। ব্রিটিশ আমলে এ উপজেলায় ঐতিহাসিক নানকার বিদ্রোহ সংঘটিত হয়। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় এ উপজেলা ৪ নং সেক্টরের অধীন ছিল। ২৭ মার্চ সূচিত হয় প্রতিরোধ এবং ৬ মে পর্যন্ত বড়লেখা হানাদার শত্রু মুক্ত ছিল। বিক্ষুব্ধ জনতার হাতে বেশ কয়েকজন পাকসেনা নিহত হয়। ৬ ডিসেম্বর বড়লেখা শত্রু মুক্ত হয়।
মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিচিহ্ন বধ্যভূমি ৪ (শাহবাজপুর, বড়লেখা, ছোটলেখা, লক্ষ্মীছড়া)।
ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান মসজিদ ৩৫২, মন্দির ৬১, গির্জা ৯। উল্লেখযোগ্য ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান: খাজা মসজিদ, চান্দগ্রাম মসজিদ, শাহবাজপুর মসজিদ, মাধবকুন্ড মন্দির।
শিক্ষার হার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড় হার ৪২.৭%; পুরুষ ৪৬.৩%, মহিলা ৩৯.১%। উল্লেখযোগ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান: বড়লেখা ডিগ্রি কলেজ (১৯৮৬), এবাদুর রহমান চৌধুরী টেকনিক্যাল এন্ড বিজনেস ম্যানেজমেন্ট কলেজ (২০০৪), ছিদ্দিক আলী উচ্চ বিদ্যালয় (১৯২৭), পি সি উচ্চ বিদ্যালয় (১৯৩৩), শাহবাজপুর উচ্চ বিদ্যালয় (১৯৪০), ভাগাডহর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় (১৮০০), ভট্টলী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় (১৮০৫), বর্ণি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় (১৮০৫), সুজাউল আলিয়া মাদ্রাসা (১৮৯০), গাংকুল মাদ্রাসা, চান্দগ্রাম মাদ্রাসা, দৌলতপুর মাদ্রাসা উল্লেখযোগ্য।
পত্র-পত্রিকা ও সাময়িকী সাপ্তাহিক: বড়লেখা, বড়কণ্ঠ।
সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান লাইব্রেরি ২, ক্লাব ১৩, মহিলা সমিতি ৬।
দর্শনীয় স্থান পাথারিয়া পাহাড়ে মাধবকুন্ড জলপ্রপাত, সমনভাগ চা-বাগান লেক ও হাকালুকি হাওর।
জনগোষ্ঠীর আয়ের প্রধান উৎস কৃষি ৩৮.৭৪%, অকৃষি শ্রমিক ৯.৯৭%, শিল্প ২.৫২%, ব্যবসা ১০.৫৭%, পরিবহণ ও যোগাযোগ ১.৪৮%, চাকরি ৪.৯৪%, নির্মাণ ১.৬০%, ধর্মীয় সেবা ০.৪৪%, রেন্ট অ্যান্ড রেমিটেন্স ১৫.৫৩% এবং অন্যান্য ১৪.২৩%।
কৃষিভূমির মালিকানা ভূমিমালিক ৪৭.৩১%, ভূমিহীন ৫২.৬৯%।
প্রধান কৃষি ফসল ধান, গম, আলু, শাকসবজি, তিল, পান, চা।
প্রধান ফল-ফলাদিব আম, জাম, কাঁঠাল, লিচু, পেয়ারা, বাতাবি লেবু, কমলা, কুল, নারিকেল, আনারস, কলা।
মৎস্য, গবাদিপশু ও হাঁস-মুরগির খামার এ উপজেলায় মৎস্য, গবাদিপশু ও হাঁস-মুরগির খামার রয়েছে। উপজেলায় হাকালুকি হাওর ও বহুসংখ্যক বিল থাকার জন্য মৎস্য সম্পদে সমৃদ্ধ হয়ে উঠেছে।
যোগাযোগ বিশেষত্ব পাকারাস্তা ১৩২.২২ কিমি, আধা-পাকারাস্তা ৯ কিমি, কাঁচারাস্তা ৪২২.৫৪ কিমি; রেলপথ ১৯ কিমি; নৌপথ ১১ নটিক্যাল মাইল।
বিলুপ্ত বা বিলুপ্তপ্রায় সনাতন বাহন পাল্কি, ঘোড়ার গাড়ি।
শিল্প ও কলকারখানা ধানকল, বরফকল, চা কারখানা, আগরবাতি কারখানা, আতর কারখানা।
কুটিরশিল্প স্বর্ণশিল্প, লৌহশিল্প, তাঁতশিল্প, মৃৎশিল্প, শীতলপাটি শিল্প, দারুশিল্প, বাঁশের কাজ, বেতের কাজ।
হাটবাজার ও মেলা হাটবাজার ২৩। পুরাতন বড়লেখা বাজার, হাজীগঞ্জ বাজার, চান্দগ্রাম বাজার, শাহবাজপুর বাজার, ভবানীগঞ্জ বাজার উল্লেখযোগ্য।
প্রধান রপ্তানিদ্রব্য চা, সুগন্ধী আতর, আগরবাতি।
বিদ্যুৎ ব্যবহার এ উপজেলার সবক’টি ওয়ার্ড ও ইউনিয়ন পল্লিবিদ্যুতায়ন কর্মসূচির আওতাধীন। তবে ১৮.৮৫% পরিবারের বিদ্যুৎ ব্যবহারের সুযোগ রয়েছে।
প্রাকৃতিক সম্পদ ১৯৫১ সালে কাঁঠালতলীর বিওসি তৈল কূপ ড্রিলিংএর সময় তেলের অত্যধিক চাপের ফলে সিমেন্ট প্লাগ দিয়ে এটি সীল করে দেয়া হয়। এছাড়া উপজেলার পাথারিয়া পাহাড় ও দুর্গম বোবারতল এলাকায় কয়লাসম্পদ মজুদ আছে। এ উপজেলার বনাঞ্চল ৯১৮৭.৫৫ হেক্টর এলাকা জুড়ে অবস্থিত।
পানীয়জলের উৎস নলকূপ ৬৪.৪১%, ট্যাপ ১.০১%, পুকুর ১৪.৫৬% এবং অন্যান্য ২০.০২%।
স্যানিটেশন ব্যবস্থা এ উপজেলার ৩১.৫০% (গ্রামে ৩০.৫৫% এবং শহরে ৩৩.১৬%) পরিবার স্বাস্থ্যকর এবং ৬১.২৬% (শহরে ৬৬.২০% এবং গ্রামে ৫৯.৪০%) পরিবার অস্বাস্থ্যকর ল্যাট্রিন ব্যবহার করে। ৭.২৪% পরিবারের কোনো ল্যাট্রিন সুবিধা নেই।
স্বাস্থ্যকেন্দ্র উপজেলা স্বাস্থ্যকেন্দ্র ১, উপস্বাস্থ্য কেন্দ্র ১, পরিবার পরিকল্পনা কেন্দ্র ৬, ক্লিনিক ২।
এনজিও আশা, ব্র্যাক, হীড, জনকল্যাণ কেন্দ্র।
[মোস্তফা সেলিম]
তথ্যসূত্র আদমশুমারি রিপোর্ট ২০০১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো; বড়লেখা উপজেলা সাংস্কৃতিক সমীক্ষা প্রতিবেদন ২০০৭।