পেট্রোলিয়াম জাতীয় পদার্থ
পেট্রোলিয়াম জাতীয় পদার্থ বাংলাদেশের পেট্রোলিয়াম জাতীয় পদার্থের বার্ষিক চাহিদা ৩,৩০০,০০০ মেট্রিক টন। দেশের বিদ্যমান পেট্রোলিয়াম পদার্থের মোট মজুত ক্ষমতা ৬,৮৭,০০০ মেট্রিক টন যার মধ্যে ইস্টার্ন রিফাইনারী লিমিটেড (ইআরএল)-এর মজুত ক্ষমতা ৩,৬৫,০০০ মেট্রিক টন। চট্টগ্রামে অবস্থিত বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশনের তিনটি প্রধান বিপণন কোম্পানীর পদ্মা অয়েল কোম্পানী লিমিটেড, যমুনা অয়েল কোম্পানী লিমিটেড ও মেঘনা অয়েল কোম্পানী (লিমিটেড)-এর প্রধান স্থাপনাসমূহের মোট মজুত ক্ষমতা ২,০৫,৬০০ মেট্রিক টন। চট্টগ্রাম ছাড়াও দেশের বিভিন্ন জেলায় তেল বিপণন কোম্পানীগুলোর ১৯টি তেল সংরক্ষণাগার রয়েছে। তেল সংরক্ষণাগারসমূহের অবস্থান যথাক্রমে গোদনাইল, ফতুল্লা, দৌলতপুর, ভৈরব, চাঁদপুর, বাঘাবাড়ি, বালাসি, চিলমারি, আশুগঞ্জ, রংপুর, ঢাকা, বরিশাল, ঝালকাঠি, শ্রীমঙ্গল, সিলেট, পার্বতীপুর, রাজশাহী, নাটোর ও হরিয়ানে।
চট্টগ্রাম থেকে পেট্রোলিয়াম পদার্থের ৮২% নদীপথে (উপকূলীয় ট্যাংকার), ৬% রেলপথে (ট্যাংক ওয়াগন/বক্স ওয়াগন), ১০% সড়কপথে (ট্যাংক লরি/ট্রাক) এবং ২% অন্যান্য স্থানীয় বাহনে (নৌকা, ঠেলাগাড়ী, ভ্যান ইত্যাদি) পরিবহণ করা হয়।
চট্টগ্রাম থেকে গোদনাইল, ফতুল্লা, দৌলতপুর, বরিশাল, ঝালকাঠি, চাঁদপুর, আশুগঞ্জ এবং ভৈরবের তেল সংরক্ষণাগারে পেট্রোলিয়াম পণ্য পরিবহণের জন্য ৭২টি উপকূলীয় ট্যাংকার (প্রতিটির ধারণ ক্ষমতা ৮৫০-১২০০ মেট্রিক টন) রয়েছে।
এছাড়া প্রায় ১০০০টি রেলওয়ে ট্যাংক ওয়াগন (ব্রডগেজ ও মিটারগেজ) রয়েছে। চট্টগ্রাম থেকে সিলেট, শ্রীমঙ্গল, রংপুর এবং ঢাকার তেল সংরক্ষণাগার সমূহে মিটারগেজ রেলপথে পেট্রোলিয়াম পণ্য পাঠানো হয়। অপরদিকে দৌলতপুর থেকে নাটোর, পার্বতীপুর, হরিয়ান এবং রাজশাহীর তেল সংরক্ষণাগার সমূহে ব্রডগেজ রেলপথে পেট্রোলিয়াম পণ্য পাঠানো হয়।
তিনটি পেট্রোলিয়াম পণ্য বিপণন কোম্পানীর পণ্য খুচরা বিপণনের জন্য দেশব্যাপী মোট ৭৫৯টি ফিলিং ষ্টেশন, ৩৭টি গ্রাহক পাম্প, ১৪৮০ জন এজেন্ট/বিতরণকারী, ১২৭৩ জন এলপিজি ডিলার এবং ৩০৫টি প্যাক্ড পয়েন্ট ডিলার (packed point dealer) নিয়োজিত রয়েছে। কোম্পানীর তেল সংরক্ষণাগার সমুহ থেকে বিপণন কেন্দ্রসমূহে পেট্রোলিয়াম পণ্য পরিবহণের জন্য ডিলারদের মালিকানাধীন প্রায় ৬০০০ ট্যাংক লরি রয়েছে।
১৯৯৭-১৯৯৮ সময়কালে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন আন্তঃরাষ্ট্র চুক্তির অধীনে মোট ১১,৪৪,০০০ মেট্রিক টন পেট্রোলিয়াম আমদানি করে, যার মধ্যে আবুধাবী থেকে ৫,১৩,০০০ মেট্রিক টন ও সৌদি আরব থেকে ৬,৩১,০০০ মেট্রিক টন অপরিশোধিত তেল আমদানি করা হয়েছিল। আমদানিকৃত অপরিশোধিত তেলের সিএন্ডএফ মূল্য ছিল ১৫,১৫৬ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বা ৭,১৪১ মিলিয়ন টাকা। গড়ে টন প্রতি সিএন্ডএফ আমদানি মূল্য ছিল ১৩২.৪৮ মার্কিন ডলার। একইভাবে ১৯৯৭-১৯৯৮ সালে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন বিভিন্ন গ্রেডের ১৭,২৩,০০০ মেট্রিক টন পরিশোধিত পেট্রোলিয়াম পণ্য কেপিসি (KPC), শেল (SHELL) এবং এসো (ESSO)-এর কাছ থেকে এবং প্রায় ১২,০০০ মেট্টিক টন বিটুমেন ইরান থেকে আন্তর্জাতিক দরপত্রের অধীনে আমদানি করে। আমদানিকৃত পণ্যের সিএন্ডএফ মূল্য ছিল ২৬৮.০৬ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বা ১২৭৫.০৪ মিলিয়ন টাকা। আমদানিকৃত পরিশোধিত পেট্টোলিয়ামের মধ্যে ছিল একলক্ষ টন পেট্রোল, ২,৭২,০০০ টন সুপিরিয়র কেরোসিন (SKO), ১২৬,০০০ টন জেট পেট্রোল এবং ১২২৫,০০০ টন হাইস্পীড ডিজেল (HSD)। এসকল পণ্যের গড় সিএন্ডএফ মূল্য ছিল টনপ্রতি ১৫৪.৩৬ মিলিয়ন ডলার এবং আমদানিকৃত বিটুমেনের টনপ্রতি গড় সিএন্ডএফ মূল্য ছিল প্রায় ১৭৩.৬৪ মার্কিন ডলার। উল্লেখিত সময়ে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন (বিপিসি) বিভিন্ন গ্রেডের প্রায় ৩৯,৭৪২ টন লুব্রিক্যান্ট বেসওয়েল আমদানি করে। আমদানিকৃত লুব বেসওয়েলের সিএন্ডএফ মূল্য ছিল ১১.৭৮ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বা ৫৭.৫৩ কোটি টাকা এবং গড়ে টনপ্রতি আমদানী মূল্য ছিল ২৯৬,৪১ মার্কিন ডলার। ১৯৯৭-৯৮ সনে বিপিসি ২৯,১৯,০০০ টন অপরিশোধিত এবং পরিশোধিত তেল আমদানী করে যার আমদানী মূল্য ছিল ৪৩১.৪০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বা ২০৪৬.৬৭ কোটি টাকা। একই সময়ে বিপিসি তার রিফাইনারীর ১.১০.৯৬৪ টন উদ্বৃত্ত পেট্রোলিয়াম পণ্য, যেমন ১০,৪৫৯ টন নাপথা এবং ১,০০,৫০৯ টন ফার্নেস ওয়েল রপ্তানি করে ১০.১১ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বা ৪৪.৯৮ কোটি টাকা আয় করে। আলোচ্য বছরে দেশের একমাত্র পেট্রোলিয়াম রিফাইনারী আমদানিকৃত অপরিশোধিত তেল ও গ্যাস ফিল্ডগুলোর কাছ থেকে পাওয়া ৩৮,০০০ টন কন্ডেনসেট পরিশোধন করে ১১,৫৬০,০০০ টন বিভিন্ন ধরনের পরিশোধিত পেট্রোলিয়াম পণ্য উৎপাদন করে। একইসাথে দেশের একমাত্র বিটুমেন প্লান্ট (অ্যাসফল্টিক বিটুমেন প্লান্ট) ৫৭,৪৬২ টন বিটুমেন এবং এলপিজি, বোতলজাতকরণের প্লান্ট, ‘এলপি গ্যাস লিমিটেড’ মোট ১০,৬১,০০০ সিলিন্ডার এলপি গ্যাস উৎপাদন করে (প্রতিটি সিলিন্ডার ১২.৫ কেজি এলপি গ্যাস ধারণ করে) বিপণনের জন্য তিনটি কোম্পানীর কাছে সরবরাহ করছে। বিপিসির দুটি লুব্রিক্যান্ট ব্লেন্ডিং প্লান্ট, স্ট্যান্ডার্ড এশিয়াটিক ওয়েল কোম্পানী লিমিটেড এবং ‘ইস্টার্ন লুব্রিক্যান্টস ব্লেন্ডার্স লিমিটেড’ বিভিন্ন মানের ৩৯,০৪২ টন লুব্রিকেটিং ওয়েল প্রস্ত্তত করে তিনটি বিপনন কোম্পানীকে সরবরাহ করেছে। [রফিকুল ইসলাম]