নেসা, মেহেরুন
নেসা, মেহেরুন (১৯৪২-১৯৭১) সাহিত্যিক, মুক্তিযুদ্ধে শহীদ। ১৯৪২ সালের ২০ আগস্ট কলকাতার খিদিরপুরে তাঁর জন্ম। পিতা আবদুর রাজ্জাক ও মা নূরুন নেসা। শৈশবে তাঁর বিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ হয় নি। তবে তিনি ছিলেন স্বশিক্ষিত।
১৯৪৭ সালে ভারত বিভাগের পর তাঁদের পরিবার ১৯৫০ সালে পূর্ব বাংলায় চলে আসে। আর্থিক অসচ্ছলতার কারণে তাঁকে অল্প বয়সে চাকুরি নিতে হয়। তিনি কিছুদিন বাংলা একাডেমীতে অনুলিখনের কাজ করেন। পরে ১৯৬১ সালে তিনি ফিলিপস রেডিও কোম্পানিতে চাকুরি নেন। এ ছাড়াও তিনি ইউএসআইএস (USIS) লাইব্রেরিতে অনুলিখনের কাজ করতেন।
মেহেরুন নেসা ছোটবেলা থেকেই কবিতা লেখা শুরু করেন। ১৯৫২ সালে মাত্র ১০ বছর বয়সে তাঁর প্রথম কবিতা চাষী প্রকাশিত হয় সংবাদ পত্রিকায়। এ ছাড়া আগুয়ান নামে ছোটদের একটি কবিতাও একই পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। তিনি কাফেলা পত্রিকায় ভাষা আন্দোলনের ওপর রাজবন্দী নামে একটি কবিতা লিখেন। এ কবিতায় ‘আমাদের দাবী মানতে হবে’ ও ‘রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই’ শ্লোগান দুটি ছিল। ১৯৫৪ থেকে ১৯৭১ সাল পর্যন্ত তাঁর লেখার বেশিরভাগ প্রকাশিত হয় সাপ্তাহিক বেগম পত্রিকায়। এ ছাড়া কাফেলা, আজ, আওয়াজ, যুগের দাবী, অগ্নিবীণা, অনন্যা, নও বেলাল, পাকিস্তানী খবর, দৈনিক পাকিস্তান, কৃষিকথা, পয়গাম, সংগ্রাম, দরবার, ত্রয়ী, ইত্তেফাক, ললনা, পাক জমহুরিয়াত, অন্য ফাগুন, কেয়া, মাসিক মোহাম্মদী, প্রভৃতি পত্রপত্রিকা এবং চট্টগ্রাম থেকে প্রকাশিত ইঙ্গিত, ফিলিপস ম্যাগাজিন প্রভৃতিতে তাঁর লেখা প্রকাশিত হয়। তিনি ছিলেন প্রতিবাদী, রোমান্টিক ও জীবনবাদী কবি। এ ছাড়া তাঁর বহু কবিতায় রাজনৈতিক সচেতনতারও পরিচয় পাওয়া যায়।
- মেহেরুন নেসা
১৯৬৯ সালে গণঅভ্যুত্থান কালে মিরপুরে গঠিত ‘অ্যাকশন কমিটি’র সদস্য হিসেবে তাঁর ভূমিকা ছিল উল্লেখযোগ্য। ১৯৭১ সালের ২৩ মার্চ মিরপুরে স্বাধীনতার পতাকা উত্তোলন করা হলে তিনিও নিজ বাড়িতে পতাকা উত্তোলন করেন। এ সময় মিরপুর এলাকায় বাঙালি ও বিহারিদের মধ্যে প্রত্যক্ষ দ্বন্দ্ব শুরু হয়। ২৭ মার্চ বিহারিরা মেহেরুন নেসার বাড়ি আক্রমণ করে তাঁকে নৃশংসভাবে হত্যা করে।
১৯৯৫ সালের ১৪ ডিসেম্বর শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসে বাংলাদেশ সরকারের ডাকবিভাগ তাঁর নামে স্মারক ডাকটিকিট প্রকাশ করে। [আরীফা সিদ্দিকা]