নাসসাখ, খানবাহাদুর আবদুল গফুর
নাসসাখ', 'খানবাহাদুর আবদুল গফুর (১৮৩৩-১৮৮৯) আমলা ও সাহিত্যিক। তাঁর মূল নাম আবু মুহম্মদ আবদুল গফুর এবং সাহিত্যিক নাম নাসসাখ। ফরিদপুরের বিখ্যাত কাজী পরিবারে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা ফকির মুহম্মদ (১৭৭৪-১৮৪৪) কলকাতার দেওয়ানি আদালতে ওকালতি করতেন। নওয়াব আবদুল লতিফ ছিলেন তাঁর অগ্রজ।
নাসসাখ ছিলেন প্রধানত উর্দু ভাষার কবি, তবে ফারসি ভাষায়ও তিনি কবিতা রচনা করেছেন। সাহিত্য-সমালোচক, সাহিত্য-সংকলক ও সংগ্রাহক হিসেবেও তাঁর খ্যাতি ছিল। তিনি বাংলা, উর্দু ও ফারসি ছাড়াও , ইংরেজি ও হিন্দি ভাষা জানতেন। দফতর-এ-বেমিসাল (১৮৬৯), আরমুগান (১৮৭৫) ও আরমুগানী (১৮৮৪) তাঁর উর্দু কাব্যগ্রন্থ। তিনি উর্দু ও ফারসি ভাষার কবিদের পরিচিত করে তোলার উদ্দেশ্যে সুখান-এ-শুআরা (কবিদের ইতিবৃত্ত, ১৮৭৪) ও তাযকিরাতুল মুআসিরীন নামক গ্রন্থদুটি রচনা করেন। সুখান-এ-শুআরা উর্দু সাহিত্যে তাঁর সবচেয়ে বড় অবদান বলে স্বীকৃত।
নাসসাখ ১৮৭৪ সালে চশমা-এ-ফয়েজ নামে প্রখ্যাত ফারসি কবি শায়েখ ফরিদুদ্দীন আখতারের পান্দ নামা কাব্যের উর্দু কাব্যানুবাদ করেন। তাঁর দফতর-এ-বেমিসাল কাব্যকে কবি গালিব (১৭৯৭-১৮৬৯) অসাধারণ সৃষ্টি বলে প্রশংসা করেছেন। গাঞ্জ-এ-তাওয়ারিখ (১৮৭৩), কানজ-এ-তাওয়ারিখ (১৮৭৭) ও আশআর-এ-নাসসাখ (১৮৬৬) তাঁর অপর তিনটি কাব্যগ্রন্থ। প্রথম দুটি গ্রন্থে তিনি ইসলামের প্রাথমিক যুগ থেকে বর্তমান যুগ পর্যন্ত অনেক মহাপুরুষের ইতিহাস লিপিবদ্ধ করেছেন। মাজহাব-এ-মুআম্মা (১৮৮৮) ফারসিতে পদ্যাকারে রচিত তাঁর একটি ক্ষুদ্র পুস্তিকা। উর্দুতে রচিত তাঁর অপর একটি পুস্তিকা ইনতিখাব-এ-নাকম (১৮৭৯)। এতে তিনি লক্ষ্ণৌর কবি মীর আনীদ (১৮০২-৭৪) ও মির্জা দবিরের (১৮০৩-৭৫) মর্সিয়া কাব্যের সমালোচনা করেছেন।
আবদুল গফুর নাসসাখ ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট ও ডেপুটি কালেক্টর হিসেবে (১৮৬০-১৮৮৮) ঢাকাসহ বাংলাদেশ ও পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন স্থানে দায়িত্ব পালন করেন এবং সেই সূত্রে প্রত্যেক স্থানেই কবিতার আসর বসিয়েছেন, কবি-সম্মেলন করেছেন এবং নতুনদের কাব্য রচনায় উৎসাহ জুগিয়েছেন। এজন্য তাঁকে বলা হতো ‘সর্ব উস্তাদ’। [কানিজ-ই-বাতুল]