নান্দাইল উপজেলা
নান্দাইল উপজেলা (ময়মনসিংহ জেলা) আয়তন: ৩২৬.১৩ বর্গ কিমি। অবস্থান: ২৪°২৮´ থেকে ২৪°৩৯´ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৯০°৩০´ থেকে ৯০°৪৯´ পূর্ব দ্রাঘিমাংশ। সীমানা: উত্তরে ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলা, দক্ষিণে হোসেনপুর ও কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলা, পূর্বে কেন্দুয়া ও তাড়াইল উপজেলা এবং পশ্চিমে ত্রিশাল ও গফরগাঁও উপজেলা।
জনসংখ্যা ৩৭০৮৫০; পুরুষ ১৮৯১৫২, মহিলা ১৮১৬৯৮। মুসলিম ৩৬৩২০৪, হিন্দু ৭৪৫৯, বৌদ্ধ ১১, এবং অন্যান্য ১৭৬।
জলাশয় প্রধান নদ-নদী: পুরাতন ব্রহ্মপু, কাঁচামাটিয়া, নরসুন্দা ও মঘা; আড়ালিয়া, হামাই, বান্না, বলদা, কালাইধর, টঙ্গী ও বাউলার বিল উল্লেখযোগ্য।
প্রশাসন নান্দাইল থানা গঠিত হয় ১৯১২ সালে এবং উপজেলায় রূপান্তর করা হয় ১৯৮৩ সালে।
উপজেলা | ||||||||
পৌরসভা | ইউনিয়ন | মৌজা | গ্রাম | জনসংখ্যা | ঘনত্ব(প্রতি বর্গ কিমি) | শিক্ষার হার (%) | ||
শহর | গ্রাম | শহর | গ্রাম | |||||
১ | ১২ | ১৬৩ | ২৬৫ | ৩৬৬৯৩ | ৩৩৪১৫৭ | ১১৩৭ | ৪২.৭ | ৩৫.৩ |
পৌরসভা | |||||
আয়তন (বর্গ কিমি) | ওয়ার্ড | মহল্লা | লোকসংখ্যা | ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) | শিক্ষার হার (%) |
২৩.০৬ | ৯ | ২০ | ২৮৯৩৭ | ১২৫৫ | ৪৪.৩ |
উপজেলা শহর | ||||
আয়তন (বর্গ কিমি) | মৌজা | লোকসংখ্যা | ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) | শিক্ষার হার (%) |
১২.৩৮ | - | ৭৭৫৬ | ৬২৬ | ৩৭.০ |
ইউনিয়ন | ||||
ইউনিয়নের নাম ও জিও কোড | আয়তন(একর) | লোকসংখ্যা | শিক্ষার হার(%) | |
|| || পুরূষ | মহিলা | |||
আচারগাঁও ১৩ | ৭০২৬ | ১১৮৯৪ | ১১২৬৩ | ৩৪.১২ |
খারুয়া ৪৭ | ৫৭৬১ | ১৩৬১০ | ১২৬৪৯ | ৩৩.০৩ |
গাঙ্গাইল ৩১ | ৬২৬২ | ১৫৪৪৯ | ১৪৬৭৮ | ৩৮.৯২ |
চান্দিপাশা ২৩ | ৭১৬৮ | ১৫৬২০ | ১৪৯০৩ | ৩৯.৫৭ |
জাহাঙ্গীরপুর ৩৯ | ৬৫৯৪ | ১৬৭৩১ | ১৬১৫৭ | ২৯.১০ |
নান্দাইল ৭১ | ৭৫২৭ | ১১৭২৭ | ১১০২৩ | ৩২.৮৯ |
বেতাগৈর ১৫ | ৮৮৩০ | ১৯৬৩৪ | ১৮৬৪১ | ৩৩.১৩ |
মুশুলি ৬৩ | ৬৭০৭ | ১৪৭০৭ | ১৪৬৩১ | ৪১.৮১ |
মোয়াজ্জেমপুর ৫৫ | ৬২৯৭ | ১৫৯৯৭ | ১৫৪৫৭ | ৩৫.১৮ |
রাজগাঁতি ৭৯ | ৬১৯৫ | ১২৫১১ | ১২৪২৫ | ৪০.৮৩ |
শেরপুর ৮৭ | ৫৯৯৪ | ১২৭৯২ | ১২১৯৮ | ২৯.০০ |
সিংরাইল ৯৪ | ৫৯১৫ | ১৩৭০২ | ১৩৫১৪ | ৩৬.১৩ |
সূত্র আদমশুমারি রিপোর্ট ২০০১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো।
প্রাচীন নিদর্শনাদি ও প্রত্নসম্পদ মোয়াজ্জমাবাদ মসজিদ (১৪৯৩-১৫১৯), জাহাঙ্গীরপুর গ্রামে তাপস জাহাঙ্গীর শাহের মাযার ও খানকা।
ঐতিহাসিক ঘটনাবলি মৈমনসিংহ গীতিকার ‘মলুয়া’ পালার পটভূমি এই নান্দাইল উপজেলা। আঠারো শতকে নান্দাইলের দেওয়ানগঞ্জ বাজার এলাকায় নীলকরদের কুঠি স্থাপনের পর ‘নীল আন্দোলন’ শুরু হয়। ১৯৭১ সালের ২১ এপ্রিল পাকবাহিনী রাজগাতি, শুভখিলা ও কালীগঞ্জ এলাকায় ১৮ জন গ্রামবাসিকে নির্মমভাবে হত্যা করে ও কয়েকশ বাড়িঘর পুড়িয়ে দেয়। ১৭ নভেম্বর নান্দাইলে পাকবাহিনীর সঙ্গে এক যুদ্ধে মুক্তিযোদ্ধা ইলিয়াস উদ্দিন ভূঞা ও শামসুল হকসহ বেশ কয়েকজন স্থানীয় লোক শহীদ হন। উক্ত দিনটি ‘নান্দাইল শহীদ দিবস’ হিসেবে পালিত হয়ে আসছে। ১১ ডিসেম্বর নান্দাইলে স্বাধীনতার পতাকা উত্তোলন করা হয় এবং উক্ত দিনটি নান্দাইলে মুক্ত দিবস হিসেবে পালিত হয়ে আসছে।
মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিচিহ্ন গণকবর: বারুই গ্রাম; বধ্যভূমি: শুভখিলা কালীগঞ্জ রেলওয়ে ব্রিজ এলাকা।
চিত্র:নান্দাইল উপজেলা html 88407781.png
ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান মসজিদ ৬৩৯, মন্দির ২৮। উল্লেখযোগ্য ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান: মোয়াজ্জমাবাদ মসজিদ, নান্দাইল বাজার বায়তুল মামুর মসজিদ, জাহাঙ্গীরপুর মসজিদ, নান্দাইল বাজার কালীমন্দির।
শিক্ষার হার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড় হার ৩৬.০%; পুরুষ ৩৮.২%, মহিলা ৩৩.৮%। কলেজ ৫, মাধ্যমিক বিদ্যালয় ৩০, প্রাথমিক বিদ্যালয় ৫৯, উপ আনুষ্ঠানিক শিক্ষা কেন্দ্র ১১, মাদ্রাসা ৮৯। উল্লেখযোগ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান: শহীদ স্মৃতি আদর্শ কলেজ (১৯৭২), চন্ডীপাশা সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় (১৯১৫), নান্দাইল রোড উচ্চ বিদ্যালয়, শেরপুর ইসলামিয়া ফাজিল মাদ্রাসা (১৯২৭)।
পত্র-পত্রিকা ও সাময়িকী মাসিক নান্দাইল, নরসুন্দার বাঁকে, মাসিক দেশের কথা, দেশের মাটি (অনিয়মিত)।
সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান লাইব্রেরি ৯, ক্লাব ১২, থিয়েটার গ্রুপ ১, সিনেমা হল ১, খেলার মাঠ ২১।
জনগোষ্ঠীর আয়ের প্রধান উৎস কৃষি ৭৪.২৪%, অকৃষি শ্রমিক ২.৬৮%, শিল্প ০.২৪%, ব্যবসা ৮.৮৬%, পরিবহণ ও যোগাযোগ ১.৭৯%, চাকরি ৪.০৭%, নির্মাণ ০.৬৫%, ধর্মীয় সেবা ০.২১%, রেন্ট অ্যান্ড রেমিটেন্স ০.২৭% এবং অন্যান্য ৬.৯৯%।
কৃষিভূমির মালিকানা ভূমিমালিক ৬৬.৮২%, ভূমিহীন ৩৩.১৮%। শহরে ৬০.৪৭% এবং গ্রামে ৬৭.৫১% পরিবারের কৃষিজমি রয়েছে।
প্রধান কৃষি ফসল ধান, পাট, গম, আলু, ডাল, আখ, শাকসবজি।
বিলুপ্ত বা বিলুপ্তপ্রায় ফসলাদি নাজিরশাইল ধান, খেসারি।
প্রধান ফল-ফলাদি আম, জাম, লিচু, কাঁঠাল, কলা, পেঁপে, আতা, নারিকেল, তাল।
মৎস্য, গবাদিপশু ও হাঁস-মুরগির খামার মৎস্য ২, গবাদিপশু ২৪, হাঁস-মুরগি ৩০০, হ্যাচারি ও নার্সারি ৩০।
যোগাযোগ বিশেষত্ব পাকারাস্তা ৯০ কিমি, আধা-পাকারাস্তা ৫০ কিমি, কাঁচা রাস্তা ৩৮৮ কিমি; রেলপথ ১৫.৫ কিমি।
বিলুপ্ত বা বিলুপ্তপ্রায় সনাতন বাহন পাল্কি, ঘোড়া ও গরুর গাড়ি।
শিল্প ও কলকারখানা ফ্লাওয়ার মিল, টেক্সটাইল মিল, ধানকল, ওয়েল্ডিং কারখানা।
কুটিরশিল্প স্বর্ণশিল্প, লৌহশিল্প, মৃৎশিল্প, তাঁতশিল্পগু।
হাটবাজার ও মেলা হাটবাজার ৩৯, মেলা ২। নান্দাইল বাজার, চামটা বাজার, জালুয়া বাজার, কালেঙ্গা নয়া বাজার, হেমগঞ্জ বাজার, দেওয়ানগঞ্জ বাজার, ঘারুয়া বাজার, কালীগঞ্জ বাজার, বনগ্রাম বাজার, কানরাপুর বাজার, সিংরাইল বাজার এবং চৈত্র সংক্রান্তি মেলা ও নান্দাইল বারুণী মেলা উল্লেখযোগ্য।
প্রধান রপ্তানিদ্রব্য ধান, পাট, গম, আলু, ডাল, আখের গুড়, কলা।
বিদ্যুৎ ব্যবহার এ উপজেলার সবক’টি ওয়ার্ড ও ইউনিয়ন পল্লিবিদ্যুতায়ন কর্মসূচির আওতাধীন। তবে ১৪.৩১% পরিবারের বিদ্যুৎ ব্যবহারের সুযোগ রয়েছে।
পানীয়জলের উৎস নলকূপ ৮৯.৬১%, ট্যাপ ০.৩০%, পুকুর ৩.২১% এবং অন্যান্য ৬.৮৮%।
স্যানিটেশন ব্যবস্থা এ উপজেলার ১৪.২১% (গ্রামে ১২.৫৯% ও শহরে ২৯.০৮%) পরিবার স্বাস্থ্যকর এবং ৪৯.৪০% (গ্রামে ৪৯.৪৪% ও শহরে ৪৯.০৫%) পরিবার অস্বাস্থ্যকর ল্যাট্রিন ব্যবহার করে। ৩৬.৩৯% পরিবারের কোনো ল্যাট্রিন সুবিধা নেই।
স্বাস্থ্যকেন্দ্র উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ১, পরিবার পরিকল্পনা কেন্দ্র ৬, উপস্বাস্থ্য কেন্দ্র ৭।
এনজিও ব্র্যাক, আশা। [আজিজুর রহমান ভূঞা]
তথ্যসূত্র আদমশুমারি রিপোর্ট ২০০১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো; নান্দাইল উপজেলা সাংস্কৃতিক সমীক্ষা প্রতিবেদন ২০০৭।