নাগরিক অধিকার
নাগরিক অধিকার অন্যদের অধিকার অক্ষুণ্ণ রেখে রাষ্ট্রের বিধিবহির্ভূত পরিসরে বাধাহীন, নিরুপদ্রব ও সুন্দর জীবনযাপনের জন্য সমাজের সকল ব্যক্তির প্রাপ্য অধিকারসমূহ। সাধারণত আইনি ঘোষণা বা সাংবিধানিক বিধিমতে প্রয়োজনে আইনের রক্ষকদের দ্বারা এসব অধিকার সুনিশ্চিত করা হয়। সাধারণ নাগরিকদের বিরুদ্ধে অত্যাচারী রাষ্ট্র এবং এর বিভিন্ন এজেন্টদের ক্ষমতার অপব্যবহার রোধে এ অধিকারসমূহ সংরক্ষণ ও চর্চা করা হয়। রাজতন্ত্র, সামন্ত জায়গিরতন্ত্র ও জমিদারিতে তো বটেই, স্বৈরাচারী শাসন ব্যবস্থায় বা দুর্বল গণতন্ত্রে ক্ষমতার অপব্যবহার অতি সাধারণ ঘটনা। এ অধিকারসমূহ অবশ্য তখনই ভোগ করা যায় যখন অন্যদের ক্ষেত্রেও একই অধিকার স্বীকৃত থাকে; সে সঙ্গে সমাজে সাধারণ কল্যাণ নিশ্চিত করার প্রয়োজনগত সম্পর্কসূত্রে উক্ত অধিকারগুলো সুস্পষ্ট সীমারেখায় চিহ্নিত করা থাকে।
আধুনিককালে, বিশেষ করে আমেরিকার গৃহযুদ্ধের ফলে দাসদের মুক্ত হবার অধিকার প্রদানের সময় থেকে বিশ্বব্যাপী নাগরিক অধিকার ও মানবাধিকার আন্দোলন ঐ অধিকারসমূহের নতুন ব্যঞ্জনা সৃষ্টি করেছে। ১৯৬৪ সালে যুক্তরাষ্ট্রে প্রণীত সিভিল রাইটস অ্যাক্ট দেশবাসীর নাগরিক অধিকারের বাস্তব রূপ প্রদান করে এবং তা প্রয়োগের পথ উন্মুক্ত করে। বাংলাদেশে নাগরিক অধিকারসমূহ ১৯৭২ সালের সংবিধানে বিধিবদ্ধ রয়েছে এবং এসবের প্রয়োগ উচ্চ আদালতের মাধ্যমে অঙ্গীকার করা হয়েছে। এ অধিকারগুলোর কয়েকটি হচ্ছে: আইনের চোখে সবাই সমান; ধর্ম, জাতি, জাত, বর্ণ, লিঙ্গ অথবা জন্মস্থান নিয়ে কোন বৈষম্য সৃষ্টি না করা; রাষ্ট্রের সকল ক্ষেত্রে জনজীবনে নরনারীর সমানাধিকার; রাষ্ট্রের চাকুরিতে সমান সুযোগ; আইনের সংরক্ষণের অধিকার; ব্যক্তিজীবন ও স্বাধীনতার অধিকার; বেআইনি গ্রেফতার ও আটক রাখার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা; বাধ্যতামূলক শ্রমের বিরুদ্ধে প্রতিরক্ষা; চলাফেরায় স্বাধীনতা; সমবেত হওয়ার স্বাধীনতা; সংঘ-সমিতি করার স্বাধীনতা; চিন্তা, বিচারবুদ্ধি ও বাক্স্বাধীনতা; পেশা ও বৃত্তির স্বাধীনতা; ধর্মের স্বাধীনতা; সম্পত্তির অধিকার এবং বাসস্থানের নিরাপত্তা ও যোগাযোগের গোপনীয়তা। [এনামুল হক]