প্রাউডলক, রবার্ট লুই
প্রাউডলক, রবার্ট লুই (১৮৬২- ) ঢাকা নগরীর রমনা এলাকার বৃক্ষশোভার স্থপতি, লন্ডনের কিউ বোটানিক গার্ডেনের কর্মী। জন্ম ১৮৬২ সালের ১০ নভেম্বর, নর্থ উইম্বারল্যান্ডের হেপকট শহরে। বিভিন্ন নার্সারিতে কাজকর্মের মাধ্যমে উদ্যানবিদ্যায় হাতেখড়ি। অতঃপর এডিনবরার রয়েল বোটানিক গার্ডেনে চাকুরি এবং সেখানে সান্ধ্য ক্লাসে উদ্ভিদবিদ্যা ও কৃষিবিদ্যা অধ্যয়ন। ১৮৮৬ সালে কিউ-তে রাজকীয় বোটানিক গার্ডেনে শিক্ষানবিস হিসেবে যোগদান এবং পরবর্তীতে গ্রীষ্মমন্ডলীয় উদ্ভিদ প্রজনন বিভাগের সহকারী ফোরম্যান পদে পদোন্নতি।
প্রাউডলক ১৮৮৯ সালে কলকাতা আসেন এবং শিবপুরের রয়েল বোটানিক্যাল গার্ডেনে সহকারী কিউরেটর হিসেবে কাজ করেন। তিনি ১৯১১ সালে এই উদ্যানের কিউরেটর পদ লাভ করেন। তিনি কিছুকাল ‘বোটানিক সার্ভে অব ইন্ডিয়া’ সংস্থায়ও কাজ করেছেন। বার্মাসহ (মায়ানমার) ভারতের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে হার্বেরিয়ামের জন্য উদ্ভিদ নমুনা সংগ্রহ করেন। তিনি ১৯০৮ সালে রেঙ্গুন (ইয়াংগুন) যান সে শহরের ভূমি ব্যবহার পরিকল্পনা প্রণয়নের জন্য। ১৯০৯ সালে বোম্বাই (মম্বাই) অঞ্চলে রাবার চাষের সম্ভাবনা জরিপ শেষে সেই বছর নবগঠিত পূর্ববঙ্গ ও আসাম প্রদেশের উদ্যান বিষয়ক উপদেষ্টা নিযুক্ত হয়ে ঢাকা আসেন এবং রমনা এলাকায় উদ্যান সৃষ্টির জন্য ভূমি ব্যবহার পরিকল্পনা প্রণয়ন ও তা বাস্তবায়ন করেন। দেশীয় ও আমেরিকার গ্রীষ্মমন্ডলীয় বৃক্ষরাশির সমাবেশে সৃষ্ট এই নিসর্গশোভা আজও আমাদের জন্য নগরে বৃক্ষরোপণের একটি মডেল হয়ে আছে। ১৯১৮ সালে চাকরি থেকে অবসর গ্রহণের পর তিনি স্বদেশে প্রত্যাবর্তন করেন। এরপরও তিনি একাধিকবার ভারতে আসেন এবং উদ্ভিদ সংগ্রহে বের হন। উদ্ভিদসম্পর্কিত বিষয় ছাড়াও তাঁর একটি প্রবল আগ্রহ ছিল মশা-ধরার ফাঁদ উদ্ভাবন। ভারতে তাঁর সৃজনশীল কর্মের স্মারক হিসেবে নীলগিরি থেকে তাঁরই সংগৃহীত দুটি অর্কিড প্রজাতির নামকরণ করা হয়েছে Oberonia proudlockii এবং Bulbophyllum proudlockii। বহুদিন পূর্বে প্রাউডলক এ দেশ ত্যাগ করলেও, তাঁকে এখনও স্মরণ করা হয়। কিছুদিন আগে রমনা পার্কের পূর্বদিকের ‘উদয়াচল’ ফটকে স্থাপিত পার্কের ইতিহাস সম্বলিত সাইনবোর্ডে প্রাউডলকের নামটি যথাসম্মান উল্লিখিত হয়েছে। [দ্বিজেন শর্মা]