নদীয়া

NasirkhanBot (আলোচনা | অবদান) কর্তৃক ২১:৫৪, ৪ মে ২০১৪ তারিখে সংশোধিত সংস্করণ (Added Ennglish article link)
(পরিবর্তন) ← পূর্বের সংস্করণ | সর্বশেষ সংস্করণ (পরিবর্তন) | পরবর্তী সংস্করণ → (পরিবর্তন)

নদীয়া  পশ্চিম বাংলার নদীয়া জেলার একটি জেলা শহর। শহরটি নবদ্বীপ নামেও পরিচিত। অনেকের মতে, ভাগীরথী এবং জলাঙ্গী নদীর মোহনায় অবস্থিত শহরটি বল্লালসেন (১১৬০-১১৭৪) কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। যদিও আদিতে নদীয়া মোটামুটিভাবে ভাগীরথীর ডানদিকের তীরে অবস্থিত এবং নদীটির দ্বারা দুভাগে বিভক্ত ছিল, কিন্তু এর উত্তর অংশ বর্তমানে বিলীন হয়ে গেছে এবং দক্ষিণ অংশটি ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধির মাধ্যমে গঠন করেছে নতুন নদীয়া। ১৮৬৯ সালে এটি পৌর শহরে রূপান্তরিত হয়।

হিন্দুদের কাছে গভীরভাবে পূজনীয় ভাগীরথীর কাছাকাছি অবস্থানের কারণে রাজকীয় বাসস্থানের জন্য নদীয়া ছিল গৌড় অপেক্ষা অধিকতর কাঙ্ক্ষিত। বল্লালসেন ও তাঁর পরিবারের সদস্যগণ নিজেদের পাপ মোচনের জন্য ভাগীরথীর পানিতে পূণ্যস্নান করতে প্রায়ই নদীয়া আসতেন। নদীটির অপর তীরে একটি বড় ঢিবি রয়েছে যা বল্লালসেনের নামে পরিচিত। সেন রাজা সেখানে বিখ্যাত পঞ্চরত্ন মন্দির নির্মাণ এবং বল্লালদিঘি নামে একটি দিঘি খনন করেন। ১৯২২ ও ১৯৫৮ সালের জরিপ মানচিত্রে এ মন্দির ও পুকুরের অবস্থান নির্দেশ করা হয়েছে।

বখতিয়ার খলজী কর্তৃক ১২০৪-০৫ খ্রিস্টাব্দে দখল হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত নদীয়া লক্ষ্মণসেনের (১১৭৮-১২০৬) রাজধানী ছিল। মিনহাজের তবকাত--নাসিরী এর বর্ণনা ইঙ্গিত করে যে, প্রাচীরবেষ্টিত এ নগর ভাগীরথীর পশ্চিম তীরে অবস্থিত এবং প্রাসাদ, হারেম, বাজার ও আবাসিক এলাকার সমন্বয়ে গঠিত ছিল। তিববত, নেপাল, ভুটান ইত্যাদি হিমালয়ের পার্বত্যাঞ্চলের সাথে নগরটির বাণিজ্যিক সম্পর্ক ছিল বলে উল্লেখ পাওয়া যায়। বখতিয়ার খলজী ধ্বংসপ্রাপ্ত নদীয়া ত্যাগ করে উত্তর-পশ্চিম দিকে অগ্রসর হন এবং লখনৌতি ও তার পার্শ্ববর্তী এলাকা দখল করেন।

ক্লাসিক্যাল সংস্কৃতচর্চার কেন্দ্র হিসেবেও নদীয়া উল্লেখযোগ্য। হিন্দু আধ্যাত্মিক পুরুষ এবং বৈষ্ণববাদের প্রতিষ্ঠাতা শ্রীচৈতন্য (১৪৮৬-১৫৩৩) সেখানে ধর্মশাস্ত্র অধ্যয়ন করেন। বাংলার বারাণসি নামে খ্যাত নদীয়া একটি গুরুত্বপূর্ণ তীর্থকেন্দ্র। প্রতি বছর মাঘ মাসে চার থেকে পাঁচ হাজার বৈষ্ণব মতাবলম্বী তাঁদের ‘মহান সংস্কারক’ শ্রীচৈতন্যের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে সেখানে একত্র হন। উৎসবটি এক টানা বারো দিন চলে। হেলে-দুলে এবং নেচে গেয়ে অবিরাম নাম সংকীর্তন হতে থাকে। কার্তিক মাসের পূর্ণিমায় এ শহরে পট-পূর্ণিমা (মাটির পুতুল পূজা) মেলা অনুষ্ঠিত হয়। দুদিন স্থায়ী এ মেলায় মোটামুটিভাবে পাঁচ থেকে ছয় হাজার উপাসক অংশগ্রহণ করেন।  [মোঃ আক্তারুজ্জামান]