ল্যাথিরিজম

NasirkhanBot (আলোচনা | অবদান) কর্তৃক ২২:৫৯, ৪ মে ২০১৪ তারিখে সংশোধিত সংস্করণ (Added Ennglish article link)

ল্যাথিরিজম  Lathyrus-এর কয়েকটি প্রজাতির বিশেষত L. sativus (খেসারি ডাল), L. cicera (ভেচ) এবং L. clymenum (স্পেনীয় ভেচ) বীজ খাদ্য হিসেবে দীর্ঘকাল ব্যবহার করার ফলে উদ্ভূত এক রোগ।

বাংলাদেশ, ভারত ও আলজেরিয়ার বহু লোক এবং ফ্রান্স, ইতালি, স্পেন, অস্ট্রেলিয়া ও অন্যান্য দেশের কিছু লোক এসব ডাল খেয়ে থাকে। এই ব্যাধির প্রকোপ মানুষ ছাড়াও ঘোড়া ও গবাদি পশুর মধ্যে লক্ষ্য করা যায়।

ভাবপ্রকাশ নামের প্রাচীন এক গ্রন্থে বলা হয়েছে যে, ‘খেসারি ডাল খেলে মানুষ খোঁড়া হয়ে যায় এবং এতে স্নায়ুর পঙ্গুতা ও প্রদাহ দেখা দেয়।’ হিপোক্রেটিস (আনুমানিক ৪০০ খ্রি.পূ.) উলে­খ করেছেন, কোন কোন ডাল মানুষের জন্য বিষাক্ত। সপ্তদশ শতকে উটেনবার্গে খেসারি ডাল খাওয়া নিষিদ্ধ ঘোষিত হয়েছিল। ১৮৭৩ সালে ইতালিতে কানতানি এই রোগের নামকরণ করেন ল্যাথিরিজম। ১৮৩৩ সালে ভারতে এক জরিপে দেখা যায় সেসব গ্রামে স্নায়বিক ল্যাথিরিজম রোগের প্রাদুর্ভাব ঘটে, সেখানে খেসারি ডাল সমাজের দরিদ্র শ্রেণির, বিশেষত দুর্ভিক্ষের সময় তাদের প্রধান খাদ্য হয়ে ওঠে। পরবর্তীতে কিছু কিছু গবেষক বিষয়টি সময় সময় নথিভুক্ত করেছেন। দেখা গেছে মাঝে মধ্যে এই ডাল ব্যবহারে তেমন ক্ষতি হয় না।

বাংলাদেশে, বিশেষত দেশের পশ্চিম ও উত্তর-পশ্চিমাংশে প্রচুর পরিমাণ খেসারি জন্মে এবং প্রতিদিনের একটি প্রধান খাদ্য হিসেবে ব্যবহূত হওয়ায় সেখানে মহামারী আকারে কয়েকবারই ল্যাথিরিজমের প্রকোপ দেখা গেছে। গবাদি পশুও খুব সহজেই এই রোগে আক্রান্ত হয়। খাদ্যের এক-তৃতীয়াংশ থেকে অর্ধভাগ খেসারি ডাল হলে এবং তা ক্রমাগত ৩ থেকে ৬ মাস পর্যন্ত খেলে রোগটি মানুষের মধ্যে দেখা দেয়। স্নায়বিক পঙ্গুতার আক্রমণ প্রায়শ হঠাৎ করেই শুরু হয় এবং সাধারণত বর্ষাকালেই ঘটে। প্রথম অবস্থায় রোগীর হাঁটায় অসুবিধা হয়, চলনে ঝাঁকি লাগে এবং একপা আরেক পায়ের সঙ্গে আড়াআড়িভাবে লেগে যায়। অনেক সময় উরু ও পায়ের পেশী শক্ত হয়ে ওঠে, পায়ের নিচের দিক অবশ হয়ে পড়ে এবং চরম পর্যায়ে রোগীর মৃত্যু ঘটে।

পুরুষের মধ্যেই ল্যাথিরিজমের প্রকোপ বেশি। ঘোড়া ও গবাদি পশুর ক্ষেত্রে  পা ও স্বরযন্ত্রের পেশীগুলি অবশ হয়ে পড়ে এবং পশুটির দম বন্ধ হয়ে আসে। মানুষের ক্ষেত্রে স্নায়ুরজ্জুতে ক্ষত দেখা দেয়, যা ঐ অঙ্গের স্থায়ী বিনষ্টির কারণ হতে পারে। পশুদের ক্ষেত্রে রোগটি স্বল্পস্থায়ী এবং তাতে বোঝা যায় যে, আক্রান্ত স্নায়ুরজ্জুর স্থায়ী ক্ষতি নয়, রক্তাভাব ও ক্রিয়ামূলক বাধাই অধিক। ল্যাথিরিজমের কোন ফলপ্রসূ চিকিৎসা নেই। প্রাথমিক অবস্থায় prostigmin ব্যথার সামান্য উপশম ঘটায়। রোগীকে পুষ্টিকর আহার দিয়ে খেসারি ডাল খাওয়া বন্ধ করে রোগটি দমন করা যায়। ডাল পানিতে ফুটালে বা গরম পানিতে বারবার ধুয়ে ঐ পানি ফেলে দিলে খেসারি নির্বিষ হয়। ডাল ১৪০°সে তাপমাত্রায় ১৫ থেকে ২০ মিনিট রাখলে স্নায়ুবিষগুলি নষ্ট হয়ে যায়।  [মোঃ কবিরুল্লাহ]

আরও দেখুন খেসারি।