নইমুদ্দীন, মোহাম্মদ
নইমুদ্দীন, মোহাম্মদ (১৮৩২-১৯০৭) সম্পাদক, লেখক ও ধর্মপ্রচারক। টাঙ্গাইল জেলার শুরুজ গ্রামে তাঁর জন্ম। গ্রামের মধ্য-বাংলা বিদ্যালয় থেকে ছাত্রবৃত্তি পাস করে তিনি পাবনার দুলাই মাদ্রাসায় অধ্যয়ন করেন এবং পরে ঢাকার বিশিষ্ট আলেমের নিকট ইসলামি ধর্মশাস্ত্রে ব্যুৎপত্তি লাভ করে ‘আলেম-উদ-দহর’ উপাধিতে ভূষিত হন। পরে তিনি মুর্শিদাবাদ, বিহার, এলাহাবাদ, আগ্রা, দিল্লি প্রভৃতি স্থান ভ্রমণ করেন এবং আলেম-আউলিয়াদের সঙ্গে ধর্মতত্ত্ব বিষয়ে আলোচনা করে ‘জাহেরি ও বাতেনি’ বিদ্যায় পারদর্শী হয়ে ওঠেন।
মোহাম্মদ নইমুদ্দীন নর্মাল পরীক্ষা পাস করে প্রথমে একটি স্কুলে শিক্ষকতা করেন এবং পরে পাবনায় ম্যারেজ রেজিস্ট্রার ও কাজিপদে চাকরি করেন। পরিশেষে এসব কাজ পরিত্যাগ করে তিনি করটিয়ার জমিদার খান পন্নী পরিবারের পৃষ্ঠপোষকতায় পত্রিকা প্রকাশ, গ্রন্থ রচনা ও ধর্মপ্রচারে মনোনিবেশ করেন।
নইমুদ্দীন ছিলেন হানাফি মতের অনুসারী এবং রক্ষণশীল দৃষ্টিভঙ্গির অধিকারী। মীর মশাররফ হোসেন গো-কোরবানি বন্ধের পক্ষ অবলম্বন করে গো-জীবন প্রকাশ করলে নইমুদ্দীন তার তীব্র প্রতিবাদ করেন। এ নিয়ে পত্রপত্রিকা ও সভাসমিতিতে সৃষ্ট বিতর্ক শেষাবধি আদালতে গড়ায়।
নইমুদ্দীন আখবারে এসলামীয়া (১৮৮৪) নামক পত্রিকাটি দীর্ঘকাল সম্পাদনা করেন। তিনি করটিয়ার আঞ্জুমানে মঈনুল এসলাম নামক সভারও সম্পাদক ছিলেন। তিনি পত্রিকা, প্রতিষ্ঠান ও সভার মাধ্যমে ইসলামের প্রচারকার্য চালান এবং ইসলাম ধর্মের ইতিহাস ও ঐতিহ্য বিষয়ে নানাবিধ পুস্তক রচনা করেন। তাঁর উল্লেখযোগ্য কয়েকটি গ্রন্থ: জুবদাতুল মসায়েল (২ খন্ড ১৮৭৩, ১৮৯১), ফতুয়া-ই-আলমগিরি (৩ খন্ড ১৮৮৪, ১৮৮৭, ১৮৮৯), বঙ্গানুবাদিত কোরআন শরীফ (১৮৮৭-১৯০৯), গোমস্তা দর্পণ (১৮৮৬), ইনসাফ (১৮৮৬), ধোকাভঞ্জন (১৮৮৯), গো-কান্ড (১৮৮৯), আখেরজ্জোহর (১৮৯১), সেরাতল মস্তাকিম (১৮৯৩), আদেল্লায়ে হানিফিয়া রদ্দে-লা-মজহাবিয়া (১৮৯৪), মৌলুদ শরীফ (১৮৯৫), রফা-ইদাইন (১৮৯৬), বুখারী শরীফ (১৮৯৮) প্রভৃতি। ১৯০৭ সালের ২৩ নভেম্বর নিজ গ্রামে তাঁর মৃত্যু হয়। [ওয়াকিল আহমদ]