ধানমন্ডি লেক
ধানমন্ডি লেক (Dhanmondi Lake) ঢাকা মেট্রোপলিটন শহর এলাকায় ধানমন্ডি লেক একটি উল্লেখযোগ্য ভূঅবনমন। ঢাকা শহরের মধ্য অংশে প্রায় ২৩°৪৩´ উত্তর অক্ষাংশ ও ৯০°২৬´ পূর্ব দ্রাঘিমাংশে এটি অবস্থিত। ধানমন্ডি থানাধীন ধানমন্ডি আবাসিক এলাকা ঘিরে বিসর্পিল আকারে এটি প্রবাহিত। আদিতে ধানমন্ডি লেক ছিল পূর্বে কারেভান নদী নামে পরিচিত কাওরান বাজার নদীর একটি পরিত্যক্ত খাল। সম্ভবত এটি বেগুনবাড়ি খাল, গ্রীন রোড, কলাবাগান, ধানমন্ডি লেক হয়ে তুরাগ নদীতে পতিত হতো। ব্রিটিশ আমলের পর এ অঞ্চলে নগরায়ণ সম্প্রসারণের ফলে এ স্থানের স্বাভাবিক পানি ব্যবস্থায় পরিবর্তন সূচিত হয়। উপযুক্ত পরিবেশে আবাসন ব্যবস্থা প্রদানের উদ্দেশ্যে ১৯৫৬ সালে লেকসহ ২৪০.৭৪ হেক্টর জমিতে ধানমন্ডি আবাসিক এলাকা গড়ে তোলা হয়। সমগ্র ধানমন্ডি এলাকার প্রায় ১৬% জুড়ে রয়েছে এ লেক। ধানমন্ডি ও সংলগ্ন অঞ্চলের পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা সংরক্ষণে এ লেক গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে। জলনিকাশ প্রক্রিয়ার প্রশাখী (dendritic) নকশার সঙ্গে কিছু ট্রেলিজ প্যাটার্ন এতে বিধৃত হয়েছে।
ধানমন্ডি লেকটি ঝিগাতলা থেকে (ধানমন্ডি সড়ক ২) শুরু করে ধানমন্ডি ২৭ নং (নতুন ১৬) সড়কে এসে শেষ হয়েছে। উত্তরে মোহাম্মদপুর-লালমাটিয়া, পশ্চিমে সাতমসজিদ রোড, দক্ষিণে বিডিআর গেট (ধানমন্ডি সড়ক ২) ও পূর্বে কলাবাগান আবাসিক এলাকা জুড়ে ধানমন্ডি লেক অবস্থিত। এর বর্তমান দৈর্ঘ্য ৩ কিমি, চওড়া ৩৫ থেকে ১০০ মিটার, সর্বোচ্চ গভীরতা ৪.৭৭ মিটার ও জলাশয়ের মোট আয়তন ৩৭.৩৭ হেক্টর। শুক্রাবাদে পান্থপথ এর নীচে অবস্থিত স্টর্ম ওয়াটার ড্রেনের পশ্চিম প্রান্তই লেকটির পানি নির্গমনের একমাত্র পথ। লেকের পার বরাবর চক্রাকার পাকা ফুটপাত দর্শনাথী প্রাত:ভ্রমনকারীদের আকৃষ্ট করে।
লেকের ভিতর তিনটি সুন্দর দ্বীপ রয়েছে। পারাপারের সুবিধার্তে লেকের উপর যানবাহনের জন্যে দুটি এবং হেঁটে চলার ৫টি ব্রীজ রয়েছে।
লেকের সার্বিক ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে একাধিক সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত কর্তৃপক্ষ নিয়োজিত রয়েছে। লেকটির মালিকানা পূর্ত মন্ত্রণালয়ের, কিন্তু এর মৎস্য উন্নয়নের দায়িত্ব মৎস্য অধিদপ্তরের। আবার উন্নয়ন কর্মকান্ডের দায়িত্ব পালন করে ঢাকা সিটি কর্পোরেশন। পরিবেশ পরিদপ্তর উপযুক্ত পরিবেশ ও লেকের জলজ সম্পদ রক্ষণাবেক্ষণের তদারকি করে। সম্প্রতি (১৯৯৮-২০০১) ধানমন্ডি লেক এলাকাটিকে বিনোদন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলার জন্য কতিপয় সংস্কার কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। [সিফাতুল কাদের চৌধুরী]