ধর, মনোরঞ্জন
ধর', 'মনোরঞ্জন (১৯০৪-২০০০) রাজনীতিক। ১৯০৪ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি ময়মনসিংহ জেলার চাটল গ্রামে তাঁর জন্ম। তাঁর পিতা জগৎচন্দ্র ধর। তিনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বি.এ এবং এল.এল.বি ডিগ্রি লাভ করেন। ১৯১৭ সালে তিনি অরবিন্দ ঘোষের যুগান্তর দলে যোগ দেন এবং ১৯৩৮ সাল পর্যন্ত এ দলের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। ১৯২১ সালে তিনি অসহযোগ আন্দোলনে যোগ দেন। ১৯২৮ সালে তিনি প্রাদেশিক ছাত্র সমিতির সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। ১৯৩০ সালে চট্টগ্রাম অস্ত্রাগার লুণ্ঠনে তিনি অংশগ্রহণ করেন।
মনোরঞ্জন ধর ১৯৪৬ সালে বঙ্গীয় প্রাদেশিক আইনসভার সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৪৭ সালে পূর্ব বাংলায় আগত মহাত্মা গান্ধী শান্তি মিশনের অন্যতম সদস্য ছিলেন মনোরঞ্জন ধর। ১৯৪৭ সালে পাকিস্তান জাতীয় কংগ্রেস গঠনে তাঁর অগ্রণী ভূমিকা ছিল। তিনি এ দলের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৪৭ সাল থেকে ১৯৫৮ সাল পর্যন্ত তিনি পূর্ব বাংলা প্রাদেশিক আইন পরিষদের সদস্য ছিলেন। বায়ান্নের ভাষা আন্দোলনে তিনি আইন পরিষদের ভেতরে ও বাইরে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন। এ কারণে তিনি কারাবরণও করেন। তিনি ১৯৫৪ সালে আইন পরিষদ কর্তৃক গঠিত সংখ্যালঘু কমিশনের সদস্য ছিলেন। তিনি ১৯৫৬-৫৮ সালে পূর্ব পাকিস্তান সরকারের অর্থ ও সংখ্যালঘু দফতরের মন্ত্রী ছিলেন।
মনোরঞ্জন ধর ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। তিনি মুজিবনগর সরকারের উদ্যোগে গঠিত মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীর নেতৃত্বাধীন সর্বদলীয় উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য ছিলেন। তিনি ১৯৭২ সালে জাপানে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত নিযুক্ত হন। ১৯৭৩ সালে প্রথম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়নে তিনি সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন এবং ১৯৭৩ সালের ১৬ মার্চ বাংলাদেশ সরকারের আইন, সংসদ ও বিচার বিষয়ক মন্ত্রীর দায়িত্ব লাভ করেন।
একজন সমাজসেবক হিসেবে মনোরঞ্জন ধর খ্যাতি অর্জন করেন। তিনি পল্লী উন্নয়ন ও জনকল্যাণকর বহু কর্মকান্ডে অংশগ্রহণ করেন। তিনি বাংলাদেশ শান্তি কমিটির সদস্য এবং চট্টগ্রাম, ময়মনসিংহ ও ঢাকার বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠনের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। তিনি ১৯৩৮-৪০ সালে সাপ্তাহিক গণ-অভিযান পত্রিকার সম্পাদক ছিলেন। এ ছাড়া তিনি কংগ্রেসের কার্যকলাপ সম্পর্কে কয়েকটি পুস্তক রচনা করেন। ২০০০ সালের ২২ জুন তাঁর মৃত্যু হয়। [মোঃ আলী আকবর]