দ্রুতবিচার আদালত আইন, ২০০২
দ্রুতবিচার আদালত আইন', '২০০২ দ্রুতবিচার আদালত সংক্রা্ন্ত আইন প্রাথমিকভাবে অধ্যাদেশ আকারে ২০০২ সালে প্রণীত হয়। উদ্দেশ্য ছিল কিছু অপরাধের দ্রুত বিচার সম্পন্ন করা। ঐ বছরের ১০ এপ্রিল এটি সংসদ কর্তৃক আইনে পরিণত হয় (২০০২ সালের ১১ নং আইন)।
এ আইনের ভূমিকায় আইন শৃঙ্খলা সংক্রান্ত কয়েকটি অপরাধের দ্রুত বিচারের প্রয়োজনীয়তার স্বীকৃতি দেওয়া হয়। মূল আইনে অনধিক ছয় বছর পর্যন্ত আইনটি বলবৎ রাখার বিধান ছিল। ২০০৮ সালে এক সংশোধনীর মাধ্যমে নির্ধারিত সময়সীমা আট বছর পর্যন্ত বৃদ্ধি পায়।
এ আইনটি ২০০২ সালে দেশে আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতির প্রতিবিম্ব হিসেবে প্রতিভাত হয়। যে কয়টি অপরাধ এ আইনে চিহ্নিত হয়েছে তার সব কয়টিই বল প্রয়োগ বা ভয় দেখিয়ে চাঁদা আদায়, যোগাযোগ ব্যবস্থা ব্যাহত করা, যানবাহনসহ সরকারি বা বেসরকারি সম্পত্তির ক্ষতিসাধন, পণ্য বা সেবা সংগ্রহ করার জন্য সরকারি দরপত্র আহবানে বাধা সৃষ্টি এবং সরকারি ও আধাসরকারি দপ্তরের কর্মকর্তাদের কর্তব্যপালনে বিঘ্ন সৃষ্টি করার সঙ্গে যুক্ত।
এ আইনটির অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো অন্যান্য আইনের উপর প্রাধান্য। অর্থাৎ অন্যান্য আইনে ভিন্নতর বিধান থাকা সত্বেও এ আইনের বিধানই বাধ্যতামূলক হবে। পাঁচ বছর পর্যন্ত সশ্রম কারাদন্ডের বিধান, চিহ্নিত অপরাধ সংঘটনে সহায়তাকারীর শাস্তির বিধান, মিথ্যা ও ভিত্তিহীন মামলাকারীর শাস্তির বিধান এবং অস্ত্রসহ অপরাধে ব্যবহূত দ্রব্যসামগ্রী জব্দ করার বিধান।
আরো কিছু বৈশিষ্ট্য হলো (১) দ্রুতবিচার আদালত গঠন, (২) আদালতের অধিক্ষেত্র, (৩) অপরাধ বিচারের অগ্রগণ্যতা, (৪) অনুপস্থিত আসামীর বিচার, (৫) সাতদিনের মধ্যে অপরাধ তদন্ত সম্পন্ন করার বাধ্যবাধকতা এবং আসামীকে আত্মপক্ষ সমর্থনের জন্য ত্রিশ কার্যদিবসের সময়সীমা, (৬) জামিন পাওয়ার পদ্ধতি এবং (৭) ছবিসহ ধারণকৃত কথাবার্তা সাক্ষ্য হিসাবে গণ্য করার বিষয়।
২০০২ সালের ১ ডিসেম্বর জাতীয় সংসদের এ সংক্রান্ত অপর একটি আইন (২০০২ সালের ২৮ নং আইন) বাংলাদেশ গেজেটে (অসাধারণ) প্রকাশিত হয়। এ আইনের মাধ্যমে দ্রুতবিচার আদালত গঠিত হয়। এ আইনের ভূমিকায় কয়েকটি অপরাধের দ্রুতবিচার সম্পন্ন করার বিষয়কে গুরুত্ব দেয়া হয়। আইনটি সরকারকে কয়েকটি বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা প্রদান করে। এর মধ্যে রয়েছে এক বা একাধিক আদালত গঠন, জনস্বার্থে অন্যান্য অসম্পন্ন বিচার দ্রুতবিচার আদালতে প্রেরণসহ শেষোক্ত আদালতের ভৌগোলিক অধিক্ষেত্র নির্ধারণ। অসম্পন্ন বিচারকার্য দ্রুতবিচার আদালতে প্রেরণের জন্য যে অপরাধসমূহকে চিহ্নিত করা হয়েছে তার মধ্যে রয়েছে: খুন, ধর্ষণ, বেআইনি অস্ত্র, বিস্ফোরক ও মাদকদ্রব্য সংরক্ষণ। এতে দেখা যায় যে, মূল আইনের নির্ধারিত অপরাধের সংখ্যা বৃদ্ধি করা হয়েছে।
আইনে মৃত্যুদন্ড, যাবজ্জীবন কারাদন্ড অথবা সাতবছরের অধিক কারাদন্ডের বিধান সংক্রা্ন্ত বিষয় ব্যতীত অন্যান্য ক্ষেত্রে সংক্ষিপ্ত বিচারের বিধান সন্নিবেশিত করা হয়। প্রত্যেক দ্রুতবিচার আদালতকে ত্রিশ কার্যদিবসের মধ্যে রায় ঘোষণা করার বাধ্যতামূলক বিধান রয়েছে। তবে এ সময়সীমাকে ত্রিশ কার্যদিবসসহ আরও পনের কার্যদিবস বর্ধিত করা যায়। এসব ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট আদালতকে কারণ লিপিবদ্ধ করে সুপ্রিম কোর্টসহ সরকারকে জ্ঞাত করতে হবে।
২০০২ সালের ১০ এপ্রিলের আইনের বলে ছবিসহ ধারণকৃত কথাবার্তাও সাক্ষ্য হিসাবে গণ্য করার বিষয়টি এ আইনেও রয়েছে। কিন্তু এ সংক্রা্ন্ত বিধান শর্তযুক্ত। যথা, কোনো দ্রুতবিচার আদালত একমাত্র উপর্যুক্ত সাক্ষ্যের উপর ভিত্তি করে শাস্তি দিতে পারবে না। এ ধরনের বিধিনিষেধ ন্যায়বিচারের নীতির সাথে সংগতিপূর্ণ। কারণ, এর ফলে সামগ্রিক সাক্ষ্যের উপর শাস্তি প্রদান নির্ভরশীল, শুধুমাত্র কারিগরি উন্নতির ফলে সৃষ্ট যন্ত্রপাতির মাধ্যমে গৃহীত উপাদানের উপর শাস্তি প্রদান নির্ভরশীল নয়। [এ.এম.এম শওকত আলী]
গ্রন্থপঞ্জি Offences relating to maintenance of law and order (Speedy Trial) Act 2002, Ministry of Law, Justice and Parliamentary Affairs; Act 28 of 2002, Ministry of Law, Justice and Parliamentary Affairs, Bangladesh Gazette (Extraordinary), 1 December 2002.