দাশগুপ্ত, রণেশ
দাশগুপ্ত', 'রণেশ (১৯১২-১৯৯৭) লেখক, সাংবাদিক, রাজনীতিক। ভারতের আসাম প্রদেশের ডিব্রুগড় শহরে ১৯১২ সালের ১৫ জানুয়ারি তিনি জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম অপূর্বরত্ন দাশগুপ্ত ও মাতার নাম ইন্দ্রপ্রভা দেবী। রণেশ দাশগুপ্তের পৈতৃকনিবাস বর্তমান মুন্সীগঞ্জ জেলার লৌহগঞ্জ উপজেলার গাউরদিয়া গ্রামে।
রণেশ দাশগুপ্তের শিক্ষাজীবন শুরু হয় পুরুলিয়ার রামানন্দ পন্ডিতের পাঠশালায়। বাঁকুড়া জেলা স্কুল থেকে তিনি ১৯২৯ সালে ম্যাট্রিক পাস করেন। বিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র রণেশ দাশগুপ্ত ভারতীয় স্বাধীনতা সংগ্রামে অংশগ্রহণের কারণে বাঁকুড়া কলেজ থেকে বহিষ্কৃত হন। পরে তিনি কলকাতার সিটি কলেজে ভর্তি হন। এখান থেকেই তিনি আইএসসি পরীক্ষায় পাস করেন। কলকাতা সিটি কলেজে পুলিশের কড়া নজরদারির কারণে লেখাপড়া ব্যাহত হওয়ায় ভর্তি হন বরিশাল ব্রজমোহন কলেজে। বরিশালে অধ্যয়নকালে কমিউনিষ্ট রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়ার জন্য তাঁর প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা আর এগোয়নি।
রণেশ দাশগুপ্ত সাংবাদিকতার মধ্য দিয়ে তাঁর কর্মজীবন শুরু করেন। তিনি সাপ্তাহিক সোনার বাংলা পত্রিকার সহকারী সম্পাদক নিযুক্ত হন। কলকাতা সিটি কলেজে পড়ার সময় তিনি অনুশীলন দলের ‘যুগবাণী সাহিত্য চক্রে’ যোগদান করেন। ১৯৩৮ সালে বিপ্লবী নেতা সতীশ পাকড়াশির অনুপ্রেরণায় তিনি সোমেন চন্দ, অচ্যুত গোস্বামী প্রমুখ নেতাদের নিয়ে গড়ে তোলেন প্রগতি লেখক সংঘ। সোমেন চন্দের হত্যার পর সংঘের পাক্ষিক মুখপত্র প্রতিরোধের প্রায় সব সম্পাদকীয় তিনি লেখেন, যদিও তিনি এর সম্পাদক ছিলেন না। পান্ডিত্যের জন্য তিনি সংঘের সদস্যদের শ্রদ্ধা লাভ করতে সক্ষম হয়েছিলেন।
১৯৫৮ সালে ঢাকা পৌরসভার নির্বাচনে রণেশ দাশগুপ্ত কমিশনার নির্বাচিত হন। রাজনৈতিক কারণে তিনি প্রায় নয় বছর কারাভোগ করেন। রণেশ দাশগুপ্ত দৈনিক সংবাদসহ দেশের বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় কাজ করেন। দক্ষ সাংবাদিক হিসেবে তিনি খ্যাতি অর্জন করেন। ১৯৭৫ সালের ১লা নভেম্বর একটি সভায় যোগ দিতে তিনি কলকাতায় যান। দেশে সামরিক শাসন ও নানা প্রতিকূলতার কারণে তাঁর আর দেশে ফেরা হয়নি।
সাংবাদিকতার পাশাপাশি তিনি নিয়মিত সাহিত্যচর্চা করেছেন। প্রকাশিত বইগুলোর মধ্যে আছে উপন্যাসের শিল্পরূপ, শিল্পীর স্বাধীনতার প্রশ্নে, ল্যাটিন আমেরিকার মুক্তিসংগ্রাম, সেদিন সকালে ঢাকায়, রহমানের মা ও অন্যান্য, মুক্তিধারা, সাম্যবাদী উত্থান, সাজজাদ জহির, কখনো চম্পা কখনো অতসী ইত্যাদি। তাছাড়া তিনি বেশ কিছু বই সম্পাদনা করেন।
১৯৯৭ সালের ৪ নভেম্বর কলকাতায় তাঁর মৃত্যু হয়। তাঁর লাশ ঢাকায় এনে পূর্ণ রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় পোস্তগোলা শ্মশানে দাহ করা হয়। ১৯৯৮ সালে তাঁকে মরণোত্তর একুশে পদক দেওয়া হয়। [মোহাম্মদ কবিরুল হাসান]