দমদম পীরস্থান ঢিবি
দমদম পীরস্থান ঢিবি যশোর জেলার মনিরামপুর উপজেলাস্থ ভোজগাতী ইউনিয়নের দোনার গ্রামে অবস্থিত। মনিরামপুর বাজার থেকে এ প্রত্নস্থলের দূরত্ব ৬ কিমি.। যশোর-সাতগড়ীরা সড়কের ছাতিয়ানতলা বাসস্ট্যান্ড থেকে ১০০মি. পশ্চিমে এ ঢিবির অবস্থান। প্রত্নস্থলটিতে ২০০৪-০৫ সালে সর্ব প্রথম খনন কাজ শুরু করা হয়। ধারাবাহিকভাবে পরপর চার বছর খননের ফলে একটি পূর্বমুখী মন্দিরের ধ্বংসাবশেষ আবিষ্কৃত হয়। গর্ভগৃহস্থ অসম আকৃতির ও আয়তনের ২৪টি কক্ষের সমন্বয়ে এই মন্দির গঠিত। মন্দিরে দুটি নির্মাণযুগের নিদর্শন লক্ষ্য করা যায়। প্রথম নির্মাণযুগে মন্দিরটি প্রায় বর্গাকার (২২মি. x ২১মি.) ছিল।
প্রথম যুগের মন্দিরকে মোটামুটি অবিকৃত রেখে দ্বিতীয় যুগে তা পূর্বদিকে আরও সম্প্রসারিত করা হয় এবং এ ক্ষেত্রে স্থাপনা আয়তাকার (৩৩.০৫ x ২১মি.) রূপ ধারণ করে। প্রথম যুগের প্রদক্ষিণ পথ পরিত্যক্ত হয় এবং নতুন করে প্রদক্ষিণ পথ নির্মাণ করা হয় এবং মন্দিরের বহির্গাত্র পদ্মফুলের সাথে দেব-দেবী সম্বলিত পোড়ামাটির ফলক দিয়ে সজ্জিত করা হয়। মন্দিরের পূর্ব দিকে আরও একটি ক্ষুদ্রাকার মন্দির, সূতপ, খোলামঞ্চ ইত্যাদি নির্মাণ করা হয়। এ থেকে মনে করা হয় যে আলোচ্য সময়ে মন্দিরের কর্মকান্ডের বিস্তৃতি ঘটেছিল।
এ প্রত্নস্থলে আবিষ্কৃত অন্যান্য অস্থাবর প্রত্নবস্ত্তসহ এন্টিমনির কাজল শলাকা (Antimony Rod) ও রুলেটেড তার (Rouletted ware) আবিষ্কার হওয়ায় প্রথম যুগের মন্দির নির্মাণ কালকে খ্রিস্টীয় দুই শতক - তিন শতকে নির্ধারণ করা যায়। সে হিসাবে বাংলাদেশে এ যাবৎ প্রত্নতাত্ত্বিক খননে উন্মোচিত মন্দিরসমূহের মধ্যে এটিকে অন্যতম প্রাচীন মন্দির বলে মনে করা যায়।
মন্দির ধ্বংসপ্রাপ্ত হলে একসময় এ এলাকার গুরুত্ব কমে যায় এবং স্থানটি পরিত্যাক্ত হয়। সময়ের ব্যবধানে এটি ঢিবিতে পরিণত হলে স্থানীয় জনসাধারণের কাছে এর ঐতিহাসিক গুরুত্ব লোপ পায়। ক্রমান্বয়ে এটি সমাধি ক্ষেত্রে পরিণত হয়। দমদম পীরস্থান ঢিবির উপর কাঁচা কবর এ মতেরই সমর্থন করে। পরবর্তীকালে এই প্রাচীন ঢিবির উপর জনৈক পীর আস্তানা গড়ে তোলেন। এ জন্য এই প্রত্নস্থলটি সমসাময়িক জনগনের কাছে দমদম পীরস্থান ঢিবি নামে পরিচিতি লাভ করে। [মোঃ শফিকুল আলম]