দত্ত, সুরেশ
দত্ত', 'সুরেশ (১৯০৬-১৯৭১) নাট্যকর্মী। ঢাকায় মাতুলালয়ে তাঁর জন্ম। তাঁর পূর্বপুরুষরা রাজপুতনা থেকে যশোর হয়ে বিক্রমপুরএ বসতি স্থাপন করেন। তিনি ঢাকার রামকৃষ্ণ মিশনএ অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশুনা করে তৈজসপত্রের ব্যবসায়ী হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন। ত্রিশের দশকে ঢাকার মঞ্চে মহিলা চরিত্রে অভিনয়ের মাধ্যমে তাঁর নাট্যচর্চা শুরু হয়। সে সময়ে তাঁর অভিনীত উল্লেখযোগ্য দুটি নাটক হলো প্রফুল্ল ও পথের শেষে।
নারীর ভূমিকায় অভিনয় করতে গিয়ে সুরেশ দত্ত অঙ্গসজ্জার গুরুত্ব অনুধাবন করেন এবং কলকাতা ও লক্ষ্ণৌতে এ বিষয়ে প্রশিক্ষণ নিয়ে অঙ্গসজ্জাকে পেশা হিসেবে গ্রহণ করেন। ১৯৪০, ১৯৫০ এবং ১৯৬০-র মধ্যভাগ পর্যন্ত ঢাকার বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান, যেমন মাহবুব আলী ইনস্টিটিউট, ইঞ্জিনিয়ারিং ইনস্টিটিউট, ন্যাশনাল মেডিক্যাল হাসপাতাল-সংলগ্ন মঞ্চ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন হল এবং অন্যান্য সমিতি-সংগঠনের নাটকে অঙ্গসজ্জার দায়িত্ব পালন করেন। মাঝে মাঝে তিনি অভিনয়ও করতেন। ১৯৪৯ সালে উদয়নালা নাটকে তিনি অভিনয় করেন।
সুরেশ দত্ত ছিলেন মনে-প্রাণে একজন প্রগতিশীল মানুষ। তিনি তৎকালীন ধর্মীয় ও সামাজিক প্রতিবন্ধকতাকে অগ্রাহ্য করে স্বীয় কন্যা গীতা দত্তকে আবদুল জববার খান রচিত ও পরিচালিত ঈশা খান (১৯৫১) নাটকে অভিনয়ে নিয়ে আসেন। তাঁর অনুপ্রেরণা ও সহযোগিতায় গীতা দত্ত অতি অল্পসময়ে অভিনয়ে খ্যাতি অর্জন করেন। তাঁর জ্যেষ্ঠপুত্র বঙ্গজিৎ দত্তও একজন কৃতী অঙ্গসজ্জাকার ছিলেন। ১৯৭১ খ্রিস্টাব্দে মুক্তিযুদ্ধের সময় সুরেশ দত্ত কলকাতা যান এবং সেখানেই মৃত্যুবরণ করেন। [অনুপম হায়াৎ]