তাল

NasirkhanBot (আলোচনা | অবদান) কর্তৃক ২১:২৯, ৪ মে ২০১৪ তারিখে সংশোধিত সংস্করণ (Added Ennglish article link)
(পরিবর্তন) ← পূর্বের সংস্করণ | সর্বশেষ সংস্করণ (পরিবর্তন) | পরবর্তী সংস্করণ → (পরিবর্তন)

তাল সঙ্গীত, বাদ্য ও নৃত্যের গতি বা লয়ের স্থিতিকাল। এ তিন ক্ষেত্রেই তালের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। মাত্রার সমষ্টি দিয়ে তাল রচনা করা হয়। তাল দুপ্রকার–সমপদী ও বিষমপদী। তালের মাত্রাবিভাগ সমান হলে সমপদী, যেমন একতাল, ত্রিতাল, চৌতাল, সুরফাঁক ইত্যাদি; আর অসমান হলে বিষমপদী, যেমন তেওড়া, ধামার, ঝাঁপতাল, ঝুমরা ইত্যাদি। একটি তালকে কয়েকটি ভাগে ভাগ করা হয়, যার নাম তালবিভাগ। ত্রিতালে চারটি বিভাগ এবং দাদরা ও কাহারবা তালে দুটি করে বিভাগ রয়েছে। যে মাত্রা থেকে তাল শুরু হয় তাকে ওই তালের ‘সম’ বলে। তালের প্রথম বিভাগের প্রথম মাত্রায় তালি দিয়ে সম দেখানো হয়। অন্য বিভাগগুলির মধ্যে কয়েকটিতে তালি দেওয়া হয় এবং সেগুলিকে বলা হয় ‘তালি’। তালের যে বিভাগে তালি দেওয়া হয় না তা ‘খালি’ বা ‘ফাঁক’ তাল নামে পরিচিত।

তবলা, পাখোয়াজ বা খোল বাজানোর জন্য নির্দিষ্ট বোল থাকে। এক এক রকম তালের জন্য এক এক রকম বোলের সমষ্টি তৈরি হয়েছে। তালের জন্য নির্দিষ্ট সেই বোলের সমষ্টিকে যখন মাত্রা, বিভাগ, তালি, খালি ইত্যাদিতে নিবদ্ধ করা হয় তখন তাকে বলা হয় ‘ঠেকা’। যেকোনো তাল-বাদ্যের স্বরের ছোট্সমূহকে বলা হয় ‘তেহাই’। তেহাই তিনবার বাজিয়ে সমে এনে শেষ করা হয়।

সঙ্গীতে তাল অপরিহার্য, তাই তালকে বলা হয় সঙ্গীতের প্রাণ। তালের কাজ সঙ্গীতে গতির সমতা রক্ষা করা। এ গতিকে বলা হয় লয়। সঙ্গীত ও লয়ের সম্পর্ক খুব নিবিড়। লয়কে তিনভাগে ভাগ করা হয়েছে বিলম্বিত, মধ্য ও দ্রুত।

সঙ্গীতে প্রচলিত উল্লেখযোগ্য কয়েকটি তাল হলো দাদরা, কাহারবা, আড়াঠেকা, ঝাঁপতাল, সুরতাল বা সুরফাঁকতাল, চৌতাল, একতাল, আড়াখেমটা, ধামার, আড়াচৌতাল, ত্রিতাল ইত্যাদি। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর  তাঁর গানের সঙ্গে বাজাবার উপযোগী কয়েকটি তাল রচনা করেন, যেমন ঝম্পক, ষষ্ঠী, রূপকড়া, নবতাল, একাদশী ও নবপঞ্চ তাল। নজরুল ইসলামও কয়েকটি তাল রচনা করেছেন। সেগুলি হলো নবনন্দন, প্রিয়াছন্দ, মণিমালা ছন্দ, স্বাগতা ছন্দ, মন্দাকিনী ছন্দ ও মঞ্জুভাষিণী তাল।

ওস্তাদ আলাউদ্দিন খাঁ তাঁর সরোদ বাদনকে বৈচিত্র্যময় করার জন্য কিছু তাল রচনা করেন। তাঁর রচিত তালগুলি হলো মোহান্ত, রাজবেশ, উদয়সিন, বিজয়, বিজয়ানন্দ, উপরাল, বিক্রমত, লঘুকির, রঙ্গ, রঙ্গবরণ, রঙ্গরায়ত এবং অভিনন্দন।  [মোবারক হোসেন খান]