তরলীকৃত পেট্রোলিয়াম গ্যাস
তরলীকৃত পেট্রোলিয়াম গ্যাস-এল.পি.জি (Liquefied Petroleum Gas/LPG) প্রধানত প্রপেন এবং বুটেন গ্যাসের একটি মিশ্রণ। এ গ্যাসগুলি ভূগর্ভস্থ উৎসসমূহ থেকে আর্দ্র/ভেজা প্রাকৃতিক গ্যাস অথবা অপরিশোধিত তেল অথবা শোধনাগারের উপজাতের বিভিন্ন উপাদান থেকে সৃষ্ট। পেট্রোলিয়াম থেকে এল.পি.জি-এর বাণিজ্যিক উৎপাদন হয় এবং চাপ প্রয়োগের মাধ্যমে তরল অবস্থায় মজুত করা হয়। এল.পি.জি-এর স্ফুটনাঙ্কের তাপমাত্রা পরিসীমা -৪৪º সেলসিয়াস থেকে ০ºসে। সেজন্য তরলীকরণে যথেষ্ট পরিমাণ চাপ প্রয়োগের প্রয়োজন হয় এবং গ্যাস সংরক্ষণের জন্য পাত্রটিও ভারী ইস্পাত দ্বারা তৈরি হতে হয়। এল.পি.জি যখন জ্বালানি হিসেবে প্রস্ত্তত করা হয় তখন তা মূলত প্রপেনসমৃদ্ধ; এর বহুল ও সাধারণ ব্যবহার হয় যানবাহনের জ্বালানি হিসেবে, রান্না এবং অন্যান্য প্রয়োজনে তাপ সৃষ্টিতে এবং মাঝে মাঝে গ্রাম এলাকায় আলোর ব্যবস্থাকরনে। এল.পি.জি ইঞ্জিনের অভ্যন্তরীণ দহনের জন্য উপযোগি একটি জ্বালানি। কারণ এল.পি.জি দহনের ফলে সৃষ্ট বায়ু দূষণের মাত্রা এবং কঠিন বর্জ্যের পরিমাণ অত্যন্ত কম হয় এবং এর রয়েছে উচ্চ অকটেন রেটিং। বাংলাদেশে এল.পি.জি-এর বিরাট চাহিদা রয়েছে, বিশেষ করে দেশের উত্তর এবং পশ্চিমাঞ্চলে, যেখানে প্রাকৃতিক গ্যাসের সরবরাহ নেই। ১৯৯০-৯১ সালে এল.পি.জি-এর উৎপাদন ছিল ৮০২.৫০ কোটি টন এবং ছয় বছরের মধ্যে ১৯৯৬-৯৭ সালে বাৎসরিক উৎপাদন দ্বিগুণ পরিমাণে বৃদ্ধি পেয়ে ১,৬০৫.৪০ কোটি টনে দাঁড়ায় যার অর্থমূল্য ১৫.১০ কোটি টাকা। এল.পি.জি-এর সর্বোচ্চ চাহিদা রয়েছে পরিবহণ ক্ষেত্রে (১১.৬ লক্ষ টন), এরপরে রয়েছে গৃহস্থালী জ্বালানি হিসেবে (প্রায় ৪.৫ লক্ষ টন) এবং কৃষি ক্ষেত্রে (৪.৩ লক্ষ টন)। সামান্য পরিমাণ এল.পি.জি স্থানীয় ভিত্তিতে বিদ্যুৎ উৎপাদনেও ব্যবহূত হয়। ২০১১ সালে পেট্রোবাংলার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী নবনির্মিত বাসাবাড়িতে গ্যাসের পাইপলাইন সংযোগ দেয়া বন্ধ ঘোষণা করা হয় এবং রান্নাবান্নার কাজে বিকল্প হিসেবে সিলিন্ডারজাত এল.পি.জি.র ব্যবহারকে উৎসাহিত করা হয়। এতে করে মোট উৎপাদিত প্রাকৃতিক গ্যাসের প্রায় পুরোটাই বিদ্যুৎ উৎপাদন প্ল্যান্টসমূহ এবং অন্যান্য শিল্পকারখানায় সরবরাহ করা সম্ভব হবে। [মোহাম্মদ আবুল হাসেম]