ঢাকা দাঙ্গা, ১৯৪১
ঢাকা দাঙ্গা', '১৯৪১ হিন্দু-মুসলিমদের সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা যা ১৯৪১ সালের ১৪ মার্চ এক সাধারণ ঘটনাকে কেন্দ্র করে সংঘটিত হয়েছিল। শঙ্খ কারিগররা শাঁখারি বাজারে হোলি উৎসব পালনকালে করছিল। দৈবাৎ বোরখা পরিহিতা এক মহিলার গায়ে রঙ মেশানো পানি পড়ে এবং এ কারণে সেখানে সামান্য বাকবিতন্ডা ও হাতাহাতি হয়। কিন্তু পুলিশ তা নিয়ন্ত্রণে আনে। ১৮ মার্চ কবিরাজ লেনে একজন মুসলিম ছুরিকাঘাতে এবং মনোহর খান বাজারে হিন্দু উচ্ছৃঙ্খল জনতা আক্রমণ চালালে এক মুসলিম বালক নিহত হয়। ওই দিন সন্ধ্যায় গেন্ডারিয়ায় একজন মুসলমান ফেরিওয়ালাকে মৃত অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখা যায়। এর প্রতিশোধ নিতে মুসলমানরা চকবাজার ও মৌলভী বাজারে অবস্থিত হিন্দু দোকানপাট আক্রমণ করে ও আগুন লাগিয়ে দেয়। ১৯ মার্চ হিন্দু ও মুসলমানরা ভিক্টোরিয়া পার্ক এলাকায় পরস্পরের সঙ্গে সংঘর্ষে লিপ্ত হয়; এ সময় মুসলিম প্রভিন্সিয়াল লাইব্রেরি ও হিন্দু অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসে আগুন জ্বালিয়ে দেওয়া হয়। ২১ মার্চ লায়ন সিনেমা হলের নিকট একজন মহকুমা হাকিমকে ছুরিকাঘাত করা হয়। ঠাটারি বাজার ও র্যাংকিন স্ট্রিটে অবস্থিত মসজিদসমূহ এবং দক্ষিণ মৈসুন্ডিতে একটি মন্দির তছনছ করা হয়।
শীঘ্রই দাঙ্গা পার্শ্ববর্তী এলাকাসমূহে ছড়িয়ে পড়ে। নারায়ণগঞ্জ শহর এলাকায় প্রচন্ড সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা সৃষ্টি হতে থাকে। কেরানিগঞ্জ ও মুন্সিগঞ্জে নির্দিষ্ট কয়েকটি ক্ষণস্থায়ী সহিংস ঘটনা ঘটে, কিন্তু রায়পুরা, শিবপুর ও নরসিংদীর ঘটনাবলির সঙ্গে তুলনা করলে সেগুলি অপেক্ষাকৃত কম গুরুত্বপূর্ণ ছিল। চতুর্দিকে খবর ও গুজব ছড়িয়ে পড়ে যে ঢাকায় হিন্দুদের দ্বারা মুসলমানগণ নিগৃহীত হচ্ছে এবং তাদের প্রার্থনার স্থানসমূহ অপবিত্র করা হচ্ছে।
১৯৪১-এর ৩ এপ্রিল রহিমাবাদ পোতাশ্রয়ে বালির চড়ে আটকে পড়া জাহাজের ডেকের নিচে একজন পুলিশ অফিসারকে নির্দয়ভাবে পেটানো হয় এবং তার রিভলভার কেড়ে নেওয়া হয়। পুলিশের রিপোর্ট অনুযায়ী ৮১টি গ্রামের ২,৫১৯টি পরিবার আক্রান্ত ও লুণ্ঠিত হয় যার ফলে এ এলাকাসমূহের ১৫,৭২৪ ব্যক্তি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ঢাকায় নিপীড়নের শিকার প্রধানত মুসলিমগণ এবং অন্যদিকে হিন্দুরা নির্যাতিত হয়েছে গ্রাম অঞ্চলে। [মঞ্জুর আহসান]