জামান, সেলিনা বাহার
জামান, সেলিনা বাহার (১৯৪০-২০০৪) সেলিনা বাহার চৌধুরী এবং বিবাহের পর সেলিনা বাহার জামান নামে সমধিক পরিচিত পারভীন সুলতানা চৌধুরী ১৯৪০ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি কলকাতায় জন্মগ্রহণ করেন। পিতা হবীবুল্লাহ বাহার ও মাতা আনোয়ারা বাহার চৌধুরী অবিভক্ত বাংলার প্রগতিশীল অসাম্প্রদায়িক ব্যক্তিত্ব হিসেবে পরিচিত ছিলেন। হবীবুল্লাহ বাহার ছিলেন কবি নজরুল ইসলামের ঘনিষ্ঠ বন্ধু, চট্টগ্রাম অস্ত্রাগার দখলের অন্যতম নায়ক অনন্ত সিংহেরও বন্ধু। তিনি কলকাতা মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাব ফুটবল দলের অধিনায়ক এবং বঙ্গীয় মুসলিম সাহিত্য সমাজের সংগঠক ছিলেন। সেলিনা বাহারের মাতা ছিলেন একজন সুলেখিকা এবং তার ফুফু শামসুন্নাহার মাহমুদের প্রেরণা সেলিনা বাহারের বর্ণাঢ্য জীবনকে প্রভাবিত করেছিল।
কলকাতায় স্কুলজীবন শুরু হলেও ভারত বিভাগের পর তার শিক্ষাজীবন শুরু হয় ঢাকার কামরুন্নেসা স্কুলে। ১৯৫৪ সালে তিনি কৃতিত্বের সাথে ছাত্রীদের মধ্যে দ্বিতীয় স্থান অধিকার করে ম্যাট্রিক পাশ করেন। ১৯৬০ সালে গণিতশাস্ত্রে প্রথম স্থান অধিকার করে এম.এস.সি পাশ করেন। ১৯৬১ সালে ঢাকায় ইডেন কলেজে গণিতের প্রভাষক হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন। ১৯৬৪ সালে উচ্চশিক্ষার জন্য সরকারি বৃত্তি পেয়ে ইংল্যান্ডের নিউক্যাসেল বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন। তিনি ১৯৬৫ সালে প্রকৌশলী এম বদিউজ্জামানের সাথে পরিণয় সূত্রে আবদ্ধ হন। সেলিনা বাহার জামান ১৯৯৭ সালে ঢাকার জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের গণিত বিভাগের প্রধান হিসেবে অবসরগ্রহণ করেন।
পঞ্চাশের দশক থেকেই ঢাকার বেতারের শিশুশিল্পী হিসেবে সেলিনা বাহারের হাতেখড়ি হয় এবং নৃত্য ও আবৃতিতে দক্ষতার স্বাক্ষর রাখেন। পরবর্তী সময়ে সাংস্কৃতিকজীবনে গীতিনাট্যে তাঁর আগ্রহ চলমান ছিল। বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে ১৯৫৭ সালে কার্জন হল স্টেজে ‘চন্ডালিকা’ গীতিনাট্যে তার অনবদ্য অভিনয় ছিল একসাড়া জাগানো ঘটনা। তাঁর প্রথমজীবনের গ্রন্থ তালিকায় রয়েছে শিশুতোষ গ্রন্থ পিকুর ছাগল, (১৯৭৮) বুলির মুরগি, (১৯৭৮)। ১৯৮৬ সালে তার গণিত বিষয়ক গ্রন্থ সংখ্যা বাংলা একাডেমী কর্তৃক প্রকাশিত হয়। তাঁর সম্পাদনায় বাংলা একাডেমী থেকে প্রকাশিত হয় নজরুল পান্ডুলিপি এবং নজরুল ইনস্টিটিউট থেকে নজরুলের ধূমকেতু। এ ছাড়াও তাঁর প্রদত্ত স্মারক ও দলিলপত্রে সমৃদ্ধ হয়েছে বাংলা একাডেমী, মুক্তিযুদ্ধ যাদুঘর, বাঙ্গালী-সমগ্র ইত্যাদি প্রতিষ্ঠান। নববইয়ের দশক থেকে তিনি বিভিন্ন স্মারকগ্রন্থ প্রকাশের কাজে নিয়োজিত ছিলেন। ১৯৯৫ সালে হবীবুল্লাহ বাহার স্মারকগ্রন্থ পুনর্মুদ্রণ দিয়ে তাঁর এ পর্যায়ের কর্মযজ্ঞ শুরু হয়। পরবর্তী সময়ে প্রকাশিত হয় জহুর হোসেন চৌধুরী স্মারকগ্রন্থ (১৯৯৬), আনোয়ারা বাহার চৌধুরী স্মারকগ্রন্থ (১৯৯৭), শামসুদ্দীন আবুল কালাম স্মারকগ্রন্থ (১৯৯৯), শামসুন নাহার মাহমুদ স্মারকগ্রন্থ (২০০২), বেগম রোকেয়া স্মারকগ্রন্থ (২০০২), শওকত ওসমান স্মারকগ্রন্থ (২০০৩)। সেলিনা বাহারের সর্বশেষ অসমাপ্ত রচনা পথে চলে যেতে যেতে।
২০০৪ সালের ৪ ডিসেমতর তাঁর মৃত্যু হয়। [শিরীন আখতার]